শোকের ছায়া নেত্রকোনায়!

  24-11-2017 11:39PM

পিএনএস ডেস্ক: ফোক গানের কিংবদন্তি গায়ক নেত্রকোনার কৃতি সন্তান বারী সিদ্দিকীর মৃত্যুতে নেত্রকোনা জেলায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার মৃত্যুতে পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও শোক জানিয়েছেন, ভারতীয় উপ-মহাদেশের যাত্রা জগতের বিবেক সম্রাট নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের শ্রী গৌরাঙ্গ আদিত্য, নেত্রকোনার বাউল সম্রাট সিরাজ উদ্দিন খান পাঠান (অন্ধ সিরাজ), উদীয়মান বাউল শিল্পী গোলাম মৌলা, ফোক শিল্পী ও সাংবাদিক ইউরো আনিসসহ সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।

বারী সিদ্দিকী নেত্রকোনা সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের ফাইছকা গ্রামের এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বড়ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম ছিলেন একজন যাত্রাভিনেতা, মা ছিলেন গীত সংগীতের জন্য এলাকায় সুপরিচিত। পরবর্তীতে বারী সিদ্দিকী বংশীবাদক হিসেবে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় বাংলা ফোক গানের কিংবদন্তি গায়কের সংগীতচর্চা।

বারী সিদ্দিকী প্রথমে ওস্তাদ গোপাল দত্ত, রফিক মাহমুদ, দুলাল পত্ররবীশসহ বিভিন্ন সঙ্গীতজ্ঞের কাছ থেকে সংগীতের তালিম নিয়ে শুরু করেন ফোক গানের চর্চা। তিনি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও চলচিত্র নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিনের চলচিত্রের মাধ্যমে গান গেয়ে তিনি চলচ্চিত্রে পা রাখেন। তখন থেকে তিনি ফোক গানের জন্য দেশের বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।

বারী সিদ্দিকী শিক্ষা জীবনে নেত্রকোনা সরকারী কলেজের ছাত্র সংসদ নিবার্চনে ১৯৭৯ সালে নাট্য সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ছাত্র জীবনে রাজনৈতিক ভাবে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রোগাম প্রোডিউসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই গায়ক।

বারী সিদ্দিকী বাউল সংগীত র্চচার জন্য এবং বাঙ্গালী হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের কার্লিগ্রামে নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেছেন “বাউল বাড়ি” নামে একটি বাউল গবেষণা কেন্দ্র।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে এবং সাড়ে ১০ টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে বারী সিদ্দিকী মরদেহ দু-দফা নামাজের জানাজা শেষে নেয়া হয়েছে নেত্রকোনায়। মরদেহ নেত্রকোনা সরকারী কলেজ মাঠে রাখা হয়। সেখানে বাদ আছর তার নামাজের জানাযা শেষে সদর উপজেলায় তার বাউল বাড়ীতে দাফন করা হয়।

বারী সিদ্দিকীর স্ত্রীর বড় ভাই বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যাপক ওমর ফারুক জানান, বারী সিদ্দিকী তার মৃত্যুও আগেই কবর স্থানের নির্ধারিত স্থান পরিবারের লোকদের দেখিয়ে গেছেন। তিনি বাউল বাড়ির কোথায় চির নিদ্রায় ঘুমাবেন। ফারুক আরো জানান, বারী সিদ্দিকীর ইচ্ছা ছিল এখানে একটি বাউলদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও একটি উঁচু মিনার সম্বলিত মসজিদ স্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল।

স্থানীয় বাউলরা জানান, তিনি সঙ্গীত চর্চাকে বিশ্বের দরবারের পৌঁছে দেয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। বারী সিদ্দিকীর এই কর্মময় জীবনে অসংখ্য গেয়েছেন এবং তিনি নিজেও গান রচনা করেছেন।

গত ১৭ নভেম্বর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বারী সিদ্দিকী। এরপর যখন তাকে দ্রুত স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন তিনি অচেতন ছিলেন। তখন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার দুটি কিডনি অকার্যকর ছিল। তিনি বহুমূত্র রোগেও ভুগছিলেন। বারী সিদ্দিকীর ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী বলেন, বছর দুয়েক যাবৎ বাবা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। গত বছর থেকে সপ্তাহে তিন দিন কিডনির ডায়ালাইসিস করছেন তিনি। এরপর লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গত রাত ২ টা নাগাদ তিনি মারা যান।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন