নতুন ভিসানীতি করল ভারত

  02-12-2016 02:07PM

পিএনএস: আরো বেশি পরিমাণে পর্যটক আকর্ষণ এবং বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে উদার ভিসানীতি অনুমোদন করেছে ভারত সরকার। নতুন ভিসানীতিতে দীর্ঘমেয়াদি মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী পর্যটন, বাণিজ্য, মেডিক্যাল ও কনফারেন্স ভিসা একটি মাত্র ভিসায় একীভূত করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে ভারতের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এর অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে ভারতের এই উদারীকৃত নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় ভিসাচুক্তি রয়েছে।

ফলে ভারতে নতুন ভিসানীতি অনুযায়ী ই-ট্যুরিস্ট ভিসা বা অন-অ্যারাইভাল ভিসা থেকে বঞ্চিত থেকেই যাচ্ছে বাংলাদেশ। অবশ্য বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি আরো সহজ করা হচ্ছে বলে গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

গতকাল ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা নতুন ভিসানীতিতে আরো আটটি দেশের জন্য ই-ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ভারত ১৫৮টি দেশকে ই-ট্যুরিস্ট ভিসা সুবিধা দিচ্ছে। ভারতের বিদ্যমান ভিসানীতিকে আরো উদার ও সরলীকরণ এবং যুক্তিসম্পন্ন করতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অন্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে পর্যটন, ব্যবসা ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাঁরা ভারতে যেতে চান তাঁরা সহজেই ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে আশা করা হচ্ছে, দেশটির অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং ভারত সরকারের ‘স্কিল ইন্ডিয়া’, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’সহ অন্যান্য জাতীয় উদ্যোগ সাফল্য পাবে।

নতুন ভিসানীতি অনুযায়ী, পর্যটক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিদেশি, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ বা চলচ্চিত্রে শুটিং করতে যাওয়া ব্যক্তিরা সহজেই ভিসার সুবিধা পাবেন। সেবা খাতের বাণিজ্য বাড়াতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছিল। নতুন ভিসানীতিতে সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে ভিসা দেওয়া হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ও মাল্টিপল-এন্ট্রি (এক ভিসায় একাধিকবার প্রবেশ) ভিসায় কোনো বিদেশি ভারতে স্থায়ীভাবে বাস করতে বা কাজ করতে পারবেন না।

কতিপয় দেশের জন্য এই নতুন ভিসা পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরে যেসব দেশ আছে, সেসব দেশের নাগরিকদের পর্যটন ও বাণিজ্য সুবিধা দিতে পাঁচ বছর মেয়াদি মাল্টিপল-এন্ট্রি সুবিধাযুক্ত ভিসা দেওয়া হতে পারে। নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী বিদেশিরা দীর্ঘমেয়াদি ভিসা পেলেও কেউ টানা ৬০ দিনের বেশি ভারতে থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া সফরকারীদের বায়োমেট্রিক তথ্য ও নিরাপত্তাজনিত সংশ্লিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে।

ভারতে বলা হয়ে থাকে যে বিদেশিদের আকৃষ্ট ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে বিবেচনায় ভারতের বছরে আট হাজার কোটি ডলার হাতছাড়া হয়ে যায়। ভারত শুধু চিকিৎসা, পর্যটন থেকেই লাভ করে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার, যা বেড়ে ২০২০ সালের মধ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ পরিমাণ অর্থকে দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত করতেই সরকার ভিসা পদ্ধতি সহজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান ভিসা সুবিধা : ভারতের নতুন ভিসা পদ্ধতির সুবিধা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। কারণ দুই দেশের মধ্যে আলাদা ভিসাচুক্তি রয়েছে। ২০১৩ সালের বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় ভিসাচুক্তির মূলনীতি হচ্ছে উভয় ভিসাপ্রার্থীদের একই রকম সুবিধা দেবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ভারতীয় নাগরিকদের যেসব ভিসা সুবিধা দেবে, ভারতও বাংলাদেশিদের সেসব সুবিধার ভিসা দেবে। বিদ্যমান চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর, পর্যটকদের জন্য ছয় মাস থেকে এক বছর, চিকিৎসা-পর্যটকদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী মেয়াদে এবং জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের (৬৫ বছর বা এর ঊর্ধ্বে) জন্য পাঁচ বছরের ভিসা দিয়ে থাকে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা পায় না।

বাংলাদেশের জন্য আরো সহজ হচ্ছে : এদিকে বাংলাদেশের জন্য ভারতের বিদ্যমান ভিসা সুবিধা আরো সহজ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। গতকাল হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ঢাকা-কলকাতা রুটে নভো এয়ারের ফ্লাইট উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।

শ্রিংলা বলেন, ভারতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভিসাপ্রক্রিয়া আরো সহজ করা হবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের সম্পর্কও অনেক দৃঢ়। বাংলাদেশি অনেকেই ভিসার জন্য আবেদন করেন। আমরা ভিসাপ্রক্রিয়া সহজ করার চেষ্টা করছি, যাতে বাংলাদেশিরা সহজে ভারত যেতে পারেন। আমরা ছয় মাস, এক বছরের জন্য ‘দীর্ঘমেয়াদি ভিসা’ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।” শিক্ষার্থী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে ভারতীয় হাইকমিশনার জানান।



পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন