নিউইয়র্ক কমিক ফেস্টিভালে প্রথমবারেই সবার দৃষ্টি কেড়েছেন মুসলিম শিল্পীরা

  14-10-2018 10:57AM


পিএনএস ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বিশ্বের বৃহত্তম কমিক (Comic) ফেস্টিভাল অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তিন দিনব্যাপী এই ফেস্টিভালে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অন্তত ১৮০,০০০ মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন।

চলতি মাসের ৪ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত নিইয়র্ক শহরে এ বছরের কমিক ফেস্টিভালটি অনুষ্ঠিত হয়। এই ফেস্টিভালের মাধ্যমে নিউইয়র্কের অর্থনীতিতে অন্তত ১০০ মিলিয়ন ডলার যোগ হয়।

এ বছরের কমিক ফেস্টিভালের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মুসলিমদের অংশগ্রহণ এবং সেখানে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

নিউইয়র্কের কমিক ফেস্টিভালের ইতিহাসে এই প্রথম সেখানে মুসলিমদের একটি দল অংশ নেয়। তারা সেখানে অ্যানিমেশন, কমিক এবং মুসলিম ঐতিহ্য তুলে ধরেতে সচেষ্ট হয়।

এই ফেস্টিভালটির মডারেটর ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামিকা মিটচেল এবং তিনি মুসলিম দলের সাথে অংশ নিয়ে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলিমদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন।

প্রতিনিধিত্ব এবং আলোচনা
বিশ্বজুড়ে কমিক শিল্পের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং এই খাতে অনেক সৃজনশীল কাজ হয়ে থাকে। ওমার মিরজা নামের একজন মুসলিম কমিক তৈরিকারক তার কমিক বই ‘Zindan: The Last Ansaars’ এর সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেন।

তিনি বলেন, ‘আমি এই কমিক বইয়ের মাধ্যমে ৯/১১ হামলার পরবর্তী বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা দিতে চেয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘গণমাধ্যম গুলোতে ইসলাম এবং মুসলিমদের সম্পর্কে অনেক বানোয়াট কথা বার্তা তুলে ধরা হয়। আমি মনে করি এসব ভুল ধারণা দূর করতে আমার এই কমিক বই তথা পুরো কমিক শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। একই সাথে আমরা ইসলামকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারবো এবং এতে করে লোকজন আর আমাদেরকে বিদেশি হিসেবে দেখবে না।’

আদিল ইমতিয়াজ নামের আরেকজন মুসলিম কমিক শিল্পী তারা কমিক বই ‘Baraaq’ তৈরিতে তার উৎসাহের কথা বলতে গিয়ে জানান- ‘আপনি যদি হলিউডের কিছু চলচ্চিত্র যেমন, ব্যাটম্যান বনাম সুপারম্যান বা প্রথম দিককার আয়রম্যান দেখে থাকেন তবে আপনার নজরে পড়বে এই চলচ্চিত্রগুলোতে মুসলিমদের সম্পর্কে গতানুগতিক একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আমাদের নিজস্ব কমিক দিয়ে এ ব্যাপারে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা পুরো বিশ্ব থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। এরপরে আমরা অ্যানিমেশন শিল্পের দিকে যেতে চাই।’

মুসলিমদের সৃজনশীলতা
নিউইয়র্কের কমিক ফেস্টিভালে মুসলিম শিল্পীদের সৃজনশীলতার জোরালো উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অনেক সমালোচক মুসলিম শিল্পীদের এই কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করেছেন।

জেসমিন বেগার নামক একজন সাংবাদিক বলেন, ‘আমি চাই এমন মুসলিমদের সম্পর্কে লিখতে যারা খুবই সৃজনশীল। কিন্তু অনেক সময় সম্পাদক আমাকে এমনটি লিখতে অনুমতি দেন না। সুতরাং এ বিষয়ে আমাকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সাংবাদিকতায় আমার মত আরো অনেকের কাজ করতে হবে যাতে করে আমরা মুসলিম শিল্পীদের সম্পর্কে লিখতে পারি।’

ইয়াসমিন নামের অপর একজন মুসলিম কমিক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আপনি এখানে আমাদের জন্যই এসেছেন, এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনাদের মত অমুসলিম সাংবাদিকরা যেভাবে আমাদেরকে সমর্থন করে যাচ্ছেন তাতে আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

ইয়াসমিন নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, কমিক ফেস্টিভালে হিজাবী মুসলিমদের একটি দল কমিক তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান মারভেলের আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ৩য় স্থান অর্জন করেছে।

মুসলিম দেশসমূহে কমিক
নিউইয়র্কের মত বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কমিক ফেস্টিভালের আয়োজন হয়ে থাকে। বিশেষত মডারেটর মিটচেল ২০১৮ সালে বাহরাইনে অনুষ্ঠিত কমিক ফেস্টিভালের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

তিনি বলেন,‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি কমিক ফেস্টিভাল হয়েছিল। চলতি বছরের জুলাই মাসে মালয়েশিয়ায় এরকম একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অন্যান্য মুসলিম দেশ যেমন, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া এবং মিশরেও কমিক ফেস্টিভালের আয়োজন করা হয়।’

এমনকি চলতি বছরে সৌদি আরব তাদের দ্বিতীয় কমিক ফেস্টিভালের আয়োজন করতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য নতুন ধরনের কমিক তৈরি করে যাচ্ছি।’

সবকিছুর ঊর্ধ্বে নিউইয়র্কের কমিক ফেস্টিভালে মুসলিমদের দলটি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় কমিক সংস্কৃতিতে অংশ নিয়ে অন্যান্য সংস্কৃতির লোকজনের সাথে মুসলিম সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর আলোচনায় অংশ নিতে সক্ষম হয়েছে। সূত্র: এবাউট ইসলাম ডট নেট

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন