সিংগাপুরে আয়োজিত এশিয়ান ইয়ুথ থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল-২০১৭

  12-10-2017 05:02PM

পিএনএস : প্রথমবারের মত বাডস থিয়েটারের আয়োজনে ১৩ থেকে ১৫ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে সিংগাপুরে আনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘এশিয়ান ইয়ুথ থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল-২০১৭’। উৎসবে সিংগাপুরের পাঁচটি দল এবং ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশ এর একটি করে মোট পাঁচটি দল অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ‘ইয়ুথ থিয়েটার’কে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন ধরবে দেশের তারুন্য নির্ভর দল ‘প্রাচ্যনাট’। তিনদিনের উৎসবে ‘প্রাচ্যনাট’দেশের লোকজ সাংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্যে পল্লীকবি জসীম উদ্দীন-এর বিখ্যাত নাটক ‘বেদের মেয়ে’-র দুটি প্রদর্শনী করবে।

বেদের মেয়ে চম্পাবতীর জীবন-স্রোতে এই নাটকের মূল গল্প। বেদে দম্পত্তি চম্পাবতী-গয়া ঘুরে ঘুরে সাপ ধরে ও সাপের খেলা দেখায়। একদিন এক গ্রামে সাপ খেলা দেখাতে গিয়ে চম্পাবতী মোড়লের কুনজরে পড়ে। মোড়ল নিজের স্বার্থ চরিতার্থে চম্পাকে পাওয়ার জন্য অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে বেদে বহরের উপর।

শেষ পর্যন্ত নিজের বেদে জাতি রক্ষার্থে নারীত্ব বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয় চম্পা। বেদের দল চম্পাকে মোড়লের কাছে রেখে চলে যেতে বাধ্য হয়। মোড়ল চম্পাকে লোক দেখানো বিয়ে করে ভোগ করতে থাকে। গয়া আসমানী নামে নতুন বেদেনীকে বিয়ে করে কিন্তু চম্পাকে ভুলতে পারে না তাই তার সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে।

অপরদিকে মোড়লের গৃহে বন্দী চম্পা বেদেদের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করে, কিন্তু তখনই এক বৈষ্ণবী এসে খবর দেয় গয়া নতুন বিয়ে করেছে এবং বেদের দলও তার কথা ভুলে গেছে। ব্যথিত চম্পার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মোড়ল চম্পার উপর নির্যাতন শুরু করে। মোড়লের বড় বউ মালেকা চম্পার বন্ধ জীবন যন্ত্রণা বুঝতে পারে। মোড়লের গৃহস্থকোণ থেকে চম্পাকে ছাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। চম্পা সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে স্রোতের শ্যাওলার মত ভাসতে ভাসতে এসে পৌছায় গয়ার সংসারে। গয়া পরে বিপদে। সে চম্পাকে যায়গা দেবে কোথায়। আর আসমানীও এই বিষয়টি মেনে নিতে চায় না।

অবশেষে গয়া আসমানীকে বোঝায় যে চম্পা চাকরানী হয়ে থাকবে এবং সাপের খেলা দেখিয়ে অনেক টাকা আয় করে তাদের দিতে পারবে। তখন আসমানী রাজী হয়। নাটকের শেষভাগে বেদের দল একটি গ্রামে সাপ ধরতে চায়। সেখানে গয়া একটি কাল-সাপ ধরে। গ্রামের লোকজন গয়াকে সেই কাল-সাপ দিয়ে খেলা দেখাতে বলে। দাঁত না ভাঙ্গা সদ্য ধরা সাপটি নিয়ে খেলা দেখাতে রাজি না হলেও গয়া গ্রামের লোকজনের কথায় রাজি হয়। অতি-আত্মবিশ্বাসী গয়া সাপটি নিয়ে খেলা দেখাতে গিয়ে সাপের ছোবল খায় এবং প্রায় মৃত্যুর কোলো ঢলে পরে। আসমানির কোনো মন্ত্র কাজ করে না। অবশেষে চম্পা গয়ার বিষের রক্ত চুষে নেয়। এভাবে সে নিজেকে মৃত্যুর কাছে নিজেকে সমর্পন করে গয়ার জীবন রক্ষা করে যায়।

নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের প্রথিতযশা ডিজাইনার প্রাচ্যনাটের মো. সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া বারো সদস্যের দলটির প্রতিনিধিত্বও করছেন তিনি। তার মতে বাংলার বৈচিত্রময় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্যে ‘বেদের মেয়ে’ নাটকটিই উপযুক্ত। এর বিষয়বস্তু সার্বজনীন কারন নাটকটি শুধু বেদেদের জীবন নিয়ে হলেও এর মাঝেই দেখা যায় একজন নারীকে তার জীবনে কতবার কতকিছু বিসর্জন দিতে হয়। আর এর উপস্থাপনের ক্ষেত্রে লোকজ ফর্মের বিভিন্ন ফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে যেমন গাজীর গান, পালা গান, যাত্রা পালা, জারি গান, কবি গান, মেয়েলি গীত ইত্যাদি। আর গানের ক্ষেত্রে প্রচলিত লোকজ সুর যা যে কোন দেশের মানুষের মনোযোগ আকর্ষন করবে।

নাটক প্রদর্শনীর পাশাপাশি দলটি ‘বাংলাদেশ ট্রেডিশনাল ফোক মিউজিক এন্ড ড্যান্স’ শিরোনামের একটি কর্মশালা পরিচালনা করবে। এতে উৎসবে অংশগ্রহণকারী সকল দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবে। হাজারে বছরেরও বেশী পথ পাড়ি দেয়া বাংলাদেশের লোকজ নাচ ও গানের মুল উপাদান জনসাধারণের জীবন-জীবিকা, পেশা, ধর্মীয় আচার, আধ্যাত্মিকতা। বিভিন্ন লোকজ ফর্ম জারি, সারি, ভাটিয়ালি, কবিগান, আলাকাপ, গম্ভিরা, পুঁথি, লাঠিখেলা, গাজীর গান, ধামাইল ইত্যাদিকে উপস্থাপন করা হবে এই কর্মশালায়।

১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ‘বেদের মেয়ে’ নাটকটির প্রথম প্রদর্শনীর পরই ঐদিন কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হবে। পরের দিন ১৫ অক্টোবর, ২০১৭ উৎসবটির সমাপনী হবে প্রাচ্যনাট এর ‘বেদের মেয়ে’ নাটকটি দিয়ে। ১২ সদস্যের দলে আছেন মো. সাইফুল ইসলাম, মো. শওকত হোসেন সজিব, শাহরিয়ার রানা, রকি খান, জুডি, আমব্রীন, সন্ধি, শর্মী, শাহীন, তানজীম, প্রিয়ম ও গোপী। দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক মানের ‘এশিয়ান ইয়ুথ থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল-২০১৭’এ বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে যাওয়া প্রাচ্যনাটের জন্য গৌরবের বিষয়।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন