ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জমি অধিগ্রহণ বিক্ষোভে গুলি, নিহত ১

  18-01-2017 10:00AM


পিএনএস ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলায় বিদ্যুতের সাবস্টেশন তৈরি করার জন্য জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে মঙ্গলবার পুলিশ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময়ে গুলিতে আহত হয়েছেন চারজন, যার মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় মানুষদের দাবি।

পুলিশ বলছে তারা নয়, গুলি চালিয়েছে বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতিকারী - যাতে একজন মারা গেছেন।

ওদিকে গ্রামবাসীরা বেশ কয়েকটি পুলিশ গাড়িতে আগুন লাগিয়েছে আর ভাঙচুর করে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।

মানুষের বিক্ষোভের ফলে ওই বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের প্রকল্প বাতিল করার ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

ভাঙ্গড় এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই বিক্ষোভ চলছিল সাবস্টেশনটির বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় সরকারি বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থা পাওয়া গ্রিড কর্পোরেশন ওই সাবস্টেশনটি বানাচ্ছিল। কাজ অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষ বলেন, তাদের ভুল বুঝিয়ে জমি নেয়া হয়েছিল। তাই এখন জমি ফেরত দিতে হবে।

সোমবারও সেখানে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মানুষ- আর তারপরে রাতে আন্দোলনকারীদের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রামবাসীদের অভিযোগ সেই সময়ে পুলিশ গ্রামের মানুষকে হয়রানি করে। বেশ কিছু ঘরদোর ভাঙচুর করে পুলিশ। তার পরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ধৃত ওই নেতাকে।

সারাদিন ধরে মাঝে মাঝেই সংঘর্ষও হয় দুতরফে - পুলিশকে লক্ষ্য করে যেমন ঢিল, ছোঁড়া হয়, তেমনই তাদের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পুলিশও রবার বুলেট, কাঁদুনে গ্যাস চালায়। বিকেলের দিকে গ্রাম থেকে পুলিশবাহিনী বেরিয়ে আসার সময়ে আবারও সংঘর্ষ তীব্র হয়। পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, অন্তত চারটি গাড়ি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

এদিকে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, দুপুরেই ওই সাবস্টেশন গড়ার প্রকল্প বাতিল করে দেওয়া হবে। আর সেই সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রামের মানুষদের কাছে পৌঁছে দিতে পাঠানো হয় দীর্ঘদিন বামফ্রন্টের মন্ত্রী থাকা ও বর্তমান সরকারেরও সিনিয়র মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "আমি গিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষকে বলে এসেছি যে মমতা ব্যানার্জী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভাঙ্গরের মানুষ না চাইলে ওখানে সাবস্টেশন হবে না। আর দ্বিতীয় কথা বলেছি যে জমির চরিত্র পরিবর্তন করাও বন্ধ থাকবে। ওখানে কয়েক হাজার বিঘা জমি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা প্রকল্পের জন্য কিনে রেখেছে। এরাই আন্দোলনকারীদের উস্কাচ্ছে। তারা যেমন চাষজমি কিনেছে, সেখানে চাষই করতে হবে, অন্য কিছু চলবে না। "

ওদিকে এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠে আসছে যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল, তারা কীভাবে গ্রামবাসীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জমি নিয়ে সাবস্টেশন গড়তে গিয়েছিল।

তৃণমূল কংগ্রেস দলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জীর কথায়, "সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে জোর করে পুলিশ দিয়ে জমি দখল করা হয়েছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য। কিন্তু এখানে সরকারি বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের জন্য ওই গ্রামের লোকই তো জমি দিয়েছিল। এখন যদি তারা মনে করেন যে বিদ্যুতের দরকার নেই, উন্নয়নের দরকার নেই, তাহলে মানুষের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত হবে। এটা আমাদের সরকারের ঘোষিত নীতি যে জোর করে পুলিশ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। " সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন