ভারত সরকারের প্রতি ডঃ জাকির নায়েকের সাম্প্রতিক সম্পূর্ণ চিঠি

  02-12-2016 11:57AM


পিএনএস ডেস্ক: “শেষ পর্যন্ত আমিই ঠিক। আমি আর IRF এর প্রতিষ্ঠা নিষেধাজ্ঞার জন্যই। যদিও কিছু লোক বলে আমি নাকি Muslim card খেলছি, কিন্তু এটা এখন প্রমাণিত হয় যে IRF ব্যান করার সিদ্ধান্তটি কয়েক মাস আগেই নেওয়া হয়েছে এবং এটি নেহাতই সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্ত। তদন্ত ও রিপোর্ট জমা হওয়ার আগেই ব্যান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। IRF ব্যান হওয়ারই ছিল আগের থেকে। জানিনা এরুপ আমার ধর্মের জন্য না অন্য কোনো কারণে, তবে কোনো কিছুতেই কিছু যায় আসে না। কিন্তু যেটা আসল ব্যাপার তা হল, আমার ২৫ বছরের সম্পূর্ন ভাবে আইনানুগত কাজ ব্যান করা। এবং এদেশের জন্য এটাই সব থেকে দূর্ভাগ্যের বিষয়।

এটি অবশ্যই ভারতের ইতিহাসে একটি অন্যান্য/ অদ্বিতীয় ব্যান-যেটা করা হয়েছে কোনোরুপ প্রশ্ন বা বিশ্লেষণের সুযোগ না দিয়ে, না একটা সুযোগও দেওয়া হয়নি। ব্যাপারটি জানার জন্য না কোনো বিজ্ঞপ্তি, না তলব, না কোনোভাবেই আমার সংগে যোগাযোগ করা হয়েছে!

আমি প্রস্তাব রেখেছিলাম তদন্তে সহায়তার, কিন্তু তাও গ্রহণ করা হয়নি। আমার কি অন্যায় তা না জানিয়ে সম্পূর্ণ তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু কেন করা হল তাহলে, তদন্তে আমার উপস্থিতি আমাকে নির্দোষ প্রমাণিত করত, যেটা সরকার গ্রহণ করেনি।

আমার উপর নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে আমাকে কোনোরূপ এমনকি একটি প্রশ্নও না করে। ব্যক্তিগত ভাবে কিছু করার জন্য আমার কাছে আইনের পথ ছাড়া এখন আর কোনো রাস্তাই নেই। এটা পরিষ্কার যে, তাদের উদ্দেশ্যই ছিল – যে ভাবেই হোক আমাকে সংশ্লিষ্ট করা, এবং আমি সেটার বিরোধীতা করবই।

সরকারের দৃষ্টিকোন থেকে, সময়টা এর থেকে আর ভালো হত না। নোট বাতিলের চরম ব্যর্থতার মাঝামাঝি সময় IRF ব্যানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমি বিস্মিত হবো না বলতে যে, এই সিদ্ধান্ত মিডিয়া গুলিকে বিভ্রান্ত করার জন্য যে দেশে কি হচ্ছে।

জনগণ যখন সাধারণ সুযোগ-সুবিধা, ব্যবসা-বানিজ্য থেকে বঞ্চিত, এমন কি কিছু মানুষ যখন পয়সার অভাবে ক্ষুধানিবৃত্তি করতে অসমর্থ। সত্যিই কতটা নিখুঁত সময় নির্ণয়।

নিষেধাজ্ঞার সমর্থনে যা যুক্তি দেখানো হয়েছে যে আমি হিংস্রতাকে উদ্দিপিত করছি বিবৃতির মাধ্যমে। আমি এখনো জোর দিয়ে বলতে চাই যে, আমি সমস্ত বিবৃতির ক্ষেত্রেই শান্তির উপর জোর দিয়েছি এবং হিংস্রতাকে তিরস্কার করেছি যে কোনো ভাবেই। কার্যত, আমি কিছু সংখ্যক লোকের মধ্যে একজন যে সর্বসমক্ষে হিংস্রতা ও সন্ত্রাসবাদের (state sponsored) বিরোধিতা করি।

এই ব্যাপার গুলোর যথোচিত কোনোরূপ গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।

সমস্ত প্রশ্ন এবং অভিযোগের উত্তর কয়েক বছর ধরে প্রায় অনেকবারই দেওয়া হয়ে গেছে জনগন ও সংবাদ মাধ্যমের কাছে। কেন বেশিরভাগই বিব্রত হয়নি সমস্ত প্রশ্ন উত্তর পর্ব দেখে? তারা শুধু কিছু সামান্য দেখেছে বা দেখেছে কোনো ভেজাল ভিডিও এবং তার উপর দাঁড়িয়ে মতামত দিয়েছে।

সাধারণ লোককে বাদ দিয়ে আমি চেয়েছিলাম পেশাদারিরা (professional) তদন্ত করুক। তারা যদি সেটা করত, এটা কোনো ইস্যুই হত না। কিন্তু আমি মনে করি, এটা কোনো পরিকল্পনা ছিল না, বরং এটা ছিল নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা কোনো তদন্ত ছাড়াই।

সম্ভবত UAPA এর মত কঠোর আইন এখানে প্রয়োগ করা হয়েছে। এইরকম IRF এর মতো একটি সংস্থার উপর। ধর্মকে হিংস্রতার সমতুল্য করা হয়েছে যখন কিনা অনেক সংখ্যক নেতার বেপরোয়া আচরণকে ক্ষমা করা হয়েছে। রাজেশ্বর সিং, যোগী আদিত্যনাথ, সাধ্বী প্রাচী, যারা উত্তেজক উক্তিগুলি করেছিল সাধারণ লোককে উত্তপ্ত করতে। সাম্প্রদায়িক ঘৃনায় শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিথার্তের জন্য আইনটি তাদের উপর প্রয়োগ করার কথা মনে হয়নি। রাজেশ্বর সিং ও ধর্ম জাগরণ মঞ্চ সম্প্রতি TV তে উক্তি দিয়েছে যে 31 December 2021 ই হবে ইসলাম ও খ্রিষ্টান ধর্মের জন্য শেষ দিন। ভারতে এবং তাদের সহযোগীরা শপথ নিয়েছে এটা বাস্তবিক করে তুলতে।

এরকম উক্তি যারা করছে, যেমন- সাধ্বী প্রাচী, যোগী আদিত্যনাথ ও আরো অনেক গোঁড়া। উচিৎ ছিল তাদের গ্রেফতার করে UAPA আইনে Trial করা। আইনগত প্রক্রিয়া দূরে থাক, সরকার না তাদের নিন্দা না বিদ্রুপ করেছে! এরকম কঠোর আইন শুধু মুসলিম দের জন্যই যারা কিনা সংবিধানিক নিয়মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে ধর্ম পালন ও প্রচার করেছে। এটাই কি উদ্দেশ্য UAPA এর যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কণ্ঠরোধ করা?

আমি প্রেরণা জানাই ভারতীয় মুসলিম ভাই ও বোনেদের- একমাত্র আল্লাহ, যে সত্ত্বা নির্ভিক যে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে।

আল্লাহ বলেন “…আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না।….”(৩-১২০)

মুদ্রারহিতকরণ এর চরম ব্যার্থতায় মোদি সরকারের IRF ব্যান, এইরুপ কার্যপ্রণালী উন্মাদগ্রস্থতায় পরিণত হয়েছে, নির্বোধ সিদ্ধান্ত হাটু হ্যাচকা কার্যের পাশাপাশি।

এটা বলার পরেও যে The Islamic International School ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, তারা স্কুল গুলির Bank Account গুলো Freeze করে দিয়েছে। দৈনন্দিন খরচ গুলি না চালাতে পারলে কী করে স্কুল গুলি বাঁচবে? আমি এখানে শত শত স্কুল ছাত্রের ভবিষ্যৎ এর কথা বলছি।

আমি জানি, যার বিশ্বের প্রায় ১০ কোটিরও বেশি অনুরাগীরা জানে আমি শান্তি, সহানুভূতি ও সুবিচারের প্রচার করেছি। আমি নিশ্চিত যে আমি কোনো আইন ভঙ্গ করিনি; আমি আরও বেশি নিশ্চিত যে যা হয়েছে তা গভীরভাবে অমঙ্গলকর। পুরো প্রক্রিয়া ও এজেন্সিকে কাজে লাগানো হয়েছে সরকার কর্তৃক পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্তকে বলবৎ করতে।

যে সরকার শপথ নেয় ভারতীয় সংবিধান সমর্থনের, যে সংবিধান অনুমতি দেয় ধর্ম প্রচার, পালন ও স্বীকার করতে। আসুন ধোকায় পড়ে না যাই যে এটা নেহাতই আমার প্রতি আক্রমণ বরং – এটা তার প্রতি আক্রমণ যাদেরকে আমি তুলে ধরি। এটা একটি আক্রমণ শান্তি, গণতন্ত্র ও সুবিচারের প্রতি।

সর্বশক্তিমানের অনুগ্রহে, আমার কাজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, ভারতে নিষিদ্ধ করাটা যদিও পীড়াদায়ক, আমার সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করবে না। আমি চিঠিতেই উল্লেখ করেছি যে অনেক মুসলিম প্রধান দেশ রেডকার্পেট পেতে দেবে আল্লাহ্র এই দাসের জন্য। আমি কতিপয় মুসলিম প্রধান দেশ থেকে চাওয়া অপেক্ষা বেশি সাড়া পেয়েছি। আমি আমার কাজকে চালিয়ে যাব এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব।

কিন্তু ভারত আমার দেশ আমার উৎপত্তি আমি যেকোরে হোক এর বিরোধ করব। স্রষ্টার কৃপায়, আমি সমস্ত রকম আইনানুগ ব্যবস্থা অনুসরণ করব কেননা ইসলাম আমাকে দেখিয়েছে অবিচারকে না মেনে চলার। এটা নিশ্চিত আমি এর বিরুদ্ধে লড়ব।

আমার ভারতীয় সাথীরা, একটা কথাই বলব – ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি এ আক্রমণ। মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। সরকার তাদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছে। এটার পরিবর্তন দরকার। এটির পরিবর্তন দরকার আমাদের প্রত্যেকের ভবিষ্যতের জন্য।

আমার বিচার ব্যবস্থার উপর বিশ্বাস রয়েছে এবং আমি দৃঢ় বিশ্বাসী যে সত্যেরই জয় হবে এবং মোদি সরকারের পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

পরিণতি যাই হোক না কেন, আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এরুপ প্রচেষ্টা আমার কাজকে দমন করার জন্য নিতান্তই আরোও বেশি করে সাহায্য করবে এটির বৃদ্ধিতে। যদিও ভারতীয় মুসলিমদের ভয় দেখাতে মোদি সরকার আইনের অপপ্রয়োগ করছে, এই কাজগুলিই আমাকে আমরন শান্তির ধর্ম প্রচারে শক্তি যোগাবে আরও বেশি করে।

আল্লাহ বলেন- “বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।” (সূরা বনী ইসরাঈল:81)
[চিঠিটি অনুবাদ করেছেন মুর্শিদ আলম ও তারিফুল ইসলাম]

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন