মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতার প্রতীক

  05-12-2016 05:54PM

পিএনএস ডেস্ক: খবরটি লেখার আগে বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করলাম একটা যুৎসই শিরোনাম দেওয়া যায় কি না? কিন্তু পারছি না। শিরোনাম লিখতে গেলেই কেবল মৃত শিশুদের নিষ্পাপ মুখচ্ছবি ভেসে উঠছে। এই দুঃসহ খবরের শিরোনাম কী হতে পারে? তাই প্রচলিত শিরোনাম বাদেই নিউজটি শুরু হলো।

ছোট কয়েকটি শিশু। বয়স হয়ত এক বছর, দুই বছর, ৪ বছর কিংবা একটু বেশি। এদের কেউ নিথর অবস্থায় শুয়ে কাদায়, কেউ শুয়ে মাটিতে। দুঃসহ যে দৃশ্য তা হলো একটা শিশু কাদামাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। শিশুটি মিয়ানমার থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে পালিয়ে আসা।

পালিয়ে আসা ওই মানুষদের জন্য কোনো আশ্রয় ছিল না কোথাও! পৃথিবীর কোথাও জীবিত অবস্থায় যখন আশ্রয় নেই তখন বুঝি কাদামাটিতেই শিশুটি খুঁজে নিল ‘অনিচ্ছুক’ এক আশ্রয়।

মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা অন্তত ১৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে গুলি করে রোববার রাতে হত্যা করেছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। উত্তর মংডু থেকে পালিয়ে আসা নৌকা ভর্তি লোকজনের ওপর রোববার গভীর রাতে অতর্কিত গুলি চালায় দেশটির সীমান্তরক্ষী ওই বাহিনী। খবর : রোহিঙ্গা ভিশন।

খবরে বলা হয়েছে ১৫ জনের বেশি লোককে হত্যা করা হয়েছে এবং দুই নৌকাভর্তি লোকজন নিখোঁজ রয়েছে। নিহতেরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছিলেন। নাফ নদীর তীর থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

উত্তর মংডুর এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই শিশুদের দোষ কী? কেন এই নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা। কেন এভাবে এই নিষ্পাপ শিশুদের লাশ দেখতে হচ্ছে?’

ভুক্তভোগী অধিকাংশ মানুষই উত্তর মংডুর রাইমবালি গ্রামের বাসিন্দা। ৯ অক্টোবর থেকে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে মংডুর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত ২৫০ জনকে হত্যা করেছে দেশটির বাহিনী যারা বিভিন্ন সময় নাফ নদী পার হওয়ার চেষ্টা করেছিল।

এতকিছুর পরও সেনাবাহিনী মিয়ানমারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তারা একের পর হত্যাকাণ্ড করছে, সাধারণ নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, গণধর্ষণ করছে। লোকজনকে অকারণে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই এলাকার সাধারণ মানুষদের ঘরবাড়িতে লুটপাট চালানো হচ্ছে। ফলে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ।

কাদায় ‍মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা শিশুটির মুখচ্ছবিতে ভেসে উঠছে শিশু আয়লান কুর্দির মুখ। সিরিয়ান এই শিশুটি বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে উঠেছিল। পুরো বিশ্বকে জাগিয়ে দিয়েছিল ওই একটি ছবি। ভূ-মধ্যসাগরের তীরে ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর ওই শিশুটির লাশ পড়ে ছিল।

সম্পাদকীয় নীতি মেনে পরিবর্তন ডটকম লাশের ছবি প্রকাশের বিপক্ষে। কিন্তু মিয়ানমার পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতেই লাশের ছবিগুলো প্রকাশ করা হল।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন