‘সেক্সি’ থেকে ‘ঘরণী’ বাংলা ছবির নতুন বিষয় দুর্গা

  16-10-2017 12:46PM

পিএনএস ডেস্ক: সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: বাংলা ছবির বিষয় হয়ে উঠেছে দুর্গা। আর তাকে নিয়েই বছরভর মেতে থাকছেন টলিউডের পরিচালক থেকে স্ক্রিপ্ট রাইটাররা। দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে ছবি হলে সেই সময়কে টার্গেট করেই ছবির মুক্তি হবে এটাই আশা দর্শকদের সাধারণ ধারনা। কিন্তু ২০১৭ সালের হিসেব পুরোপুরি উলটো কথাই বলছে। সারা বছরই চলছে বড় পর্দার দুর্গা আরাধনা। সেক্ষেত্রে পরিচালকরা অনেকেই মনে করছেন দুর্গা হয়তো বাংলা ছবির ক্ষেত্রে নতুন বিষয়।

সারা বছর প্রচুর ঝুটঝামেলা পেরিয়ে বাঙালি শুধুমাত্র আস্বিনের চারটি শারদ প্রাতের জন্য অপেক্ষা করে। থুরি এখন আবার এই অঙ্কটা বদলে মোটামুটি দিন সাতেক হয়ে গিয়েছে। চার হোক বা সাত, মর্ত্যলোকে দেবীর দুর্গা আগমন হয় বছরে একবারই। সেই দেবীই এখন হয়ে উঠেছেন বাংলা ছবির নতুন বিষয়। যার ফলে সময়ে হোক কিংবা অসময়ে দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে ছবি তৈরি চলতেই থাকে।

যদি লক্ষ্য করা যায় বাংলা ছবির বিষয় মোটামুটি ঘোরাফেরা করে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের উপর। ছোটদের জন্য ছবি আর হয় না। আর কমেডি? সে অনেক দূরের গল্প। ব্যতিক্রমী কয়েকটি ছবি থাকে যেগুলি মানব সম্পর্কের বেড়াজাল বাদে তৈরি হয়। আর বাকি পড়ে থাকে হইচই লারেলাপ্পা ছবি। সে সব ছবির বিষয়ও আদতে সেই সম্পর্কই। কিন্তু ২০১৭-র বছরটা যেন দুর্গাময়। মুক্তি পাচ্ছে এবং পাবে মিলিয়ে এক বছরে চারটি ছবি রয়েছে যার মূলে রয়েছেন দেবী দুর্গা। এই সব ছবি পুজোর আগেও মুক্তি পেয়েছে, পুজোর সময়ও মুক্তি পেয়েছে। দুর্গা কেন্দ্রিক ছবি মুক্তি পাচ্ছে ভাসান হয়ে যাওয়ার পরেও।

‘দুর্গা সহায়’ এই বছরের জুলাই মাসে মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। ‘বলো দুগ্গা মাঈকী’ মুক্তি পেয়েছে একদম পুজোর সময়েই অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে। ঠাকুর চলে গেলেন কৈলাসের পথে। তারপরে টেলিভিশনে অক্টোবর মাসে মুক্তি পেল ‘জয় মা দুর্গা’। মুক্তির অপেক্ষায় ‘কার্জনের কলম’ যার বিষয় পুরদোস্তুর দূর্গা। যদি বাংলা ছবি নয় তবু বাঙালির প্রানের দেবীকে নিয়ে ছবির নাম তাই বহু বিতর্কিত ছবি ‘সেক্সি দুর্গা’ কে ধরলে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ। বাদ দিলে হয় চার। এই চারটি ছবি একই বছরে মুক্তি পাচ্ছে যার মূল বিষয় হয়ে উঠেছে দুর্গা। যা অতিতে কোনোওদিন হতে দেখা যায়নি।

এই প্রসঙ্গে পরিচালক কার্জনের কলমের পরিচালক সৌভিক মিত্র জানিয়েছেন, “এটা ঠিক এক বছরে এতোগুলো ছবি দুর্গা কেন্দ্রিক হয়নি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বাংলা ছবির নতুন বিষয় হয়তো হয়ে উঠছেন দুর্গা।” তিনি এও জানিয়েছেন, “এই ছবি গুলি তৈরির ক্ষেত্রে কোথাও না কোথাও লুকিয়ে থাকছে বর্তমান সমাজের পরিস্থিতিই। কারন ছবির সাব প্লটে থাকছে যৌথ থেকে নিউক্লিয়ার হয়ে যাওয়া বাঙালি পরিবারগুলির অতীতের সোনার দিন এবং বর্তমানের দুরবস্থার ছবি।” জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে মানস মুকুল রায়ের ছবি সহজ পাঠের গপ্পো। মানস মুকুল জানাচ্ছেন, “দুর্গা বিষয়ের পাশাপাশি একটা ব্র্যান্ডও হয়ে উঠেছে।”

পরিচালক শিবপ্রসাদ নিজেও দুর্গার ছোঁয়া লেগে থাকা ছবি বানিয়েছেন। বেলাশেষে ছবির বেশ কিছু অংশ জুড়ে ছিল পরিবার এবং দুর্গা ঠাকুরের গল্প। তিনি জানিয়েছেন, “ সেদিক থেকে দেখতে গেলে সত্যিই হয়তো দুর্গা নতুন বিষয় হয়ে উঠছেন বাংলা ছবির।” তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন , “ এতে খারাপ ভালোর কিছু নেই। ছবিটা কেমন হচ্ছে সেটাই আসল কথা। দুর্গা নিয়ে বছরে দশটা ছবিও হতে পারে। এতে যদি ইন্ডাস্ট্রির লাভ হয়, তাতে ক্ষতি নেই তো।”

ছবির মানের বিচারে ‘দুর্গা সহায়’, ‘বলো দুগ্গা মাঈকী’ দুটো ছবিই দর্শকদের ভালো লেগেছে। দুটি দুই ঘরানার ছবি হলেও ছবির গল্পে কোনও খামতি ছিল না। বাকি রইল আরও দুই। টেলিভিশনের ‘জয় মা দুর্গার’ বাড়ির দুর্গার লুকে রয়েছে ব্যাপক সমস্যা। তবু চলে যেতে পারে। পরে থাকল কার্জনের কলম। দেখার ,শীতের সময়ে দুর্গা ফ্লেভার বাঙালির মনকে কতটা ছুঁয়ে যেতে পারে। সূত্র: কলকাতা২৪x৭

পিএনএস/আনোয়ার





@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন