পোস্টারে অসহায় অভিনেত্রী

  27-07-2017 05:59PM

পিএনএস ডেস্ক: প্রচারের জন্য এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক এবং ইউটিউব। কিন্তু তার পরও রাস্তার প্রতিটি মোড়ে দেখা যায় হরেক রকম পোস্টার। বিশেষ করে চলচ্চিত্রের পোস্টারে ছেয়ে আছে রাস্তার পাশের দেয়ালগুলো। কারণ চলচ্চিত্র প্রচারের প্রধান আকর্ষণের একটি হচ্ছে পোস্টার।

কিন্তু আমাদের দেশের ছবির পোস্টারগুলোর বেশির ভাগই অশ্লীল! গল্পের মতো পোস্টারও হচ্ছে নকল। এসব নিয়ে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ও দর্শকের নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের মতে, বর্তমানে বেশির ভাগ ছবির পোস্টারই কোনো না কোনো বিদেশি ছবির নকল। যদিও এটাকে নকল বলা যায় না, বিদেশি শিল্পীদের শরীরে আমাদের শিল্পীদের গলা-মুখ জুড়ে দেওয়া হয়। সেটা অবশ্য বেশির ভাগই নায়িকাদের ক্ষেত্রে করা হয়। এটা অপরাধ। সাধারণ মানুষের মতে, আগে পোস্টার দেখে তারা সিনেমা হলে যেত। আর এখন পোস্টারের সামনে দাঁড়ালে আশপাশের মানুষ ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকায়। বেশির ভাগ পোস্টারের মান খারাপ এবং অশ্লীল।

পোস্টার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণি। নিজের ফেসবুক পেইজে তিনি লেখেন, স্যরি টু সে, প্রায় বেশিরভাগ সিনেমা মুক্তির সময় সিনেমাটার পোস্টার ডিরেক্টরের ফেসবুক ওয়ালে দেখে ডিরেক্টরকে আমার কল করতে হয়। যেখানে আমার শুধু ফেসকাটটাই ঠিক থাকে। আর বডি পার্টস নিজেই চিনতে পারি না। তাদের ইচ্ছা মতো অঙ্গ সোজা করে নেন তারা। পোস্টারে ডিজাইনারের নাম থাকে না। হি হি হি, কী করে থাকবে ওই ডিজাইন তো একা করে না। ১০০ জন মিলে করলে তো আর ১০০ জনের নাম পোস্টারে ধরবে না। ওকে, এখন থেকে তা হলে ছবি শুরুর আগে পোস্টার শুট হবে। যেটা বাংলাদেশ ছাড়া প্রায় সব ফিল্মে হয়। বাই দ্য ওয়ে, আমি কোনো ডিরেক্টরকে অসম্মান করে বা কষ্ট দিয়ে কিচ্ছু বলিনি। আমি আমার অধিকার থেকে বলেছি, কারণ ছবিটা আমারও ছবি।

সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত হয়েছিল নির্মাতা ফিরোজ খান প্রিন্স পরিচালিত ‘মাস্তানি’ ছবির পোস্টার। পোস্টারে ছবির নায়িকা মৌসুমি হামিদের মাথা বলিউড অভিনেত্রী সানি লিওনের শরীরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে মৌসুমি ােভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছবির পোস্টারটি আমিও দেখেছি। এটা একেবারেই হাস্যকর এবং অপেশাদারিত্বসুলভ আচরণ। যেভাবে নকলটি করা হয়েছে সেটি অন্যায়। কিন্তু এর দায় তো আমার নয়। একজন নির্মাতা আছেন যাকে আমি শ্রদ্ধা করে বাবা বলে ডাকি। তিনি আমাকে বলেছিলেন, মারুফ আছে ছবিতে, হয়তো কাজটি ভালো হবে, করো। সে জন্য আমি এই ছবিতে কাজ করতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে গিয়ে আমি নিজেই মসিবতে পড়েছি। এভাবে অপদস্থ হলে নতুনরা তো কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।’

নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু বলেন, ‘ছবির পোস্টারে নান্দনিকতা না থাকলে দর্শক আকৃষ্ট হয় না। কিছুদিন আগেও পোস্টারের মান নিয়ে ছিল অনেক সংশয়। তবে ২-৩ বছর হলো পোস্টারের মান উন্নত হয়েছে। বাংলা ছবির যে একটা নিজস্বতা আছে, পোস্টারে তাকালে তা দর্শক খুঁজে পাবে। তবে সব ছবির েেত্র তা থাকছে না। আমি বলব, সব ছবির জন্যই এ ভাবনা থাকা উচিত।

নির্মাতা মালেক আফসারী বলেন, আগে হাতে আঁকা পোস্টারে ছিল অনেক নান্দনিকতা। মানুষ অনেকণ ধরে পোস্টারের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। আমার বেশির ভাগ ছবির পোস্টার ডিজাইন করতেন দিনেশ বাবু। তার প্রতিষ্ঠানের নাম বিকেডি। হাতে এঁকে কাজ করার কারণে এটি একটু ব্যয়বহুলও ছিল। ৫০০০ পোস্টার করতে সেই সময় ২৫০০০ টাকা খরচ পড়ত। এখন তো প্রযুক্তির সময়, এখন না হলে কখন ভালো হবে বাংলা ছবির পোস্টার!

তরুণ পরিচালক আশিকুর রহমান আশিক বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে প্রোগৃহে গিয়ে ছবি দেখতাম। আর ছবি দেখার আগে পোস্টারে চোখ যেত। আগের ছবির পোস্টারে অনেক বেশি দতার ছোঁয়া থাকত। পরবর্তীকালে তো অশ্লীলতার সময় পোস্টার ডিজাইন বলে কিছু ছিল না। তবে বর্তমানে আমার ছবির পোস্টার ডিজাইন করেছে সাজ্জাদ সায়েম ও জাফরিন সাদিয়া। তাদের ডিজাইন করা কাজ দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছে। আর বর্তমানে তো অভিনয়শিল্পীরাও ফটোসেশন করে সময় দিয়ে পোস্টার ডিজাইনে সহযোগিতা করছেন। অবশ্য সংখ্যাটা অনেক কম। যারা সময় দিয়ে কাজটা ভিন্নভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করতে সহযোগিতা করছেন তাদের ছবির পোস্টারটাও ভিন্ন হচ্ছে। এখন তো প্রযুক্তির কারণে খরচও কম। তাই পোস্টারে সকলেরই মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। যে কোনো নির্মাতারই নকল প্রবণতা বন্ধ করে নিজস্ব ভাবনায় ঢাকার ছবির মানসম্পন্ন পোস্টার ডিজাইন করা উচিত।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন