বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা

  14-12-2018 12:56AM



পিএনএস ডেস্ক: দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করতে এমডি/এমএস/এমফিল/ডিপ্লোমা/এফসিপিএস/এমআরসিপি বিভিন্ন ডিগ্রির দ্বার উন্মোচিত আছে। চিকিৎসকরা এমবিবিএস পাস করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে- অনেক পথ মাড়িয়ে, অনেক ত্যাগ তিথিক্ষার বিনিময়ে এই ডিগ্রি অর্জন করে থাকেন। যদিও এদের সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশ চিকিৎসকই এই সমস্ত ডিগ্রি অর্জন করতে না পেরে শুধুমাত্র এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে চাকরি করে সারাজীবন গ্রামেগঞ্জে কাটিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে থাকেন।

উল্লিখিত পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রির মধ্যে এমডি/এমএস/এমফিল/ডিপ্লোমা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদান করা হয়। এই ডিগ্রিগুলো রোগনির্ণয় তথা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাস্তবধর্মী হওয়ায় চিকিৎসক ও রোগীদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পারবেন- এইসব ডিগ্রিধারী চিকিৎসক বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে রোগীদের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে বিশ্বখ্যাতিও অর্জন করে চলেছেন।

অপরদিকে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান বিসিপিএস প্রদত্ত এফসিপিএস ডিগ্রিধারীদের আমরা ছোট করে না দেখলেও, রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাস্তবতা থেকে বেশ দূরে থাকায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে। তাছাড়াও পরীক্ষাপদ্ধতি তাত্ত্বিকজ্ঞানে ভরপুর করায় নবাগত চিকিৎসকরা এই ডিগ্রি অর্জনে খুব একটা আগ্রহী হচ্ছেন না।

ব্যবহারিক জ্ঞানের প্রতি জোর কম দেয়া ও তাত্ত্বিকজ্ঞানের প্রতি বেশি জোর দেয়ার কারণে এই ডিগ্রি অর্জন করতে যেয়ে ফেল করা চিকিৎসকের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে এক জটিল আকার ধারণ করায় চিকিৎসকরা হতাশায় ভুগছেন- অনেকে মাঝপথ থেকে ডিগ্রি অর্জন করে ছেড়ে দিতেও বাধ্য হচ্ছেন।

আবার যারা কষ্ট করে পাস করেন- তারাও ব্যবহারিক জ্ঞানে কাঁচা থাকায় আবার এমডি/এমএস কোর্সে ভর্তি হন। এভাবে তাদের জীবনের অধিকাংশ মূল্যবান সময়ই নষ্ট হয়ে যায়। পাস করার পর এইসব চিকিৎসক না পারে নিজের বা সংসারের সময় দিতে- না পারে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কোনো অবদান রাখতে। পক্ষান্তরে এমডি/এমএস ডিগ্রি স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় এ ডিগ্রিধারী চিকিৎসকরা কেউই এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করতে চান না। তা ছাড়াও এ দেশে বসেই এখন আন্তর্জাতিক মানের রয়্যাল কলেজ অব লন্ডনের ডিগ্রি এমআরসিপি/এমআরসিএস ব্রিটিশ কাউন্সিলে বসে দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়/রাজশাহী ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও স্পেশালাইজড ইনস্টিটিউট থেকে হাতে কলমে শিক্ষাদানকারী এমডি/এমএস/এমফিল/ডিপ্লোমা করার সুযোগ থাকায় চিকিৎসকরা এফসিপিএস ডিগ্রি বিমুখ হয়ে যাওয়ায় বিসিপিএসর কর্মকর্তারা এমডি/এমএস ডিগ্রিধারীদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে এমডি/এমএস/এমফিল ডিগ্রি নিতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকদের এফসিপিএস/ডিগ্রি সম্পন্ন করে আসার একটা অশুভ প্রক্রিয়াই মেতে উঠেছেন।

ফলে এই ডিগ্রি অর্জন করতে একজন চিকিৎসককে ন্যুনতম ৪৫ থেকে ৫০ বছর লেগে যাবে। এতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ডাক্তারি বা সংসার জীবন করা হয়ে উঠবে না। বরং ডিগ্রি করতে করতেই জীবনপ্রদীপ নিভে যাবে। অথচ পাশের দেশ ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মালয়েশিয়াসহ যেকোনো উন্নত দেশে ৩০ বছরের মধ্যেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার বাস্তবধর্মী শিক্ষা পদ্ধতি চালু আছে, ফলে তারা মেধা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে রোগীর সর্ব্বোচ সেবা দিতে পারে যা, এমডি/এমএস/এমফিল ডিগ্রি দ্বারাই এদেশের চিকিৎসা বিপ্লব করা সম্ভব।

এইভাবে ডিগ্রির সমন্বয় করার নামে চিকিৎসকদের উ”চশিক্ষা রোধ তথা জীবন ধংসের পায়তারা চলছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। বরং বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে আপনারা আপনাদের প্রদেয় ডিগ্রিকে আরও বাস্তবমুখী ও আধুনিকরণ করুন- আমরাও আমাদের ডিগ্রিকে প্রয়োজনে আধুনিকরণ করতে আরও সুনির্দিষ্ট রোগীবান্ধব শিক্ষাপদ্ধতি গ্রহণ করবো। শুধু মাত্র ডিগ্রির সমন্বয়ের ধোঁয়া তুলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করার পথ সংকুচিত করা থেকে বিরত থেকে বাংলাদেশের মেডিকেল সাইন্সকে বিশ্বমানের করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
লেখক: (অধ্যাপক ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু)
কার্ডিওলজিস্ট
মহাসচিব, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশান

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন