‘আমিও মুসলিম’ স্লোগানে প্রকম্পিত নিউইয়র্ক

  21-02-2017 08:38AM


পিএনএস ডেস্ক: ‘আমিও মুসলিম’ স্লোগানে প্রকম্পিত নিউইয়র্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসননীতির প্রতিবাদে নিউইয়র্কে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন। রোববার বিকালে নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে ‘টুডে আই অ্যাম এ মুসলিম টু’ (আমিও মুসলিম) শিরোনামে এ বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। ওই বিক্ষোভ র্যালিতে ডেমোক্রেটিক দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের কন্যা চেলসি ক্লিনটনও উপস্থিত ছিলেন। এদিকে খুব শিগগিরই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ জারি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, নতুন ওই আদেশে আদালতের রায়ে স্থগিত হওয়া আগের সেই সাত মুসলিম দেশও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অন্যদিকে ট্রাম্পের এক জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টাকে নিয়ে এক নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়েছে। বরখাস্ত করার একদিন পরই ফের ওই উপদেষ্টাকে স্বপদে বসানো হয়েছে। খবর সিএনএন, এপি ও ইউএসএ টুডের।

‘যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ কোনো ধর্মের বা বর্ণের নয়। যেখান থেকেই আগমন ঘটুক, যুক্তরাষ্ট্র সব বর্ণ-ধর্মের মানুষের দেশ। আমিও মুসলিম, তুমিও মুসলিম, আমরা সবাই মানুষ। দেয়াল নির্মাণ বন্ধ করো, অভিবাসী নিষেধাজ্ঞা নয়। ঘৃণাকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রে ভালোবাসার জয়যাত্রা ঘটবে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসননীতির প্রতিবাদে নিউইয়কের্র প্রতিবাদ সমাবেশে এমন সব স্লোগান দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। সঙ্গীত প্রযোজক এবং ব্যবসায়ী রাসেল সায়মনের আহ্বানে আয়োজিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে শহরের মেয়রসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হিলারি ক্লিনটনের কন্যা চেলসি ক্লিনটন। চেলসির সঙ্গে তার মেয়েও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন অভিবাসী দল, নানা ধর্মের মানুষ, বিশেষ করে মুসলিমদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এদিন মুসলিমদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে হাজারও মানুষ এ র্যালিতে অংশগ্রহণ করে।

প্রতিবাদ সমাবেশে নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও বলেন, ‘আজকের দিনে আমি নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিচ্ছি। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, নিউইয়র্ক শহর সব ধর্মের, বর্ণের ও বিশ্বাসের।’ আয়োজক রাসেল সায়মনস বলেন, মুসলিমরা আজ নিজেদের অরক্ষিত ও হুমকির সম্মুখীন বলে মনে করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘৃণা ও বিদ্বেষের উদাহরণ তৈরি করছেন। আমেরিকা তা প্রত্যাখ্যান করে ভালোবাসার জয়গান গেয়ে যাবে। ঘৃণা নয়, ভালোবাসাই টিকে থাকবে।’ ওই সমাবেশে অভিনেত্রী সুসান সেরান্ডন ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আজকের পরিস্থিতিতে নীরব থাকার সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মার্কিন সংবিধানে সব বর্ণ-ধর্মের প্রতি যে অধিকার দেয়া হয়েছে, আজ তার অবজ্ঞা হচ্ছে। ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।

মেয়েকে নিয়ে সমাবেশে চেলসি ক্লিনটন : সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং হিলারি ক্লিনটনের কন্যা চেলসি ক্লিনটনও মুসলিম সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি তার দুই বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে অন্য বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন চেলসি। চেলসি এবং শার্লটের জন্য এ ধরনের বিক্ষোভে অংশ নেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। সাবেক এ ফার্স্ট ডটার বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণের ছবি টুইটারেও প্রকাশ করেছেন। সাতটি মুসলিম দেশের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেই ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। যারা এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেছেন চেলসি। সে সময় তিনি হিজাব পরা এক নারীর ছবিসহ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের ছবি টুইট করেছেন।

নতুন নিষেধাজ্ঞায়ও সেই সাত মুসলিম দেশ : আদালতের রায়ে স্থগিত মুসলিম নিষেধাজ্ঞা সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে নতুন নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছেন তাতে আগের সাতটি দেশও অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এপি জানায়, নতুন এ নির্বাহী আদেশের খসড়া ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। ট্রাম্পের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে নতুন এ নির্বাহী আদেশে। ইরান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া, সুদান ও লিবিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া ট্রাম্পের ওই আদেশ আদালতে স্থগিত হয়ে যায়। এরপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালে নতুন নির্বাহী আদেশ জারির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এপির খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের নতুন আদেশের খসড়ার ব্যাপারে এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, আগের সাতটি দেশও নতুন নিষেধাজ্ঞায় থাকছে। তবে গ্রিনকার্ডধারী এবং ওই সাতটি দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে এমন মানুষদের নিষ্কৃতি দেয়া হবে।
নতুন নির্বাহী আদেশে নতুন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করার সময় সিরীয় শরণার্থীদের আলাদা করে প্রত্যাখ্যানের কথা থাকছে না। অবশ্য স্বাক্ষর হওয়ার আগে নির্বাহী আদেশের খসড়াটিতে কিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে নিয়ে নাটকীয়তা : বরখাস্ত হওয়ার পরদিনই আবার একই পদে ফেরানো হয়েছে ট্রাম্পের এক জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) উপদেষ্টাকে। ল্যাটিন আমেরিকা ইস্যুতে ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করলে শুক্রবার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ক্রেইগ ডিয়ারকে বরখাস্ত করা হয়। তাকে আবার এনএসসি উপদেষ্টা পদে ফেরানো হয়েছে বলে রোববার নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউসের নারী মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স। ক্রেইগ ডিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পশ্চিম গোলার্ধ বিভাগের সিনিয়র পরিচালক ছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসন তাকে নিয়োগ দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের উড্রো উইলসন সেন্টারে এক বক্তব্যে ট্রাম্পের ল্যাটিন আমেরিকার নীতি নিয়ে সমালোচনা করেন ক্রেইগ। এছাড়া হোয়াইট হাউসের সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও মন্তব্য করেন। ওই অনুষ্ঠানে প্রায় দু’ডজন বিজ্ঞজন উপস্থিত ছিলেন।

ক্রেইগ আরও অভিযোগ করেন, এনএসসির সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। ওই অনুষ্ঠানে তিনি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতোর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যোগাযোগের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। এর জের ধরে তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তাকে কেন আবার চাকরিতে ফেরানো হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকলে তাকে হোয়াইট হাউসে ফেরানো হতো না।’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন