‘হয় মরব, নয় বাঁচব, কিন্তু মোদীকে ভারতবর্ষের রাজনীতি থেকে সরাব!’

  29-11-2016 03:48PM

পিএনএস ডেস্ক: দিনে নিদেনপক্ষে ঘণ্টাখানেক হাঁটা তার রুটিন। হনহনিয়ে এত দ্রুত হাঁটেন যে, পাল্লা দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান দলের তরুণ নেতারাও। তবু গত ছ’বছরে এ দৃশ্য কি দেখেছে বাংলা! সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে ধর্মতলার দিকে যখন এগোচ্ছেন, পিছনে হাজার হাজার সমর্থকের মিছিল। মুখের কাছে উঁচিয়ে ধরে রেখেছেন লাল-সাদা রঙের মাইক। গলার রগ ফুলিয়ে স্লোগান তুলছেন, ‘‘মোদী সরকার হায় হায়!’’ চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ঘাম। আঁচল দিয়ে কোনওমতে তা মুছে নিয়েই নতুন হুঙ্কার ছাড়ছেন, ‘‘তানাশাহি নেহি চলেগা!’’

ক্ষণিকের জন্য মনে হতে পারে এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো মুখ্যমন্ত্রী নন! যেন অতীতের সেই বিরোধী নেত্রী, মমতা! সেই পুরনো ফর্ম। সেই মেজাজ! শুধু আক্রমণের নিশানা বদলে গিয়েছে মাত্র! এ বার তাঁর টার্গেট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লির ক্ষমতা থেকে তাকে গদিচ্যুত করা। এবং সেই লক্ষ্যে তিনি যে কতটা ‘সিরিয়াস’, তা বোঝাতে তৃণমূল নেত্রী এমনকী এ-ও জানিয়ে দিলেন, ‘‘হয় মরব, নয় বাঁচব। কিন্তু মোদীকে ভারতবর্ষের রাজনীতি থেকে সরাব!’’

বস্তুত, গত ৮ নভেম্বর প্মোদী নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর মুহূর্তেই বিরোধিতার স্বর তুলেছিলেন মমতা। পরে কেন্দ্রের এই ফরমান প্রত্যাহারের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে দু’বার দরবার করেন তিনি। দিল্লির যন্তর-মন্তরে মঞ্চ বেঁধে বিক্ষোভ-সভাও করেন। কিন্তু তৃণমূল যে সেটুকুতেই থামবে না, বরং আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াবে সোমবার কার্যত তা স্পষ্ট করে দিলেন দলনেত্রী।

নোট বাতিলের বিরোধিতায় এ দিন কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল। তার নেতৃত্ব দেন স্বয়ং মমতা। তার পর ডোরিনা ক্রসিংয়ের দশ বাই দশ মাপের বিক্ষোভ মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর বক্তৃতায় বুঝিয়ে দেন, কেন্দ্রের এই ‘তুঘলকি সিদ্ধান্তের’ বিরুদ্ধে এবার এসপার ওসপার করে ছাড়তে চান তিনি। মোদীকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দিয়ে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘এবার যন্তর মন্তরে নয়, ধর্না হবে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে।’’

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তার এই ক্রোধের প্রাথমিক কারণ হল, জনসাধারণের হয়রানি। মমতার কথায়, ‘‘এটিএমে টাকা নেই। চাষিদের ঘরে খাবার নেই। হকারের ঘরে খাবার নেই। এমনকী, মাস পয়লায় মানুষের অ্যাকাউন্টে মাইনে ঢুকলে তা কীভাবে তোলা যাবে, তা-ও কেউ জানেন না।’’ প্রধানমন্ত্রী যখন ‘ক্যাশ লেস’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলছেন বা মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেনের প্রস্তাব দিচ্ছেন, তখন পাল্টা কটাক্ষ করে মমতা এ-ও বলেন, ‘‘মানুষের খাবার পয়সা নেই, মোবাইল নিয়ে কি চুমু খাবে?’’ আর এ সব কথার ফাঁকে ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে কখনও মন্তব্য করেন, ‘‘সারা দেশকে রসাতলে পাঠিয়ে মোদীবাবু এখন ঘুমোচ্ছেন।’’ কখনও আবার খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘উঠল বাই তো, স্বর্গে যাই।’’

রাজনীতিকদের একটা অংশ বলছেন, শুধু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণেই মমতার এই জেহাদ নয়। বরং তাঁদের মতে, দিদির নজর এখন দিল্লির দিকে। একে তো সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উত্তীর্ণ করার জন্য তাঁর নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। আগামী লোকসভা ভোটের পর কেন্দ্রে যদি মিলিজুলি সরকার গঠনের পরিস্থিতি হয় ও তৃণমূল যদি ৪০টির মতো আসন দখল করতে পারে, সে ক্ষেত্রে মমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তিনি আঁচ করছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত শেষ অবধি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যুমেরাং হতে পারে। মাস পয়লায় মাইনের টাকা পেতে নাজেহাল হতে পারেন মানুষ। কাজ না পেয়ে শ্রমিক-মজুরদের মধ্যে বিদ্রোহের স্বর উঠতে পারে। তাই সবার তুলনায় স্বর চড়িয়ে রেখে দিল্লির রাজনীতিতে এগিয়ে থাকতে চাইছেন মমতা।

দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই করে ইদানীং নবান্নকে বেজায় অর্থসঙ্কটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে কেন্দ্র। মমতা বুঝতে পারছেন, কেন্দ্রের সরকারে তৃণমূলের কোনও প্রভাব বা অংশীদারি ছাড়া এই সঙ্কট থেকে সুরাহা পাওয়া মুশকিল। ফলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এমনিতেই অস্ত্র সন্ধানে নেমেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। নোট বাতিল কিছুটা মেঘ না চাইতেই জলের মতো সুযোগ এনে দিয়েছে তার সামনে। এ দিন ধর্মতলায় সভা শেষ করেই লখনউ রওনা হয়ে যান মমতা। কাল লখনউ-র গোমতীনগরে তার সভা করার কথা। আর পরশু তিনি প্রতিবাদ সভা করবেন পটনায়।

তবে প্রশ্ন উঠেছে মোদী বিরোধিতায় এতটা উগ্র অবস্থান নেওয়া কি তৃণমূলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে না? কারণ, সারদা ইত্যাদি মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। সেই তদন্ত নতুন করে গতি পেলে তাদের সমস্যা হবে না? সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে সিবিআইয়ের তরফে ইতিমধ্যেই একাধিক তৃণমূল নেতাকে নোটিস ধরানোও শুরু হয়েছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে আয়কর বিভাগও। তবে কেন্দ্রের তরফে যে এই পদক্ষেপ করা হতে পারে তা আঁচ করে এ দিন প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন মমতা। তার কথায়, ‘‘প্রতিবাদ করলেই ওরা এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখায়। কী খাবেন, কী পরবেন, কী গান গাইবেন, সব ব্যাপারে মোদীর অনুমতি চাই। না হলেই সিবিআই বা ইডি পাঠিয়ে জেলে পাঠাবে।’’ বিজেপি অবশ্য তাকে পাল্টা খোঁচা দিতে ছাড়েনি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘উনি কেন এত লাফালাফি করছেন, মানুষ বুঝতে পারছে। যাদের কালো টাকা রয়েছে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে তারাই ছটফট করছেন বেশি!’’ সূত্র: আনন্দবাজার

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন