মাচুপিচুর পেছনের ১০ রহস্য

  01-12-2016 04:53PM


পিএনএস ডেস্ক: আন্দিজ পর্বতমালার ওপর অবস্থিত ইনকা সভ্যতার নিদর্শন মাচুপিচু নগর ধ্বংসাবশেষটি আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯১১ সালে। ইন্ডিয়ানা জোনস ধরনের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিরাম বিংহাম এটি আবিষ্কার করেন। স্থানীয় এক বালক তাকে ১৪৫০ সালের দিকে নির্মিত এই নগরটিতে নিয়ে যায়। পরিত্যক্ত শহরটির সৌন্দর্য্য এবং মহিমা দেখে তিনি বিস্মিত হন।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর ১৯১৩ সালের এপ্রিল ইস্যুতে বিংহাম তার এই আবিষ্কারের কথা সবাইকে জানান। এরপর থেকেই পর্যটক, গবেষক, অভিযাত্রীরা এর রহস্য উদঘাটনে তৎপর হন। অথবা এর প্রাচীন মহিমা উপভোগ করতে যান।

তবে এখনো মাচুপিচু এবং নির্মাতাদের ব্যাপারে অনেক রহস্যই অনুদঘাটিত রয়ে গেছে।

আপনিও পেরুর এই রহস্য উদঘাটনে যাত্রা শুরু করার আগে এখানে এ সম্পর্কিত কিছু রহস্য তুলে ধরা হলো:

১. এটি কখনো আবিষ্কৃত হবে তা ভাবা হয়নি
ইনকারা ভয়ে ছিল যে স্প্যানিশরা মাচুপিচু লটু করবে। ফলে তারা শহরটি নির্মাণের ১০০ বছর পরে ১৫৩২ সালে এটি ত্যাগ করে। আর স্প্যানিশদের সম্ভাব্য লুটপাট ঠেকাতে পথের জঙ্গল আগুনে পুড়িয়ে দেয়। যাতে পুনরায় গাছপালা ওঠার পর পাহাড়ে উঠার আগের পথটি ঢেকে যায়। তাদের ওই পরিকল্পনা কাজে লাগে এবং স্প্যানিশরা কখনো মাচুপিচু আবিষ্কার করতে পারেনি। ১৯১১ সাল পর্যন্ত এটি লুকোনো ছিল।

২. বিংহাম ভুল শহরটি আবিষ্কার করেছেন
প্রথমে বিংহাম ভেবেছিলেন তিনি ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া শহর ভিলকাবাম্বা আবিষ্কার করেছেন। যা ইনকাদের একটি শক্তিশালি দূর্গ যেখানে থেকে ইনকা শাসকরা স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে এক বছর ধরে যুদ্ধ করেছেন। তবে ৫০ বছরের বিতর্ক শেষে বিংহাম ভূল বলে প্রমাণিত হন। জিনি সেভয় ১৯৬৪ সালে প্রমাণ করেন যে, সত্যিকার অর্থে ইনাকাদের হারিয়ে যাওয়া শহরটি ছিল এসপিরিতু পাম্পা, যা মাচুপিচুর পশ্চিমে অবস্থিত।

৩. বিংহাম ভেবেছিলে মাচুপিচু “ভার্জিন অফ দ্য সান” নামের একদল নারীর বাসস্থান
বিংহাম বিশ্বাস করতেন তিনি ইনকাদের পূর্বপুরুষদের জন্মস্থান পৌরানিক টাম্পু-টোকো আবিষ্কার করেছেন। তার বিশ্বাস ছিল মাচুপিচু ছিল “ভার্জিন অফ দ্য সান” নামের একদল স্বর্গীয় নারীর বাসস্থান যাদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন একদল পাদ্রি। যারা সূর্য দেবতার পুঁজা করতেন। কিন্তু পরে এই তত্ত্ব ভুল বলে প্রমাণিত হয়।

৪. মাচুপিচু হয়তো মূলত একটি অবসর বিনোদন শহর ছিল
একদল প্রত্নতাত্মিকের মতে মাচুপিচু রাজপরিবারের অবসর বিনোদনের জন্য বানানো হয়েছে। জন রোয়ে, রিচার্ড বার্গার এবং লুসি সালাজার উদঘাটন করেন, ইনকা শাসক পাচাকুটি ইনকা ইউপানকুয়ি মাচুপিচু শহরটি নির্মাণ করেন। ধারণা করা হয় তিনি হয়তো সুজকো শহরের ধকল থেকে নিস্তারের জন্য শহরটি তৈরি করেন।

৫. অবিশ্বাস্যভাবে বিচিত্র শহর
আন্দিয়ান সভ্যতা বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান বৌর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিককে বলেন, এমন প্রচুর সংখ্যক প্রত্নতাত্মিক নিদর্শন রয়েছে, মাচুপিচুতে শুধু ইনকারাই বাস করতেন না। গ্রামে যেহেতু কোনো বাজার ছিল না প্রত্নতাত্মিকরা ওই অঞ্চলজুড়ে থাকা লোকদের কাছ থেকে এমন সব সিরামিক আবিষ্কার করেছেন যেগুলো থেকে প্রমাণিত হয় নানা ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকেরা সেখানে বাস করতেন। অথবা অন্তত শহরটির ওপর দিয়ে অতিক্রম করতেন।

৬. ইনকারা ছিলেন দক্ষ পাথরশিল্পী
মাচুপিচুর বিশাল কাঠামো নির্মিত হয়েছিল চাকা, লোহার হাতিয়ার বা এমনকি মর্টার ব্যাতীত। নিখুঁতভাবে পাথর কেটে কেটে জোড়া লাগিয়ে শহরটি নির্মাণ করা হয়। এই পদ্ধতির নাম “অ্যাশলার ম্যাসনরি”। পেরু একটি ভুমিকম্পপ্রবণ এলাকা। আর মাচুপিচু দুটি ফল্ট লাইনের বা ভুমিকম্পের উৎপত্তি স্থলের ওপরে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও তা অক্ষত ছিল।

৭. শহরটির বেশিরভাগ অবকাঠামো লুকানো
এর বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শনের বেশিরভাগই মাটির নিচে লুকিয়ে রয়েছে। শহরটির ৬০ শতাংশই পাহাড়ি উপত্যকাজুড়ে মাটির নিচে চাপা পড়েছে।

৮. অন্তত দুটি গোপন মন্দির আছে
“চন্দ্র মন্দির” এবং “সূর্যের গুহা” সহজেই নজর এড়িয়ে যায়। চন্দ্র মন্দিরে যেতে হলে হুয়ায়না পিচ্ছু পাহাড়ের ওপরে এক ঘন্টা ধরে একটি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। সূর্যের গুহা মাচুপিচুর কেন্দ্রেস্থলে লুকানো।

৯. এটি হয়তো কোনো একটি তীর্থযাত্রার রুটের অংশ ছিল
প্রথমদিকের অনেক আবিষ্কারক ভাবতেন মাচুপিচু ছিল একপিট নির্জন কেল্লা। আধুনিক প্রত্নতাত্মিকরা বিশ্বাস করেন এটি একটি প্রাচীন তীর্থযাত্রার রুটের অংশ। দুর্ভাগ্যক্রমে, স্প্যানিশরা চলে আসায় আর রুটটি সম্পন্ন করা হয়নি।

১০. মাচুপিচুতে এখনো অনেক প্রত্নতাত্মিক নিদর্শন আবিষ্কার ঘটে চলেছে
২০১৪ সালে ফরাসি আবিষ্কারক থিয়েরি জ্যামিন মাচুপিচুতে একটি নতুন দরজা আবিষ্কার করেন। তার বিশ্বাস দরজাটি মাচুপিচুর নির্মাতা ইনকা শাসক প্যাচাকুটি ইনকা ইউপানকুয়ির সমাধি চেম্বারের প্রবেশ পথ ছিল। পেরুর সরকার অবশ্য দরজাটি খুলতে দিচ্ছেন না। কারণ এতে প্রত্নতাত্মিক নিদর্শনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলেই তাদের আশঙ্কা। সূত্র: ফক্স নিউজ

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন