কূটনৈতিক চালে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে বাধা কোথায়?

  03-12-2016 06:58PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : মিয়ানমারে মুসলমানদের কচুকাটা করছে সে দেশের সেনাবাহিনী। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গৌতম বুদ্ধের কথিত অনুসারী শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেয়া নামধারী কতিপয় ব্যক্তি। তারা মুসলমানদের ঘরে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারছে। কেউ বেরিয়ে এলে শিশু হলে জবাই করছে, মহিলা হলে ধর্ষণ করছে আর পুরুষ হলে গুলি করে মারছে।


যুগের পর যুগ মিয়ানমারে মুসলমানদের উপর এমন বর্বর পৈশাচিক আচরণ করছে সে দেশের সেনাবাহিনী। নতুন করে অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে সে দেশের আধিবাসী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অংশ মুসলমানদের দেশছাড়া করছে। যারা মাতৃভূমিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়, তাদের উপর নেমে আসছে ননামুখী নির্যাতনের স্টিম রোলার।


দেশটিতে চলমান এমন পৈশাচিক আচরণ মানবতাবাদীদের বিস্মিত করছে। দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে নিপীড়নের ধরন। ফলে বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে আশপাশের দেশে ফাড়ি জমাচ্ছে মিয়ানমারের আরাকানী মুসলমানরা। সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশেও আসছে তারা। যাচ্ছে চীনসহ অন্য দেশে। তবে বেশির ভাগই আসছে বাংলাদেশে। ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।


প্রতিদিনিই বাংলাদেশ সীমান্তে ঝড়ো হচ্ছে জীবন বাঁচাতে আসা মিয়ানমারে মুসলমানরা। তাদের চোখে-মুখে আতঙ্ক। স্বজন হারানোর বেদনায় যারা নীল। সামরিক জান্তার নির্র্মম নির্যাতনে যারা স্বজন ও সহায়-সম্বল হারিয়ে মাতৃভূমি ত্যাগে বাধ্য হয়েছে। তারা পৈতৃক জীবনটা বাঁচাতে বাংলাদেশে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই চায়।


মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মা-বোনসহ লাখ লাখ মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেদিন ভারত আমাদের আশ্রয় না দিলে, খাবার না দিলে, অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত না করলে হয়তো ইতিহাস ভিন্ন হতো। তাই ভারতের সেদিনের ভূমিকার জন্য এই জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের সে অবদানকে স্মরণ করে।


মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা মুসলমানরা যখন নির্যাতনের মুখে ঠিকতে না পেরে আমাদের দেশে আসছে তখন মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতি আমাদের নাড়া দেয়। যে স্মৃতি মনে করে দেয় সেদিন ভারত আমাদের আশ্রয়ই শুধু দেয়নি, করেছিল প্রয়োজনীয় অনেক কিছু। ভারতের সে শিক্ষা আজ আমাদের কাজে লাগানো সময়ের দাবি।


আজ যারা একমাত্র জীবন বাঁচাতে আমাদের দেশে আসছে, মানুষ হিসেবে তাদের সাময়িকভাবে হলেও আশ্রয় পাওয়ার মৌলিক অধিকার রয়েছে। মানবাধিকার বটেই। আর মুসলমান হিসেবে অন্য মুসলমান ভাইদের জন্য এই কাজটুকু করা নৈতিক দায়িত্ব। সে দায় থেকে না হোক, মানবিক মূল্যবোধ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারটি তো এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।


খুব মনে পড়ে, একটি ঐতিহাকি সত্য। আর সেটি হলো কাফেরদের অত্যাচারে মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরতকারীদের সঙ্গে কী সর্গীয় আচরণই না করেছিলেন মদিনার মুসলমানরা। শুধু আশ্রয়ই দেননি, সম্পদের পাশাপাশি দুজন স্ত্রী থাকলে একজনকে তালাক দিয়ে অন্য মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে পর্যন্ত দেন। আর মহানবীর উম্মত হয়ে মিয়ানমারের আক্রান্ত মুসলমানদের সাময়িকের জন্য একটু আশ্রয় দিতে এত কার্পণ্য কেন, ভেবে কূল পান না দীনদার, মানবতাবাদী ও মানবাধিকারে বিশ্বাসীরা।


অভিজ্ঞ মহল মনে করে, জীবন বাঁচাতে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়ে দ্রুত জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হোক। কূটচালের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে কোণঠাসা করা হোক। মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে মালয়েশিয়া সে দেশটির দুটি খেলা বাতিল করেছে। এভাবে চাপ সৃষ্টির সবদিক বাংলাদেশকে কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারকে সে দেশের মুসলমানদের মানবাধিকার রক্ষায় বাধ্য করার সব রকম উদ্যোগ নিতে বাধা কোথায়?



লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন