আব্দুর রাজ্জাক যেভাবে ‘নায়ক রাজ’

  22-08-2017 01:47AM

পিএনএস ডেস্ক: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তিনি ‘নায়ক রাজ’ হিসেবে পরিচিত। চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি যতটা দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন সেটি অনেকটা বিরল।

১৯৬০’র দশক থেকে শুরু করে প্রায় তিন দশক বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দাপটের সাথে টিকে ছিলেন নায়ক রাজ্জাক। তার আসল নাম আব্দুর রাজ্জাক। খবর বিবিসির।

আব্দুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালে কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে শরণার্থী হয়ে ঢাকায় আসেন। এরপর জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে।

দু’একটা সিনেমায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করার পর ৬৭ সালে মুক্তি পায় নায়ক হিসেবে তার প্রথম ছায়াছবি বেহুলা। সেই থেকে শুরু।

রাজ্জাকের সাথে এক সময় বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন নায়ক ফারুক। বয়সের বিবেচনায় রাজ্জাক ফারুকের সিনিয়র হলেও চলচ্চিত্রে তারা অনেকটা সমসাময়িক ছিলেন।

ফারুক বলছিলেন, বাংলা চলচ্চিত্রে খ্যাতিমান পরিচালক জহির রায়হান নায়ক হিসেবে রাজ্জাককে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন দর্শকদের সামনে।

জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্র নায়ক হিসেবে আবির্ভাবের পর রাজ্জাককে আর পেছন দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমান্বয়ে খ্যাতির শীর্ষে উঠেছেন তিনি।

ফারুক বলছিলেন, ‘বেহুলাতে তিনি (রাজ্জাক) হঠাৎ করে থার্ড বা সেকেন্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে জহির রায়হান সাহেব তাকে (রাজ্জাককে) যে কোন কারণেই হোক চট করে তার চোখে পড়ে যায়। এটাই হলো তার ভাগ্য। সে ছবির যে ব্যবসা সেখান থেকে মানুষ তাকে লুফে নিয়েছে।’

প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পে কাজ করছেন রাজ্জাক। ২০১৫ সালেও তার অভিনীত একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল।

২০১৬ সালে ৭৫তম জন্মবার্ষিকীতে রাজ্জাক বলেন, ‘আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না। আমি এই শহরে রিফিউজি হয়ে এসেছি। স্ট্রাগল করেছি। না খেয়ে থেকেছি। যার জন্য পয়সার প্রতি আমার লোভ কোনদিন আসেনি। ওটা আসেনি বলেই আজকে আমি এতদূর শান্তিতে এসেছি।’

রাজ্জাকের সমসাময়িক চিত্র নায়ক ফারুক মনে করেন রাজ্জাক তার সময়ে অভিনয়কে কাজে লাগিয়েছেন।

ফারুক বলেন, ‘এ ভাগ্যবান মানুষটি তার জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড কাজে লাগিয়েছেন। তিনি যখন বাংলা সিনেমায় অভিনয় শুরু করলেন তখন উর্দু সিনেমার বেশ চাহিদা ছিল। কিন্তু বাঙালী চাইতো তার মনের কথা চলচ্চিত্রে কেউ বলুক।’

রাজ্জাক-কবরী জুটির কথা এখনো বহু দর্শকের কাছে সফল রোমান্টিক জুটির উদাহরণ হয়ে আছে।

বেশ ক’বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে কবরী বলেছিলেন চলচ্চিত্রে তাদের দু’জনের মাঝ চমৎকার বোঝা-পড়া ছিল।

বিশেষ করে রোমান্টিক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় এ জুটি পরস্পরকে ভালোভাবে বুঝতেন।

কবরী বলছিলেন, ‘রাজ্জাকের সাথে অভিনয় করার সময় প্রেমের দৃশ্যগুলো সত্যি এতো প্রাণবন্ত ছিল যে মনে হতো অভিনয়ের মধ্যেই আমি ভালবাসছি। আমাদের আশপাশে যারা ছিল - ক্যামেরাম্যান, মেকাপম্যান, প্রডিউসার কিংবা ডিরেক্টর - সবাই জানতো কবরীর সাথে রাজ্জাকের সুসম্পর্ক। সেজন্যই আমার মনে হয় আমাদের দু’জনের এতো সাকসেস।’

নিজের ক্যারিয়ারে রাজ্জাক পাঁচবার শ্রেষ্ঠ নায়কের পুরষ্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তার ঝুলিতে আছে অসংখ্য পুরষ্কার। বাংলাদেশের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পরিচিত ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নায়ক রাজ্জাক যখন রাজত্ব করছেন, সে সময় পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্রের দাপট ছিল বাংলাদেশের দর্শকদের মাঝে। কিন্তু সে সময় নায়ক রাজ্জাক তার একটি স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে তোলেন।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নায়ক রাজ্জাক যে দাপট এবং অভিনয় প্রতিভা রেখে গেছেন সেটি অনেক দিন টিকে থাকবে দর্শকদের মনে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন