দেশে যত্রতত্র থুতু ফেলায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

  25-06-2017 10:25AM

পিএনএস ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় জনসমক্ষে থুতু ফেলাকে। একইসাথে এই অভ্যাসটি স্বাস্থ্যের জন্যও একটি মারাত্মক ঝুঁকি।

ঢাকার এক শপিং মলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম প্রায় ১৫ মিনিট। এই সময়ের মধ্যে ফুটপাথ দিয়ে চলতে গিয়ে, রাস্তার পাশে দাড়িয়ে গল্প করা বা অলস বসে থাকা অনেক লোককেই দেখা গেল ফুটপাতে বা মার্কেটের সামনে অবলীলায় থুতু, কফ, পানের পিক ফেলে যাচ্ছে।

দৃশ্যটি বাংলাদেশের যেকোন বড় শহরের বাসিন্দাদের জন্য স্বাভাবিক। এতটাই স্বাভাবিক যে চোখ এড়িয়ে যায় অনেকের। তবে কখনো হঠাৎ চোখ পড়লে বা নিজে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হলে তখন বিষয়টা গা ঘিনঘিন করার মতোই।

কিছুক্ষণ পর রাস্তার পাশে ভ্যান থামিয়ে ফুটপাতে একদলা থুতু ফেললেন চালক মোহাম্মদ সেলিম।

"থুতু যখন আয়া পরসে, থুতুতো ফালাইতেই হয়"। কেন করলেন জিজ্ঞেস করতে জবাব দিলেন তিনি।

বিষয়টা পরিষ্কারভাবেই মি. সেলিমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে তিনি নিম্নআয়ের মানুষ বলে এমনটা ভাবছেন সেটা বলার কোন সুযোগ নেই।

যেখানে সেখানে থুতু ফেলাকে যদি বদ অভ্যাস বলা হয়, তবে এই বদ অভ্যাস আর্থিক এবং সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে অনেকেরই রয়েছে ।

"পরিবেশ যেমন দেখি ঠিক তেমনভাবেই চলতে হয়। চারিদিকে ময়লা-আবর্জনা, কেউ সচেতন থাকতে পারে কেউ পারে না"। বলেন একজন পথচারী।

কিন্তু শুধুমাত্র অপরিচ্ছন্নতা বা দেখতে নোংরা লাগার বিষয় নয় এটি। যেখানে সেখানে থুতু ফেলার বড় বিপদ হচ্ছে রোগ-বালাই সংক্রমণ।

বাংলাদেশ রোগতত্ব ও রোগ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বায়ুবাহিত রোগের একটি বড় কারণ যেখানে সেখানে থুতু এবং কফ ফেলা। যার মধ্যে যক্ষ্মা অন্যতম।

"যাদের কোন রোগ নেই তারাও যখন থুতু ফেলে তখনও তাদের মুখের মধ্যে কিছু রোগ-জীবাণু থাকে। বিশেষ করে যারা ভাইরাসজনিত রোগে ভুগছে তাদের থুতু ও শ্লেষ্মার সাথে সেই ভাইরাসটি বেরিয়ে আসে। যেহেতু এটি একটি ভেজা অবস্থায় থাকে, ভাইরাসটি জীবিতও থাকে অনেক বেশি"।

ড. রহমান বলেন, সরাসরি সংস্পর্শে এসে বা বাতাসের মাধ্যমে থুতু ও কফ থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

যত্রতত্র থুতু ফেলার সমস্যাটি শুধুমাত্র বাংলাদেশ বা ঢাকা শহরের একক নয়। বিভিন্ন গবেষণায়ও উঠে এসেছে এশিয়া অঞ্চলের শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বিরক্তিকর বিষয়গুলোর অন্যতম জনসমক্ষে থুতু ফেলা।

যত্রতত্র থুতু ফেলা নিষিদ্ধ করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এমনকি ভারতেরও কিছু এলাকায় আইন রয়েছে এবং জরিমানারও বিধান রয়েছে। বাংলাদেশে এধরণের কোন আইন নেই এবং সচেতনতা তৈরিরও তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনা।

"প্রথমে জনগণকে সচেতন করার দিকেই যেতে হবে। আইন করা বা জরিমানা করার মত পরিস্থিতিএখনো নেই। সোসাইটি এখনো সেভাবে প্রস্তুত হয়নি।" বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।

মি. খোকন বলেন, একটি বড় জনগোষ্ঠির মধ্যে শহরে জীবনধারণের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হয়নি এই বাস্তবতা থেকেই তাদের কাজ করতে হচ্ছে। সেখানে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে এই বিষয়টিও যোগ করা উচিত।

ঢাকার অনেক সমস্যার মাঝে যেখানে সেখানে থুতু ফেলাটা হয়তো খুব সামান্য মনে হতে পারে।

কিন্তু একইসাথে এটি এমন একটি সমস্যা যেটির সমাধানও প্রায় বিনামূল্যেই করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন একটু সচেতনতা।


পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন