শরণার্থী শিশুদের ড্রামা থেরাপি

  12-10-2017 10:20PM

পিএনএস : ইতিহাস বলে টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাবার কালে ক্যাপ্টেন একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। যেহেতু জীবন বাঁচাবার তরীর সংখ্যা যাত্রীর তুলনায় অনেক কম ফলে তরীতে প্রথম উঠবে শিশু, তারপর নারী এবং সর্বশেষ পুরুষ। কি বিপন্নতায় কি উদযাপনের আবহাওয়ায় শিশুর সুরক্ষা ও বিনোদন দান বিবেচনার অগ্রে।

যুদ্ধ বিদ্ধস্থ আফগানিস্তানে ভীত সন্ত্রস্থ শিশুদের সামনে সার্কাস প্রদর্শীত হলে ঐসব শিশুর ভীত-সন্ত্রস্থ মুখের উপর দিয়ে ভীতির কালো মেঘ সরে যে হাস্যজ্জ্বল আনন্দের মুখাবয়ব ফুটে ওঠে তা বিবিসির সংবাদ পরিবেশনের বদৌলতে বিশ্ববাসীর জানা।

অনেকটা তেমনিভাবে মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে বেঁচে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও অসহায় শিশুদের মানষিক ক্ষতের উপর মানবিক সহমর্মিতার মাধ্যমে মানসিক শক্তি জোগাতে এবং বিনোদনের মধ্যে দিয়ে শিশুদের বিনোদিত করতে শিশু বন্ধু ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠিতা লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় উখিয়া, টেকনাফের সংশ্লিষ্ট জায়গায় শিশুদের সামনে, শিশুদের নিয়ে উপস্থাপিত হচ্ছে ড্রামা থেরাপি।

মুখোশ নির্মাণ, থিয়েটার গেম, সার্কাস প্রদর্শন, পারফরমেন্স আর্টস প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে উপস্থাপিত এই ড্রামা থেরাপির প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় গত ৭ ও ৮ অক্টোবর পালং বালুখালী, ঘুমধুম, পালং খালী, থ্যাংখালী, টেকনাফের উনছিপ্রাং সহ অন্যান্য এলাকায়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশনের আয়োজনের একটি দল ১২ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত অনাথ ও অসহায় শিশুদের মাঝে তাদের মানসিক বিনোদন প্রদানের লক্ষ্যে ড্রামা থেরাপি উপস্থাপনা করে চলছে ।

উপস্থাপনায় শিশুদের সামনে বসিয়ে কাগজ কেটে, রং মাখিয়ে সুতা পরিয়ে বিভিন্ন অবয়বের মুখোশ বানিয়ে শিশুদের পরিয়ে দিলে তাদের আনন্দ দেখবার মত। ফুল, পাখী, গাছ তথা প্রকৃতির সৌন্দর্য্যরে বিভিন্ন অবয়বে মুকুট বানিয়ে তাদের সামনে ধরলে কে কার আগে পড়বে ভাবনায় শিশুদের হৈহুল্লোড় দেখবার মতো। চার্লি চ্যাপলিন ভঙ্গিমায় হাঁটলে, নাট্যকর্মীরা ক্লাউন সাজলে শিশুরাও যে মুহুর্তে ঐ হাঁটার ভঙ্গিমা নকল করে হাটবে এও ছিল ভাবনার বাইরে, তবুও তা হল।

এক সাথে অনেকগুলো বল বাতাসে ছুঁড়ে ধরা ছোঁয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ন্ত্রন তথা হ্যান্ড স্কিলিং, কিংবা ভারসাম্য বজায় রেখে বডি থর্মিং এর মতো অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শন দেখে শিশুদের চোখে মুখে যে বিস্ময় ও নির্মল আনন্দ তাতো ভুলবার নয়।

বনকে আনন্দময় করে তোলার জন্যে এই আয়োজন অসংখ্য ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে থাকা শিশুদের সাময়িক হলেও সুখী করে, তৃপ্তি দেয়। শিশুদের তৃপ্তিতে বড়রাও, পরিবারের সদস্যরাও তৃপ্ত। উপস্থাপনায় ঢাকা থেকে শিল্পী সুজন মাহাবুর, বিপ্লব, হাবিব, বিপুল, হিমু, শিশির সহ পিপলস থিয়েটারের এক ঝাক সংস্কৃত কর্মীর সাথে জেলা শিল্পকলা একাডেমি কক্সবাজারের কালচারাল অফিসার আয়াজ মাবুদ সহ শিল্পকলা একাডেমির অন্যান্যরা অংশগ্রহন করেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র এই শিশুবান্ধব মহতী উদ্যোগ ও বাস্তবায়নে যেন নেপথ্যে ভেসে ওঠে কবি সুকান্তের দৃপ্ত কণ্ঠস্বর, ‘এই বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন