লালমনিরহাটে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে ৫৫ শ্রমিকের মৃত্যু

  19-01-2018 11:35AM


পিএনএস ডেস্ক: ভাঙা পাথরের গুঁড়া বাতাসে মিশে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শ্রমিকদের শরীরে প্রবেশ করছে। তারা আক্রান্ত হচ্ছেন সিলিকোসিস রোগে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে অকাল মৃত্যুবরণ করছেন। আর লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রায় পাঁচ শতাধিক মেশিনে ভাঙ্গা হচ্ছে পাথর।

গত ৯ বছরে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৫৫ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরও মারা গেছে রাজু মিয়া ও হামিদুল হক নামের দুই শ্রমিক। বর্তমানে প্রায় শতাধিক শ্রমিক এই রোগে আক্রান্ত বলে স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, বুড়িমারী স্থলবন্দর জুড়ে পাথর ভাঙা মেশিনের শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। প্রায় পাঁচ শতাধিক মেশিনে চলছে পাথর ভাঙার কাজ। আর পাথর ভাঙার গুঁড়া নাক-মুখ দিয়ে শ্রমিকদের শরীরে প্রবেশ করছে। তবে এ কাজ করার সময় মাস্ক পরার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে অনেক শ্রমিকের ফুসফুস সিলিকোসিসে আক্রান্ত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের আগস্ট মাসে পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রথম এ রোগ ধরা পড়ে। ওই বছরেই এ বিষয়ে একটি সেমিনার করেছিল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস্ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। তাদের তথ্য মতে সে সময়ে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল শতাধিক। তার মধ্যে অনেকে শ্রমিক মারা গিয়েছেন।

২০১৬ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরো ৩০ জন সিলিকোসিস রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয় শ্রমিক সর্দার ও বুড়িমারী স্থলবন্দর পাথর ভাঙা শ্রমিক সুরক্ষা কমিটির সভাপতি মমিনুর রহমান জানান, রাজু ও হামিদুল দীর্ঘদিন থেকে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা এ রোগের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি। তিনি আরো জানান, তাদের অধীনে রাজুসহ ২০ শ্রমিক পাথর ক্রাসিং (ভাঙা) কারখানায় ছয় বছর ধরে কাজ করছেন। তারা সবাই এই রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ১৬ শ্রমিক মারা গেছেন। গত বছর রাজুসহ মারা যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ জনে।

বুড়িমারীর আরেক শ্রমিক সর্দার মতিউল ইসলাম জানান, তার অধীনে ১৬ শ্রমিক পাথর ভাঙার কাজ করেন। তারাও সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ফতে আলী, নুরুজ্জামান, তবিবর রহমান, মজিবর, আব্দুর মালেক, আব্দুর রশিদ, নুর ইসলাম, ওসমান গনি ও হামিদুলসহ ১১ শ্রমিক মারা গেছেন। তিনিসহ আরো পাঁচজন এ রোগে ভুগছেন। এভাবে গত ৯ বছরে বুড়িমারী স্থলবন্দরে ৫৫ শ্রমিক সিলিকোসিস রোগে মারা গেছেন বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী জানান, শ্রমিকদের সিলিকোসিস রোগের হাত থেকে বাঁচাতে নানা ধরনের ক্যাম্পেনসহ প্রশাসনেরও সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। তবে পাথর গুঁড়া করার আগে তা না ভেজানো ও মাস্ক না পরে কাজ করায় শ্রমিকরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে সিলিকোসিস রোগে একবার কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সুস্থ করে তোলা প্রায় অসম্ভব। ফলে ওই রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর কুতুবুল জানান, সিলোকোসিস রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের অকাল মৃত্যুর ঘটনা খুবেই দুঃখজনক। তবে বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথর ক্রাসিং মেশিনগুলোয় শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ তৈরিতে শ্রম মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এক্ষেত্রে পাথর গুঁড়া করা মেশিনের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সিলোকোসিস রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন