বরিশালে বিলজুড়ে শাপলা ফুলের রাজ্য

  20-10-2017 04:32PM

পিএনএস, বরিশাল প্রতিনিধি : এ যেন শাপলার রাজ্য। লতা-পাতা গুল্মে ভরা বিলের পানিতে শত সর্হস লাল শাপলা হার মানিয়েছে সূর্যের আভাকেও। বরিশাল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের এক বিলে দেখা মিলবে চোখজুড়ানো এমন দৃশ্যের। প্রকৃতির বুকে আঁকা এ যেন এক নকশি কাঁথা। অপরুপ এ সৌন্দর্য বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের এক বিলে অবস্থিত, স্থানীয়দের কাছে যেটি পরিচিত শাপলার বিল ওবাগান নামে। আগাছা আর লতা-পাতায়, বিলের কোটি কোটি শাপলা, চোখ জুড়ায় পথচারিদের। বিলের যত ভেতরে যাওয়া যায়, ততই বাড়তে থাকে লালের আধিক্য। এ যেন এক শাপলার রাজ্য।

এ বিলে ঠিক কবে থেকে, শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে তা নিয়ে নেই সঠিক কোন তথ্য। তবে, স্থানীয় বয়স্কদের কাছ থেকে জানা যায় জন্মের পর থেকেই, এভাবে শাপলা ফুটতে দেখেছেন তারা। এ বিলে, তিন ধরণের শাপলা জন্মে। লাল, সাদা আর বেগুনি। তবে, লাল শাপলাই বেশি। গোটা গ্রাম জুড়ে শাপলার চাষ হয় এখানে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে প্রায় এক হাজার ৬০০ হেক্টর জমি নিয়ে এ বিল। গ্রামের অধিবাসীদের ৭৫% ই শাপলা চাষ এবং বিজ্ঞাপন এর সাথে জড়িত। এ গ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে শাপলা সরবরাহ করা হয়। এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে বলে দর্শনার্থীদের ও স্থানীয়দের ধারণা। বিলের চার পাশে গাঢ় সবুজের পটভূমিতে এ যেন বাংলার এক অবারিত ‘লাল স্বর্গ’। দূর থেকে সবুজের মধ্যে লাল রং দেখে অভিভূত হয়ে ওঠার মতো অবস্থা।

আগাছা আর লতাপাতায় ভরা বিলের পানিতে ফুটন্ত কোটি কোটি লাল শাপলা সত্যিই সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিলের লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। এ বিলের শাপলাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বিজ্ঞাপন চিত্রও। ফলে দিন দিন দর্শনার্থীদের স্থান হয়ে উঠছে সাতলার ‘শাপলার বিল’।

বরিশাল শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এ উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা, হারতার কালবিলা, পাশের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে এ বিল। বিলের মোট আয়তন সম্পর্কে জানা নেই স্থানীয়দের কারোরই। শাপলার বিলটি শুধু সৌন্দর্যই দেয় না, বিল থেকে শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ওই সব এলাকার অসংখ্য পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে।

বিলসংলগ্ন গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বছরের ছয় মাস তারা অনেকেই এ বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। এদের কেউ শাপলা তুলেন, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা আরো জানান, ডিসেম্বর মাসের শুরু দিকে শীতের মওসুমে যখন পানি কমে যায় তখন সব শাপলা মরে যায়। ওই সময় কৃষকেরা এখানে ধান চাষ করেন।

তবে একই সাথে ধান ও শাপলার এ সহাবস্থান আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ জানান, সাধারণত শাপলা তিন প্রকারের হয়ে থাকে। সাদা, বেগুনি (হুন্দি শাপলা) ও অন্যটি লাল রঙ্গের। সাদা ফুলবিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙের শাপলা ওষুধি কাজে ব্যবহৃত হয়। শাপলা খুব পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাকসবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি।

সাতলা যাবেন কিভাবে : সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল আপনি ৬ থেকে ৮ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন। প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে বেশকিছু বাস বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ঢাকা থেকে আগত বাসগুলো বরিশাল এর নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে এসে থেমে থাকে। তার পর বরিশাল থেকে সাতলা শাপলা বিল যাওয়ার নিয়ম।

বরিশাল থেকে সাতলা : উত্তর সাতলা নানাভাবে যাওয়া যায়। বরিশাল থেকে বাসে শিকারপুর। এরপর অটোতে উত্তর সাতলা। অথবা বরিশাল নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা-বাগধা গ্রামে সরাসরী বাস সার্ভিস আছে। প্রায় আড়াই ঘন্টার মতন লাগে। এছাড়া মটরসাইলে ও মহেন্দ্র গাড়িতে করেও আপনি যেতে পারবেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন