ট্রাম্প, তাইওয়ান ও চীন বিরোধের নেপথ্য কারণ

  05-12-2016 09:57PM

পিএনএস ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শুক্রবার ফোনালাপ করেন তখন তিনি এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ বিরোধ ও স্পর্শকাতর ইস্যুকে পুনরায় জাগিয়ে তোলেন। আর তা হচ্ছে তাইওয়ান ও মূল চীনের বিরোধ। বিশেষজ্ঞরা শঙ্কিত, এ ফোনালাপে বিরোধটি মীমাংসা করতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের মধ্যস্ততা ভূলুণ্ঠিত হতে পারে। আবার অনেকেই মনে করছেন, তাইওয়ান এর মধ্য দিয়ে চীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে যাচ্ছে। ফলে এ সময়ে প্রশ্ন ওঠছে চীন ও তাইওয়ানের বিরোধটি কেন এতো স্পর্শকাতর, এর নেপথ্য কারণটি, এ বিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং ফোনালাপটি কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ।

যা নিয়ে চীন-তাইওয়ান বিরোধ
আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ান ও চীন উভয়েই চীনকে নিজেদের দেশ বলে মনে করে। ফলে উভয় দেশেই একে অপরের ভূখণ্ডের মালিকানা দাবি করে। এতেই সমস্যার শুরু। যা কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ বিরোধের সূত্রপাত শুরু হয় ১৯২৭ সালে। যখন চীনজুড়ে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মাও জে দংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা ১৯৪৯ সালে জাতীয়তাবাদী সরকারকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধের অবসান হয়।
ওই সময় জাতীয়তাবাদী নেতারা পালিয়ে তাইওয়ান যান। এখনও ওই শক্তিই তাইওয়ান নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রাথমিকভাবে ওই সময় যুদ্ধ বন্ধ হয়ে পড়লেও উভয় দেশই নিজেদের চীনের দাবিদার হিসেবে উত্থাপন শুরু করে। তাইওয়ানভিত্তিক সরকার দাবি করে, চীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের দ্বারা অবৈধভাবে দখল হয়েছে। আর বেইজিংভিত্তিক চীনের সরকার তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে।

এ বিরোধের জের ধরে বলা যায়, চীনের গৃহযুদ্ধ সম্পূর্ণ অবসান হয়নি আজও। তারওপর তাইওয়ানের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিক অব চায়না। কমিউনিস্ট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন চীন সরকারের নাম পিপলস রিপাবলিক অব চায়না।

এ বিরোধটি স্নায়ু যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারকে চীনের বিধিসম্মত সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের জাতীয়তাবাদীদের স্বীকৃতি দেয়। ওই সময় এমনকি জাতিসংঘে চীনের আসনগুলো ছিলো তাইওয়ানেরই দখলে।
১৯৭০ দশকে এসে বিশ্ব বিভক্ত চীনকে গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে আসন ফিরে পায় চীন। তার পরের বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম. নিক্সন চীন সফর করেন। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পরিবর্তে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বের অপর দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়।
এরপর থেকে শুক্রবারের আগ পর্যন্ত কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিংবা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেননি বলেই মনে করা হয়।

কেন আলাদা হচ্ছে না চীন-তাইওয়ান?
আলাদা হওয়াটা উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত কঠিন। বেইজিং সরকার তাইওয়ানকে একত্রিত করার আশা কখনও ত্যাগ করেনি। আঞ্চলিক অখণ্ডতা সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বেইজিংয়ের জন্য বিশেষ স্পর্শকাতর। কারণ চীনের আশঙ্কা তাইওয়ানকে স্বাধীনতা দিলে তিব্বত ও অপর প্রদেশগুলোও স্বাধীনতা দাবি করতে পারে।
তাইওয়ান সরকার আছে উভয়মূখী সংকটে। দেশটি গণতান্ত্রিক হওয়ায় কমিউনিস্ট সরকারের অধীনস্ততা মেনে নিয়ে নাগরিকদের স্বাধীনতা খর্ব করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তাইওয়ান যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় তাহলে চীন যুদ্ধের হুমকি দিয়ে রেখেছে। ফলে তাইওয়ান চীনের অধিকার ছাড়তে পারছে না। কারণ এটা হবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া।

এ পরিস্থিতি ১৯৯২ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে উভয় দেশ একমত হয় এক চীনের বিষয়ে। যা মূল চীন ও তাইওয়ান নিয়ে গঠিন। কিন্তু উভয়েই এর আসল অর্থ অস্বীকার করতেও একমত হয়।

বেইজিং তাইওয়ানকে পুনরায় একত্রিত করতে অনড় কারণ তারা এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। কিন্তু তাইওয়ানে বিষয়টি বিতর্কিত। অনেকেই মনে করেন, চীনের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কের কারণে তাদের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যরা বিশেষ করে তরুণরা বেইজিংকে বিশ্বাস করেন না।

সময়ের পরিক্রমায় তাইওয়ানের নাগরিকরা নিজেদের তাইওয়ানিজ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন। যা চীনা জাতীয়তার চেয়ে আলাদা। গত বছর নির্বাচিত বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনসহ অনেক তাইওয়ানের নেতাই ১৯৯২ সালের অনানুষ্ঠানকি সমঝোতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তিনি নিজের এই অবস্থানকে তুলে ধরতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তবে তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে চান না। কারণ এতে বেইজিং মনে করতে পারে তাইওয়ান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে।

মিস সাই-এর সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প তাকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করে টুইট করেছেন। যা যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক চীন’ নীতিকে সমর্থনের চিরাচরিত অবস্থান লঙ্ঘন করেছে।

এক চীন নীতি কী?
তাইওয়ান ও বেইজিং একই অঞ্চলের মালিকানা দাবি করায় বিদেশি রাষ্ট্রগুলো উভয়কেই স্বীকৃতি দিতে পারে না। বেইজিং বাকি দেশগুলোকে এক চীন নীতি সমর্থনে চাপ দিয়ে আসছে। প্রায় সব দেশই বেইজিংয়ের এ অবস্থান মেনে নিয়েছে। চীনই এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সুনির্দিষ্ট এক চীন নীতি অনুসরণ করে। এর তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে: বেইজিংয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাইওয়ানকে রক্ষা ও সহযোগিতা করে গণতন্ত্রের পথ রক্ষা এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা।
আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৯ সালে তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ছিন্ন করলেও দেশটিতে অলাভজনক মার্কিন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার নাম আমেরিকান ইনস্টিটিউট। অনানুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিষ্ঠানটি দূতাবাসের কাজ করে। তাইওয়ানে গণতন্ত্রের বিকাশ এবং সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে। যদিও সম্প্রতি এ অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ কমে আসছে।

এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি না দিয়েই সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্র দেশটি যাতে স্বাধীনভাবে দেশ চালনা করতে পারে সে প্রয়াসও নিচ্ছিলো। এই নীতিকে বেইজিংয়ের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সুবিধা হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। বরং এটাকে মূল চীন ও তাইওয়ানের সঙ্গে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার নীতি ও যুদ্ধ এড়ানোর কৌশল হিসেবেই মার্কিনিরা মনে করে।

যুক্তরাষ্ট্র যখন গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ের নীতি গ্রহণ করলো তখন উভয় পক্ষই মার্কিন অবস্থানকে অগ্রাহ্য করার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি। ১৯৯৫ সালে তাইওয়ানি প্রেসিডেন্টকে ভিসা না দেওয়ার নীতি থেকে সরে আসে। বেইজিং ওই ঘটনাকে তাইওয়ানের স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করেছিল। এরপর তখন তাইওয়ান স্ট্রেইটে মিসাইল হামলা চালায়। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলটিতে দুটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে।
যদিও ওই সময় এ সংকট শান্তিপূর্ণভাবেই সমাধান হয়েছিল। তবে ওই ঘটনা প্রমাণ করেছিল স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও যুদ্ধের আশঙ্কা।

কেন ফোনালাপটি তাৎপর্য পূর্ণ?
শুক্রবারের ফোনালাপেই মার্কিন নীতি পরিবর্তন হয়ে যায়নি। তবে এটাকে নীতি পরিবর্তনের একটা ইঙ্গিত বলা যায়। চীন ও তাইওয়ান উভয় দেশই নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে শুরু করেছে।

ট্রাম্পের অন্তবর্তী দল এ ফোনালাপকে তাইওয়ানের রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে আলাপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাদের এ কথার অর্থ, ট্রাম্প সার্বভৌম রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে সাইকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ট্রাম্পও টুইটারে লিখেছেন, তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন।

সাইকে সার্বভৌম রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে স্বীকৃতি এবং স্বাধীন দেশ হিসেবেই বিবেচনা করছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান চীন ও তাইওয়ানকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। হয় তাদেরকে এই ইস্যুতে মার্কিন অবস্থানকে অস্বীকৃতি জানাতে হবে বা যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় উভয় পক্ষের দীর্ঘদিনের সমঝোতার সমাপ্তি ঘটাতে হবে অথবা তাইওয়ানের স্বাধীনতার স্বীকৃতি হিসেবে গন্য করতে হবে। যা যুদ্ধের উস্কানি হবে বলে বেইজিং ইতোমধ্যেই জানিয়েছে।

উভয় দেশই ফোনালাপের পর ট্রাম্পের বক্তব্যকে নীতি পরিবর্তনের চেয়ে ভুল হিসেবেই দেখতে চাইছে। যদিও ট্রাম্প তার কয়েকজন উপদেষ্টাদের কয়েকজন স্বৈরাচারী চীনের চেয়ে গণতান্ত্রিক তাইওয়ানের পক্ষে। তারা তাইওয়ানকে আংশিক কিংবা পুর্নাঙ্গ স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে।

চীন ও তাইওয়ান উভয়ে মার্কিন নীতি পরিবর্তনের ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফোনালাপটিকে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত অথবা ন্যূনতম উগ্র ট্রাম্প প্রশাসন যে রাতারাতি নতুন দিকে নীতি নিয়ে যাবে তা সম্পর্কে উভয় দেশই মোটামুটি নিশ্চিত।

চীনের তীব্র প্রতিক্রিয়া, ট্রাম্পের পাল্টা জবাব
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নীতি ভঙ্গ করে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি টেলিফোনে কথা বলার পর চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এরপর ট্রাম্প চীনকেই একহাত নিয়েছেন। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে চীনের সমালোচনা করে একাধিক পোস্ট করেন।

টুইটগুলোতে ট্রাম্প দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বেইজিংয়ের নীতি ও কর্মসূচিগুলোর সমালোচনা করেছেন। একটি টুইটে ট্রাম্প বলেছেন, চীন যদি জিজ্ঞেস করে যে তাদের মুদ্রার মান কমানো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঠিক আছে কি না কিংবা বড় ধরনের সামরিক কমপ্লেক্স বানায় তাতে আমাদের সম্মতি চাইলে উত্তর হবে না।

রবিবার ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ‘চায়না ডেইলি’তে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয় ভাষ্যে এক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ‘এটা আদতে তার (ট্রাম্পের) অন্তবর্তী দলের অনভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই না।’ এরআগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করায় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের তীব্র সমালোচনা করে চীন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং হি সাইয়ের ফোন করাকে ‘পাতি কর্মকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করেন।
একটি শিক্ষা বিষয়ক ফোরামে রাখা বক্তব্যে ওয়াং বলেন, আপন এর ফলে বহুদিন ধরে চলে আসা মার্কিন সরকারের ‘এক চীন নীতি’-র কোনও পরিবর্তন আসবে না।

ট্রাম্পের অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার এক টেলিফোন সংলাপে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ট্রাম্প ও ইং-ওয়েন।

এর আগে এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প জানিয়েছেন, নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই তাকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছিলেন। কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ব্যক্তির জন্য তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলাটা খুবই বিরল।

অস্ত্র বিক্রি করলেও তাইওয়ানের নেতার সঙ্গে কেন কথা বলা যায় না?
অনেক মার্কিন নাগরিকই বুঝতে পারেন না যে, ফোনালাপ ও ট্রাম্পের টুইট কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতই তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। এ অস্ত্র বিক্রিও বিতর্কিত। বিশেষ করে বেইজিংয়ের দিক থেকে। কিন্তু সমঝোতার নীতি মেনে চলায় এটা নিয়ে খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায় না বেইজিং।
তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় যাতে করে চীন কোনও অভিযান না চালায়। এটা শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং যুদ্ধের আশঙ্কাকে কিছুটা দূরে ঠেলে রাকে।
কিন্তু তাইওয়ানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি কিংবা অনানুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কোন্নয়ন সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। কারণ এতে এক চীন নীতি লঙ্ঘন হয়।

চীন বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন কেন?
সত্যিকার অর্থে ট্রাম্পের আগে সব মার্কিন প্রেসিডেন্টই তাইওয়ানকে সমর্থন ও সহযোগিতা মাত্রা কমিয়েছেন বা বাড়িয়েছে। বিশেষত অস্ত্র বিক্রির পরিমান কমিয়ে বা বাড়িয়েছে। কিন্তু তার একটা ব্যাখ্যা ছিলো যা চীন ও তাইওয়ান উভয় দেশই মেনে নিত। কারণ তারা জানত, এতে করে মার্কিন নীতির পরিবর্তন হচ্ছে না।
তবে ট্রাম্পের ফোনালাপ তা থেকে ভিন্ন এই কারণে যে, তিনি এখনও তাইওয়ান বিষয়ে তার নীতি কী হবে তা স্পষ্ট করেননি। বিশেষ করে ৩৭ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি মেনে আসছে তার প্রতি ট্রাম্পের অবস্থান। ফলে ট্রাম্পের ফোনালাপ এ নীতি পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাস্তবে হয়ত ট্রাম্প নীতির কোনও পরিবর্তন ঘটাবেন না।

এভাবে দেখতে এতে করে ট্রাম্প উস্কানিমূলক ও নীতি ভঙ্গের মতো কিছু করেননি। তবে তিনি একটি অনিশ্চিত ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি কেমন হবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে স্পর্শকাতর বিষয়ে সুক্ষ্ম তারতম্যের কারণে একাধিক রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। ইতোমধ্যে তাইওয়ান ও চীন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি জটিলতায় পড়েছে। ২০০৪ সালে এক চীন নীতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা কংগ্রেসের শুনানিতে বলেছিলেন, আমি এটা সংজ্ঞায়িত করতে পারিনি এবং সহজকরে কিভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করব সে বিষয়েও নিশ্চিত নই।
যুক্তরাষ্ট্রের এক চীন নীতি ব্যাখ্যা করা কঠিন হলেও তা ছিলো অনুমানযোগ্য। কিন্তু ট্রাম্পের অবস্থান অস্পষ্ট থাকায় নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও তাইওয়ান সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যা সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন