রমজানে সেহরি ও ইফতারে যা খাবেন

  28-05-2017 03:47PM

পিএনএস ডেস্ক:সময়ের পরিক্রমায় বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের দরজায় আবারো এসে উপস্থিত রহমত-বরকত- মাগফিরাতের মাস রমজান। রমজান মাস ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র মাস। এ সময় সংযম সাধনার পাশাপাশি সুস্থ ব্যক্তিরা অনেকেই রোজা রাখেন, যারা অসুস্থ তাদের অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন রোজা রাখার- কিন্তু রোজা রাখা উচিত হবে কি না তা বুঝে উঠতে পারেন না।

এবার যেহেতু প্রচণ্ড গরমে রোজা পালন করতে হবে তাই সতর্কতা দরকার আরো বেশি। মনে রাখুন, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীরের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পুষ্টিবিদরা এসময় ক্যালরি সমৃদ্ধ এবং সহজ পাচ্য খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে বেশি খাবার না খেয়ে বার বার খাওয়া উচিত। ইফতার এবং সেহরির খাবারে তাই চাই বাড়তি সতর্কতা।

প্রকৃতপক্ষে রোজা নিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ভাবনার শেষ নেই। রোজায় সেহরি, ইফতারি ও শারীরিক সুস্থতা নিয়ে মানুষের মনে এ সময়ে থাকে অনেক জিজ্ঞাসা।

আর তাই আজ দেশের খ্যাতনামা এক হাসপাতালের সাবেক প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা রমজানে সেহরি ও ইফতারিতে স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে পিএনএস অনলাইন পাঠকদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। রোজা শুরুর এ সময়ে জেনে নেই তার পরামর্শ

সেহরিতে যা খাবেন
এবারের রমজান মাস শুরু হয়েছে জ্যৈষ্ঠের একেবারে মাঝামাঝিতে। আর কিছুদিন পরেই বর্ষার আগমন ঘটবে। তবে জৈষ্ঠের এ গরমে রোজা শুরু হওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি ও বদহজমের মতো নানা সমস্যা। আর তাই রোজার এ দিনগুলোতে সুস্থ থাকতে চাই বাড়তি কিছু সর্তকতা।

তাহলে জেনে নিন রোজার দিনে সেহরিতে কেমন খাবার খাওয়া উচিত।

মূলত সেহরির সময় শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে খাবার খাবেন। সেহরির খাবার তালিকায়ও রাখুন ভাত, সবজি, ডাল, মাছ বা মাংস। শেষ পাতে খেতে পারেন মিষ্টি জাতীয় খাবার। খাবার পরে কিছুক্ষণ হাঁটবেন। এরপর পানি পান করবেন। সেহরির সময় শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ গ্লুকোজ মিশিয়ে পান করুন।

সেহরিতে এমন কিছু খাওয়া ঠিক না যা খেলে বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকে সেহেরিতে দুধ কলা খেতে পছন্দ করেন। এতে বদহজম বা ঢেকুর ওঠার সম্ভাবনা থাকে। তাই সেহেরিতে এ জাতীয় খাবার পরিহার করাই ভালো।

খুব বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে রুচি অনুসারে স্বাভাবিক খাবার খাবেন। সারাদিন খেতে পারবেন না বলে ইচ্ছামত উদরপূর্তি করে খাবেন না। পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রাখবেন। একজন মানুষের সারাদিন যে পরিমাণ পানি দরকার হয় সে পরিমাণ রাতে পান করা উচিত।

সেহরিতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল আটা, বাদাম, বিনস, শস্য, ছোলা, ডাল ইত্যাদি খেতে হবে। এগুলো হজম হয় আস্তে আস্তে, তাই অনেক সময় পর ক্ষুধা লাগে। রক্তেও চিনির পরিমাণ তাড়াতাড়ি বাড়ে না।

সেহরিতে খেজুর বা খোরমা অবশ্যই খাবেন। এতে আছে শর্করা, চিনি, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন, ক্লোরিন ফাইবার, যা সারাদিন রোজা রাখার পর খুবই দরকারি।

সেহরিতে তাজা ফলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে সবজি খান। না হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো আপনার নিঃশ্বাসকেও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। রোজার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ না করলে এর অভাবে শরীরে কিটোন উৎপন্ন হবে। তাই এ সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খান যেমন কলা, ওটস, রুটি ইত্যাদি।

সেহরিতে দুধের সঙ্গে ইসবগুল খেতে পারেন।এতে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। সেহেরিতে সহজপাচ্য বা ঠাণ্ডা খাবার যেমন দই, চিড়া খাবেন। তাহলে সারাদিন রোজা রাখা নাজুক পাকস্থলী শান্তিতে খাবার হজম করতে পারবে।

ইফতারিতে যা খাবেন
ইফতারের তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার পর রাতের খাবার খাবেন। ভাত, সবজি, ডাল, মাছ বা মাংস রাখবেন খাবারের তালিকায়। সবজি ঝোল করে খাবেন। সহজে হজম হয় এবং আঁশ যুক্ত খাবার খাবেন।

বেশির ভাগ লোককে দেখা যায়, ইফতারের সময় হুলস্থুল ধরণের খাবার-দাবার খেতে। তারা মনে করেন, সারা দিন না খাওয়ার অভাবটুকু ইফতারে পুষিয়ে নেবেন। কিন্তু এটা একটা ভুল ধারণা। ইফতার পর্বে উত্তেজক খাবার একেবারেই বর্জন করতে হবে। ইফতার শুরু করবেন শরবত দিয়ে। তবে শরবতে কৃত্রিম রঙ মেশাবেন না। এ রঙে থাকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। বাজারে অনেক কৃত্রিম রঙ মেশানো শরবত পাওয়া যায়, সেসব অবশ্যই পরিহার করবেন।

ইফতারে ফলের রস বেশ উপকারী। এসময় যেকোনো একটি ফল খাবেন, ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন ও খণিজ, যা আপনাকে স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে।

বুট, ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন এ সময়। দই, চিঁড়া ও কলা খেলে ভালো। তবে প্রচলিত বেগুনি ও পেঁয়াজু সর্বদা পরিহার করবেন। তেলেভাজা এসব খাবার স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তা ছাড়া খাবারগুলো পুরনো তেলে ভাজা হলে ক্ষতির পরিমাণটা বেড়ে যায়। তেল বারবার গরম করলে ক্ষতিকর পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়, যার মধ্যে থাকে বেনজোপাইরিন। এটা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। তাই ইফতারে খেঁজুর ও বিভিন্ন ফল রাখা ভালো।

সারা দিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। খেজুর সেই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। সেহরি এবং ইফতারির সময় প্রচুর পানি পান করবেন। পানি আপনার শরীরের কোষগুলোকে সজীব রাখবে।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন