মিউজিক ভিডিও তৈরির নামে রমরমা দেহব্যবসা!

  14-07-2017 09:14AM

পিএনএস ডেস্ক: শব্দের পরে শব্দ জুড়ে দিয়ে মিষ্টি কথা, সঙ্গে হৃদয় ভুলানো সূর আর তোলা হয় না। অমিলের খেলায়, বে-সূরকে টিকিয়ে শ্রতাদের ঠাকাতে মরিয়া কেউ কেউ। বাণিজ্যিকরণের তালে খেই হারিয়ে ফেলেছে আমাদের শ্রতিমধুর সেই গান। তাই কেউ গান শুনে না, দেখে।

গান হিট হয়েছে কি হয়নি নির্ভর করছে ইউটিউবের ভিউয়ারের উপর। ধরে নেওয়াই যায় অচিরে গান ‍অডিও হয়ে মার্কেটে আসবে না, থাকবে ইউটিউবের চ্যানেলে এবং তাদের জন্ম হবে ভিডিও আকারে। শিল্পের শ ও থাকে না সেখানে। কথার চেয়ে ক্যামেরার ফ্রেমিং চোখে লাগে, সূরের চেয়ে মডেলদের অর্ধনগ্ন শরীর সেখানে মুখ্য বিষয়।

একটা সময়ে উৎসব-পার্বণে অ্যালবাম প্রচারের ধুম ছিল। এখন ভিডিও প্রকাশের ধুম লেগেছে। মিউজিক ভিডিওহীন শিল্পীকে কে চেনে?

নবীনদের পাশাপাশি প্রবীণ শিল্পীরাও এই হাওয়ায় গা লাগিয়েছে। গান প্রকাশের একটা ধারা তৈরি হয়েছে। গানের জগতে এখন ভিডিওর রাজত্ব। সেই ভিডিও কেন দর্শক দেখবে ? তার জন্য চাই চাকচিক্য কিছু। এই সব মিউজিক ভিডিওতে নতুন মডেলদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরাতনরাও যে আসছে না তা কিন্তু নয়। পারিশ্রমিকই যে ব্যাপার। অভিনয় শিল্পী হয়ে যাচ্ছে মডেল। এক উত্তর ‘ সবই তো পারফর্মিং আর্ট’।

এই আর্ট আর আর্ট থাকে না। মুখরোচক করার তাগিদে নানা উপাদেয় ব্যবহার হচ্ছে। অশ্লীল শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে দর্শকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মিউজিক ভিডিও হচ্ছে শিল্প ক্ষেত্রে অনৈতিক কর্মের নতুন আস্থানা কিংবা কারখানা। কেন এই বিশেষণ? কারন, নতুন কোন একটি মেয়ে যখন মিডিয়ায় আসতে চায়। একজন নতুনের জন্য যে কয়েকটি পথ উম্মূক্ত থাকে, তার মধ্যে বর্তমানে মিউজিক ভিডিও অন্যতম। সেখানেই নতুনরা খেই হারিয়ে বসে।

সব চেয়ে ভয়াবহ অভিযোগ হচ্ছে সহজলভ্য এ মিউজিক ভিডিও তৈরির নামে দেহব্যবসা চলছে। উঠতি বয়সের মডেলরা বাড়তি রোজগারের আশায় এ পথে আসছে। আর এসব দালালি করে রাতারাতি বিত্তশালী বনে যাচ্ছে অখ্যাত মিউজিক ভিডিওর নির্মাতারা। কথিত নির্মাতার ভিড়ে আজকাল খুব সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মিডিয়াপাড়া। ফেসবুকে খুললেই দেখা যাচ্ছে বহু মিডিয়াকর্মী। চিত্রনাট্যকার, নায়ক, নায়িকা, মডেল, উপস্থাপক, গায়ক, গায়িকা থেকে শুরু করে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও টেলিফিল্ম নির্মাতা কোনটারই অভাব নেই এখন। ভুঁইফোড় হয়ে উঠছে মিউজিক ভিডিও বাণিজ্য। মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করেই তৈরি করা হয় একটি গানের মিউজিক ভিডিও। বিনিময়ে বিত্তশালী তরুণদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মজার ব্যাপার হলো অনেক ভিডিও নির্মাণের জন্য ১০ লাখ টাকার উপরও ব্যয় হচ্ছে। এর আলাদা প্রযোজক আছে। আর এ প্রযোজকই ঠিক করে দেয়। কে হবে গানের মডেল। উদ্দেশ্য অজানা নয়।

সুর তাল লয়ের জায়গায় লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন। যেসব শিল্পী মিউজিক ভিডিও নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তাদের জনপ্রিয়তা কয়দিন? দু’চারটে মিউজিক ভিডিওতে কাজ করে অনেকেই নিজেদের স্টার ভাবছে।

এ প্রসঙ্গে কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন , আসলে আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে অস্থিরতা চলছে। অন্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজের মৌলিকত্ব থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আমাদের সংশ্লিষ্টরা। ভাল কিছু অনুসরণ করা ভাল কিন্তু অনুকরণ করা ঠিক নয়। মিউজিক ভিডিওর কারণে আসলে গানের আবেদন বাড়ার কথা কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টো হচ্ছে। নীতি নৈতিকতা বলে একটা জিনিস আছে সে বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে। কারণ সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষদের প্রতি সাধারণ মানুষের আলাদা একটা বিশ্বাস ভালবাসা কাজ করে। সুতরাং এখান থেকে খারাপ কিছু আসলে সমাজে তার প্রভাব পড়বেই। গান দেখার বিষয় না। গান শোনার বিষয়। যা আমাদের মনকে ছুয়ে যাবে।

জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন ‘এই অশ্লীলতার জন্য চ্যানেলগুলো ও বর্তমানে বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করবো। তারা যদি ভাল ভাল ভিডিও প্রচার করে। অনৈতিক কিছুকে সাপোর্ট না করে তাহলে অনৈতিক মিউজিক ভিডিও মেকাররা এগুলো বানানোর উৎসাহ পাবে না। এছাড়া এ বিষয়ে একটি নীতিমালা হওয়া দরকার যাতে যেনতেন মিউজিক ভিডিওর নামে কেউ অশ্লীলতাকে সমাজে ছড়িয়ে দিতে না পারে।’

ব্যান্ড তারকা আইয়ূব বাচ্চু বলেন, মূল সমস্যা আমরা আমাদের মূল সংস্কৃতি থেকে সরে যাচ্ছি। আমাদের যাপিত জীবনের সংস্কৃতি সেটার সঙ্গে মিল রেখেই বা সেটার প্রয়োজনীয়তা বা গ্রহণযোগ্যতার কথা মাথায় রেখেই আমাদের কিছু সৃষ্টি করতে হবে। নইলে কেউ সেটা গ্রহণ করবেন না। মিউজিক ভিডিও যদি কথা এবং বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল না রেখে তৈরি করা হয় তাহলে সেই গানের মৌলিকত্ব বলে কিছু থাকে না। অনৈতিক কিছু ভিডিও ধারণ করে ছেড়ে দিয়ে তারা অন্যায় করছেন। কারণ তারা আমাদের সঙ্গীত অঙ্গনের জন্য ক্ষতি করছেন। অশ্লীল মিউজিক ভিডিও বা গানের বিষয়ের সঙ্গে সাদৃশ্য নেই এমন যে কোন বিষয়ই আমাদের জন্য ক্ষতিকর।’

রুচি সম্মত গানের ভিডিও নিয়ে আক্রোশ নেই কারোরই। সবার অভিযোগ ‘ গানকে প্রাধান্য দিতে হবে। যাতা গান করে ভিডিওর মাধ্যমে একটা গান হিট হয়ে গেল। সেটা শিল্পের জন্য ক্ষতিকর।


সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডিনিউজ


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন