গানটিতে কি আসলেই ইসলাম অবমাননার কিছু আছে

  16-02-2018 01:11AM

পিএনএস ডেস্ক: গত শুক্রবার নির্মীয়মান ভারতের দক্ষিণি মালায়লাম সিনেমা ‘ওরু আদার লাভ’ এর প্রোমো গান ‘মানিক্য মালারায়ি পুভি’ রিলিজ হওয়ার পরপরই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। আর গানটির একটি দৃশ্যে চোখ মেরে দর্শকের হৃদয়ছোঁয়া কিশোরী অভিনেত্রী প্রিয়া প্রকাশ ভারিয়ার রাতারাতি মহা তারকা বনে যান।

এরপর গত মঙ্গলবার নাটকীয়ভাবে গানটির বিরুদ্ধে হায়দ্রাবাদ পুলিশে অভিযোগ করেন মুসলিমদের একটি গ্রুপ। তাদের অভিযোগ গানটিতে মুসলিমদের চেতনায় আঘাত করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে গানটিতে।

বৃহস্পতিবার দারুল ইফতা জামিয়া নিজামিয়া নামে ভারতের একটি ইসলামি সংগঠন এই গানের বিরুদ্ধে ফতোয়াও জারি করেছে। সংগঠনের তরফে মুখপাত্র জাহির খান জানিয়েছেন, এই গানের কথা মুসলিম ভাবাবেগে আঘাত করছে।

বুধবার উত্তর ভারতের বিখ্যাত ইসলামি প্রতিষ্ঠান দেওবন্দ মাদ্রাসার উলেমারাও এর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। দেওবন্দ মাওলানা, সলিম আশরাফ কাসমি বলেন, ‘হোক কোনো অভিনেতা, ক্রিকেটার বা অন্য কোনো ব্যক্তি, ভারতের সংবিধান কাউকে কোনো ধর্মকে বাজেভাবে উপস্থাপনের অধিকার দেয়নি। আর সরকারের দায়িত্ব হলো কোনো ধর্মকে বাজে উপস্থাপনের কোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমরা এই অভিনেতার ঘৃণ্য অভিনয়ের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। যা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করছে।’

অভিযোগকারীদের দাবি, গানটিতে স্কুলের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যে চোখে-চোখে যে প্রেম বিনিময়ের দৃশ্য দেখানো হয়েছে তা মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) ও তার প্রথম স্ত্রী খাদিজার প্রেমের রুপক চিত্রায়ন। টাইমস নাউ সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে এক অভিযোগকারী বলেন, তিনি প্রথমে গানটি দেখে উপভোগ করেছিলেন। কিন্তু পরে যখন তিনি গানটির কথাগুলোর অনুবাদ পড়ে দেখেন তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। কারণ তাতে মহানবী ও তার স্ত্রী খাদিজার প্রেম-ভালোবাসার গল্প রয়েছে। আর গানের সেই কথারই প্রতীকি চিত্রায়ন করা হয়েছে ওই দুই তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীর ফ্লার্টিং দৃশ্যে। ছেলেটি আবার মুসলিম আর মেয়েটিও অমুসলিম।

হিন্দুস্তান টাইমসের খবর মতে, অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর পুলিশ ওই অভিযোগ আমলে নিবে বলে জানানো হয়েছে।

মানিক্য মালারায়ি পুভি নামের এই গানটি কম্পোজ করেছেন, শান রহমান। যা আদতে ১৯৭৮ সালে লিখেছিলেন পিএমএ জাব্বার নামের এক সিনেমার গান লেখক। আর কম্পোজ করেছিল থালেশ্বরি কে রেফিক।

গানটি মূলত উত্তর কেরালার মালাবারের স্থানীয় মুসলিমদের লোকজ ঐতিহ্য মাপ্পিলা পাত্তু সাংস্কৃতিক ঘরানার। সাধারণত বিয়ে অনুষ্ঠান এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানে গাওয়া হয় গানটি।

ওই এলকার স্থানীয় কথ্যভাষার মতোই গানটিতেও আরবির সঙ্গে মালায়লাম এবং উর্দু, তামিল এবং ফার্সি ভাষার শব্দ আছে। মাপ্পিলা পাত্তু সাংস্কৃতিক ঘরানার গানগুলিতে প্রায়ই বিখ্যাত ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের প্রশংসা করা হয়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর জীবনের নানা ঘটনা তুলে ধরা হয়। বিখ্যাত কোনো যুদ্ধের বর্ণনা করা হয়। এই সংস্কৃতির একজন নেতৃস্থানীয় গান লেখক ও গায়ক হলেন ১৯ শতকের মইনকুট্টি ভাইদিয়ার। যিনি তার যুদ্ধ সংক্রান্ত গানগুলিন জন্য বহুল পরিচিত।

মানিক্য মালারায় পুভি গানটি শুরু হয়েছে বিবি খাদিজার রুপের বর্ণনা দিয়ে। যেখানে তাকে তুলনা করা হয়েছে মুক্তা ফুলের সঙ্গে। এতে আরো বলা হয়েছে প্রথম দেখাতেই মহানবীর প্রেমে পড়েন খাদিজা এবং তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।

মুল গানটি সিনেমার জন্য তৈরি গানটির চেয়ে আরো লম্বা। মুল গানে খাদিজা কীভাবে মহানবীর চাচা আবু তালিবের কাছে প্রতিনিধি পাঠিয়ে তার ভাতিজা মোহাম্মদকে (সা.) বিয়ে করতে চেয়েছিলেন সেই গল্প বলা হয়েছে। গানটি শেষ হয়েছে খাদিজার বিয়ের পোশাক পরার গল্প বলার মধ্য দিয়ে এবং ওই মহা-যুগলের জন্য সবার শুভকামনার বিবরণ দিয়ে।

স্ক্রল ডট ইনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে সিনেমাটির পরিচালক, ওমর লুলু বলেন, মানিক্য মালারায় পুভি গানটি তার বেড়ে ওঠার বছরগুলোর সঙ্গী ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি যখন গানটির স্বত্ত্ব কিনে নেই তখন আমি জানতাম, যে কোনো মানুষই গানটির সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নিতে পারবে।’

ওমর লুলু জানান তিনি এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন যে, কিছু কিছু মানুষ হয়তো গানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন। তিনি বলেন, আমার সম্প্রদায়ের অনেক বয়স্ক লোক গানটির বিরোধীতা করেছেন। তারা মনে করেন, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এবং তার স্ত্রী বিবি খাদিজার প্রেম নিয়ে কোনো সিনেমার গান করা হলে তা ইসলাম অবমাননার শামিল। কিন্তু এমন লোকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। আমার ধারণা আগের তুলনায় গানটি এখন অনেক বেশি মানু্ষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।’

সূত্র: স্ক্রল ডট ইন


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন