আমজাদ হোসেনের মরদেহ দেশে আনা নিয়ে ভোগান্তি

  17-12-2018 09:00PM

পিএনএস ডেস্ক : কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী এবং লেখক আমজাদ হোসেন মারা গেছেন গত শুক্রবার। এর পর চার দিন পার হতে যাচ্ছে। পরিবার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউই এখনো তাঁর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। ব্যাংককে এখন আছেন আমজাদ হোসেনের ছোট ছেলে সোহেল আরমান।

আজ সোমবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু আমজাদ হোসেনের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানাতে পারেননি। সোহেল আরমান বলেন, ‘বাবার মরদেহ দেশে নেওয়ার সব প্রক্রিয়া চলছে।’

ঢাকার পর ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে টানা ১৬ দিন চিকিৎসার পর গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে মারা যান আমজাদ হোসেন। পরদিন শনিবার সোহেল আরমান ব্যাংকক থেকে জানান, সাপ্তাহিক ছুটির কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ আছে। তাই প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষ করে বাবার মরদেহ নিয়ে সোমবার সকালে ঢাকায় ফিরতে পারবেন। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় জানালেন ভিন্ন কথা।

সোহেল আরমান বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় সব শেষ। বাবার চিকিৎসার ব্যাপারে ব্যাংককের বাংলাদেশ দূতাবাস যুক্ত আছে, তাই দূতাবাস থেকে হাসপাতালের বিল পরিশোধের নিশ্চয়তাসংক্রান্ত কাগজটি দিলেই বাবাকে নিয়ে রওনা করতে পারব। কিন্তু দূতাবাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সেই ধরনের কোনো কাগজ এখনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়নি, তাই দেরি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়, আমজাদ হোসেনের বকেয়া বিলের দায়িত্ব সরকার নিয়েছে, তাহলে কিন্তু আর কোনো কথা থাকবে না। বাংলাদেশ দূতাবাস বাবার মরদেহ দেশে পাঠাবে, এটা তো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমি জেনেছি, বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীই নিয়েছেন।’

এদিকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও ফার্স্ট সেক্রেটারির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরেণ্য পরিচালক আমজাদ হোসেনকে ২৭ নভেম্বর রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সে সময় আমজাদ হোসেনের পরিবারের হাতে প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার খরচ বাবদ ৪২ লাখ (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ২২ লাখ ও চিকিৎসায় ২০ লাখ) টাকা অনুদান দেন। সোহেল আরমানের তথ্যমতে, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের বাইরেও ১৬ দিনে তাঁরা বাবার চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬১ লাখ টাকা।

ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাস যদি বিল পরিশোধের নিশ্চয়তাসংক্রান্ত কাগজ না দেয়, তাহলে কি আপনার বাবার মরদেহ ঢাকায় আনা হবে না? সোহেল আরমান বলেন, ‘সেটা তো আমি বলতে পারি না। সেটা আরেকটা ইস্যু। এটা আমার বড় ভাই দোদুল ভালো বলতে পারেন। ঢাকা থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার আর আমার বড় ভাই সাজ্জাদ হোসেন দোদুল বলেছেন, যেকোনো সময় চিঠিটা ইস্যু হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই এমন আশ্বাস দিয়েছেন।’

এদিকে মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘আমজাদ হোসেনের মরদেহ দেশে আনার বিষয়টি নিয়ে আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আশা করছি কাল মঙ্গলবার হয়ে যাবে। যদি তা সম্ভব হয়, তাহলে আগামীকাল মঙ্গলবার রাতে আমজাদ হোসেনের মরদেহ দেশে আনা হবে।’

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমজাদ হোসেনকে। হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুরু থেকেই তাঁকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়।

বাংলাদেশের বরেণ্য এই নির্মাতার শারীরিক অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মাথায় তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ ২০ লাখ টাকা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ ২২ লাখ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেন তিনি।

পরিচালক আমজাদ হোসেনের জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, বড় বাড়ির মেয়ে, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি।

১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া তিনি আরও ১৪ বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার।-প্রথম আলো

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন