বিএসএফের গুলিতে নারীসহ ৩ ভারতীয় নিহত

  19-03-2017 08:15AM

পিএনএস ডেস্ক: ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বিএসএফের গুলিতে এক নারীসহ তিন ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। এরা সকলেই স্থানীয় আদিবাসী।

শুক্রবারের ওই ঘটনায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, গরু পাচারে বাধা দেয়ায় তাদের দুই রক্ষীকে পাচারকারীরা ঘিরে ফেলে আক্রমণ করে এবং আত্মরক্ষার্থে তাদের গুলি চালাতে হয়।

তবে ত্রিপুরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, একজন নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছিলেন বিএসএফের ওই দুই রক্ষী। ওই নারীকে বাঁচাতে গ্রামের অন্য মানুষরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরে গুলি চালানো হয়, যাতে মারা যান তিন ভারতীয় নাগরিক।

দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাব্রুমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছেই ভাঙামুড়ায় শুক্রবার ওই ঘটনা ঘটে।

বিএসএফ বলছে, প্রায় ৩০-৪০ জনের একটি দল শুক্রবার গরু পাচার করার চেষ্টা করছিল। তাদের ৩১ নম্বর ব্যাটালিয়নের দুই রক্ষী ওই কথিত পাচারকারীদের বাধা দিলে তারা পাল্টা আক্রমণ করে দা, লাঠির মতো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে।

প্রথমে শূন্যে দুই রাউন্ড গুলি চালান রক্ষীরা, কিন্তু তারপরে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে গুলি চালাতে বাধ্য হন বলে বিএসএফ সূত্রগুলো জানিয়েছে।

তবে ত্রিপুরা পুলিশের সূত্রগুলি বলছে, তাদের কাছে গ্রামবাসীরা অভিযোগ দায়ের করেছেন যে ওই দুই রক্ষী এক নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছিলেন। ওই নারী তখন রাবার বাগান থেকে ফিরছিলেন। তার চিৎকারে গ্রামের অন্যরা এগিয়ে গেলে সীমান্তরক্ষীরা গুলি চালায়।

ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী নারীর শ্লীলতাহানি, হত্যাসহ বেশ কয়েকটি ধারায় ওই অভিযোগ লিপিবদ্ধ হওয়ার পরে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা এখন সাব্রুমের ওই এলাকায় তদন্তে গেছেন বলেও পুলিশের সূত্রগুলো জানায়।

তবে বিএসএফ প্রাথমিক তদন্তের পরে জানিয়েছে, শ্লীলতাহানির কোনো ঘটনাই ঘটে নি ওখানে। যদিও বিস্তারিত তদন্তেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিএসএফের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল সলিল কুমার মিত্র বলেন, শ্লীলতাহানির অভিযোগ যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে বাহিনীর পক্ষে খুবই লজ্জাজনক হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি না যে ঠিক কী ঘটেছে সাব্রুমে। কিন্তু এটা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় যে শ্লীলতাহানির মতো জঘণ্য কাজ বাহিনীর কেউ করেছে, তাহলে বিএসএফে তার জায়গা হওয়া উচিত নয়। তাকে গ্রেপ্তার করে বিচার করা উচিত। কোনো রকম ছাড় দেয়া বা করুণা করা উচিত নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষত সাব্রুমের মতো একটা আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা, যেখানকার মানুষকে মূলস্রোতে নিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে, যে প্রচেষ্টায় বিএসএফও সামিল, তারা যদি এরকম অপরাধ করে থাকে, তাহলে বাহিনীকে ভাবতে হবে যে সত্যিই আমরা সীমান্তরক্ষা করছি কী না। সীমান্ত তো শুধু একটা কাল্পনিক রেখা নয় যেটা রক্ষার দায়িত্ব বিএসএফের। সীমান্তবাসী মানুষদের রক্ষারও দায় আছে বাহিনীর।’

দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে বিএসএফের গুলিচালনার বিরুদ্ধে সরব মানবাধিকার সংগঠন মাসুম। তার প্রধান কিরীটি রায় বলেন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী নিজের দেশের নাগরিকদের ওপরেই গুলি করছে, এটা মোটেই নতুন ঘটনা নয়।

তিনি বলেন, ‘সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- যারা বিএসএফের গুলিতে মারা যান, তাদের ৮০ শতাংশই ভারতীয়, বাকি ২০ শতাংশ বাংলাদেশের নাগরিক। অর্থাৎ বিএসএফ নিজের দেশের লোককেই গুলি করে মারছে।’

বিএসএফের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সলিল মিত্র অবশ্য বলেন, ‘সীমান্ত-অপরাধে দুই দেশের নাগরিকরাই জড়িত থাকেন। অপরাধ দমনে ভারতীয়-বাংলাদেশি আলাদা করা হলে নিরপেক্ষতা বজায় থাকে না। তবে সবথেকে ভাল হয় যদি গুলি না চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা যায়। তাহলে তাদের জেরা করে এমন তথ্য পাওয়া যেতে পারে যা বাহিনীর কাছে হয়তো অজানা।’

মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের প্রধান অভিযোগ করছেন, পাচারের কাজে বিএসএফের একাংশ যুক্ত না থাকলে কখনোই এত বছর ধরে সেটা চলতে পারত না। অতি সম্প্রতি তিনি কোচবিহার জেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দেখে এসেছেন- সন্ধ্যেয় আলো নিভিয়ে দিয়ে সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার গরু বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে।

তিনি জানান, ‘এই গরুগুলোর কোনোটাই পশ্চিমবঙ্গের নয়। সবই হরিয়াণা, রাজস্থান বা উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা বড় বড় গরু। বিএসএফ সব জেনেও যেন চোখ বুজে আছে। তাদের একাংশ জড়িত না থাকলে দিনের পর দিন এই অপরাধ কী করে চলতে পারে সীমান্তে?’
সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন