গ্রিন কার্ডধারীরা ট্রাম্পের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত

  19-02-2017 11:14AM


পিএনএস ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা আদালতে স্থগিতের পর এবার নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় কৌশলী হচ্ছেন তিনি। এর অংশ হিসেবে নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছেন না দেশটির গ্রিন কার্ডধারীরা। শনিবার জার্মানির মিউনিখে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক মন্ত্রী জন কেলি।

জন কেলি বলেন, প্রেসিডেন্ট প্রথম নিষেধাজ্ঞার চেয়েও আরও কঠিন একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করছেন। একটি পরিকল্পনা নিয়ে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলোর নাগরিকদের নিবৃত্ত করা হলেও গ্রিনকার্ডধারীদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে না। তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, নতুন করে জারি করতে যাওয়া নির্বাহী আদেশটিতে আগের নির্বাহী আদেশের ব্যাপারে আদালতের তোলা প্রশ্নগুলোর মীমাংসা করা হবে। কেননা, ফেডারেল আপিল আদালতের আদেশে তার আগের নির্বাহী আদেশটি স্থগিত হয়ে গেছে।

ফেডারেল আদোলতের স্থগিতাদেশকে আবারও খারাপ সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘যে সিদ্ধান্তকে আমি খারাপ সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করেছি তার বিপরীতে নতুন আদেশটি অনেক নিখুঁত হবে। আমরা এ নির্বাহী আদেশ জারি করব যা আমাদের দেশকে ব্যাপকভাবে সুরক্ষা দেবে। ’

নতুন আদেশে কী থাকবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি ট্রাম্প। তবে এর আগে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন মুসলিম নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিবাসন সংক্রান্ত সিনিয়র উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে রবিবার সিবিএস টেলিভিশনের ‘ফেস দ্য ন্যাশন’ অনুষ্ঠানে তিনি প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতাকে প্রশ্নহীন করতে বিচার বিভাগের ক্ষমতা হরণের ইঙ্গিত দেন।

২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে সিয়াটলের একজন বিচারক ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের আদেশ দেন। ট্রাম্প প্রশাসন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সান-ফ্রান্সিসকোভিত্তিক তিন বিচারকের প্যানেল তা খারিজ করেন। আপিল আদালতের হারের পর ‘আদালতে দেখা হবে’ বলে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ট্রাম্প। পরে তিনি নতুন নির্বাহী আদেশ জারির কথা জানান।

নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপে হোয়াইট হাউসের পরিকল্পনার প্রতি ইঙ্গিত করে স্টিফেন মিলার বলেন, মূলত শরণার্থী ও সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফর ও আশ্রয় নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালানো হবে ওই আদেশের মধ্য দিয়ে।

সিবিএস টেলিভিশনের ‘ফেস দ্য ন্যাশন’ অনুষ্ঠানে স্টিফেন মিলার মার্কিন বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, শিগগিরই পুরো দুনিয়া দেখবে যে, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। ট্রাম্পের এই উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের এমন একটা বিচার বিভাগ রয়েছে যাদের হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা। অনেক ক্ষেত্রে এটা সরকারের প্রধান শাখায় পরিণত হচ্ছে। আমাদের বিরোধীরা, মিডিয়া এবং পুরো দুনিয়া শিগগিরই আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ দেখতে পাবে। আমাদের দেশকে রক্ষায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই বাস্তবসম্মত। এটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। ”

১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়ে ফ্লোরিডা যাওয়ার পথে এ সংক্রান্ত নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। মার্কিন বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, “আমরা সন্দেহাতীতভাবে এ লড়াইয়ে জিতবো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, এতে কিছু বেশি সময় লাগছে। তবে একেবারে নতুন করে আরেকটা আদেশ জারি করাসহ আরও অনেক পথই আমাদের সামনে খোলা আছে। ”

নতুন নিষেধাজ্ঞা কেমন হবে, তা পরিষ্কারভাবে না বললেও ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগের নিষেধাজ্ঞা ‘খুব সামান্যই পরিবর্তিত হবে’। অবশ্য একইসঙ্গে আগের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে যাবে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিয়েবাস।

শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, “মার্কিন জনগণকে জঙ্গিবাদ থেকে রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতেই নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়েছে। স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়াসহ আইনি প্রক্রিয়ার সব দ্বারই খোলা রয়েছে। ”

ট্রাম্পের অভিবাসন সংক্রান্ত সিনিয়র উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার বলেন, সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপই নেওয়া হবে। সূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন