কেন খাবেন পুষ্টিতে ভরপুর আনারস?

  24-02-2018 05:35PM

পিএনএস ডেস্ক :আনারস একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল। সৌন্দর্যের জন্য এ ফলকে ‘স্বর্ণকুমারী’ বলে অ্যাখায়িত করা হয়। আমাদের দেশে অনেক স্থানেই আনারসের চাষ হয়।

পুষ্টি উপাদান: পুষ্টিগুণে আনারস অতুলনীয়। প্রতি ১০০ গ্রামে আনারসে পাওয়া যায় ৫০ কিলোক্যালরি শক্তি। এতে ভিটামিন-এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ১০০ গ্রাম আনারসে ০.৬ ভাগ প্রোটিন, ০.১২ গ্রাম সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১৩.১২ গ্রাম শর্করা, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মি. গ্রাম ভিটামিন-২, ভিটামিন- সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ গ্রাম, আঁশ ১.৪ গ্রাম এবং ১.২ মিলি গ্রাম লৌহ রয়েছে।

ব্যবহার: আমাদের দেশে সাধারণত পাকা আনারস খাওয়া হয়। কেটে পিস করে অথবা জুস করে। পাকা আনারস স্বাদে মিষ্টি। তবে কাঁচা আনারসের চাটনি তৈরি করা যায়। কাঁচা আনারস টক হয়। আনারস টিনজাত ফল হিসেবেও সংরক্ষণ করা হয় এবং এই ধরনের আনারসের চাহিদা বিদেশের বাজারে খুব বেশি।

আনারস দিয়ে জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ, রস প্রভৃতি তৈরি হয় এবং তা বিদেশে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এছাড়া আনারস থেকে কোনো কোনো সময় অ্যালকোহল ভিনেগার, সাইট্রিক এসিড উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্নায় ও সালাদে আনারসের ব্যবহার তো রয়েছেই।

ঔষধি গুণ: শুধু পুষ্টিগুণেই সমৃদ্ধ নয় আনারস। আছে এর বহুমুখী ঔষধিগুণ।

কোষক্ষয় রোধ: আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যেগুলো শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে অথেরোস্ক্লেরোসিস, হার্ট রোগ, বাত এবং বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।

সর্দি-কাশিতে সুরক্ষা: আনারসে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং bromelain। যা জীবাণুর সংক্রমণ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের পাশাপাশি আনারস খেলে সর্দি-কাশি থেকে কার্যকরভাবে আরোগ্য লাভ সহজ হয়।

হাড় শক্ত করে: প্রচুর পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে আনারসে। যা হাড় ও কানেক্টিভ টিস্যুকে করে শক্তিশালী। এক কাপ আনারসের জুস আমাদের দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের ৭৩ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম।

স্বাস্থ্যকর মাড়ি ও দাঁত: আনারস খেলে ভালো থাকবে আপনার দাঁতের মাড়ি আর দাঁত দুটোই। আর ভুলে যাবেন না এতে আছে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য উপকারী।

কৃমিনাশক: আনারস কৃমিনাশক। কৃমি দূর করার জন্য সকালে খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত। তবে অবশ্যই এ্যাসিডিটি থাকলে খালি পেটে আনারস ক্ষতি করতে পারে।

রক্ত পরিষ্কার করে: দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে। ফলে রক্ত শোধনে এই ফলের ভূমিকা রাখে।

হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়ায়: আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। এছাড়াও হৃৎপিণ্ডের নানা রকম অসুখে থেকে আনারস দেয় সুরক্ষা।

ত্বকের যত্নে: আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। ত্বকের অসুখ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, মাড়ির যে কোনো অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আনারস। দেহের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এছাড়াও আনারসের প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়।

উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: আপনি যদি উচ্চরক্ত চাপে ভুগছেন? এবং এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছেন? তবে আনারস আপনার জন্য হবে আদর্শ খাদ্য। কারণ, আনারসে আছে উচ্চ পরিমাণে পটাসিয়াম এবং কম পরিমাণে সোডিয়াম, যা আপনার রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

রোগীর পথ্য হিসেবে: আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শক্তি জোগায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিসজাতীয় অসুখগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। হজমে সাহায্য করে। সঙ্গে শরীরের অন্য অঙ্গগুলোকেও ভালো রাখে। দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহয়তা করে আনারস। আবার আনারস ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। যে কোনো অসুস্থতার পরে মুখে রুচির জন্য আনারস খাওয়া যেতে পারে।

মোট কথা, দেহের পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ-সবল ও নিরোগ রাখার জন্য আনারস অতুলনীয় এবং কার্যকরী একটি ফল। বাজার থেকে ফরমালিন মুক্ত টাটকা আনারস কিনে এনে নিয়মিত খান।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন