‘রোহিঙ্গাদের ওপর পরিকল্পিত সহিংসতা চলছে’

  20-01-2017 01:04AM

পিএনএস ডেস্ক: মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা অব্যাহত থাকলে এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসুফ আহমেদ আল-ওথায়মিন।
বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ওআইসির বিশেষ সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় কুয়ালালামপুর সিসি কনভেনশন সেন্টারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি আনিফাহ আমান এতে সভাপতিত্ব করেন।
সভায় মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেতৃত্বকে নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন ওআইসি মহাসচিব। তিনি বলেন, দেশটির রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিকল্পিত সহিংসতা ও নিপীড়ন চলছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত সহিসংতা নিরসনে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। মূলত ২০১৫ সালের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচিকে ইঙ্গিত করেই তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘সু চির বিজয়ে ওআইসি অনেক আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। ওআইসি মনে করেছিল, ধর্মীয় কিংবা জাতিগত পার্থক্য অতিক্রম করে এটি একটি বহুত্ববাদী (ইনক্লুসিভ) সরকার হবে।'
ওআইসি মহাসচিব মনে করেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে অগ্রগতি হয়েছে, এবং যেভাবে নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে; সেসব সত্ত্বেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে স্থায়ী এবং পরিকল্পিত সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাগুলো অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া।
ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল দাতুক রামলান ইব্রাহিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের জীবনের আর্তনাদের কথা তুলে ধরেন।
পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি জারি থাকা চলমান বৈষম্য নিরসন করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সংকটকে আর কেবলমাত্র মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট আকারে দেখার সুযোগ নেই। আমরা আশা করি মিয়ানমারের সরকার ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর কাছে থেকে আসা মানবিক সহায়তা নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে দেবে।’
মালয়েশিয়াসহ ওআইসির সব দেশ মিলে ঐক্যবদ্ধ চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসবে না বলেও মন্তব্য করেন দাতুক রামলান ইব্রাহিম।
ওআইসি’র শীর্ষ সম্মেলনে পরররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মূল প্রস্তাব উপস্থাপন করতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
মানবিক সহায়তা এবং সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য মিয়ানমারের সরকারকে ১৭ কোটি টাকারও বেশি (১০ মিলিয়ন মালয়েশীয় রিংগিত) সহায়তা দেয়ার ঘোষণাও দেয় দেশটি।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের মতো অবকাঠামোগুলোর উন্নয়নের কাজে এই টাকার একাংশ ব্যয় করা হবে। যেন রোহিঙ্গাদের জীবনমানের উন্নয়ন হয়। প্রাযুক্তিগত সহযোগিতা কর্মসূচির মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবসম্পদ উন্নয়নেও ভূমিকা রাখার আগ্রহের কথা জানান তিনি।
নাজিব বলেন, ‘আজকের মিয়ানমার প্রযুক্তিগত সহযোগিতা কর্মসূচি গ্রহণে আসিয়ানভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে। মানুষের সক্ষমতার উন্নয়নে এই কর্মসূচিতে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়, রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের ক্ষেত্রে সেটা খুবই জরুরি।’
এ ব্যাপারে ওআইসিভূক্ত অন্যান্য দেশগুলোকেও এগিয়ে আসার তাগিদ দেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
এই বিশেষ সভায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলমসহ ওআইসির ৫৭ টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন