রোহিঙ্গা নির্যাতন তদন্তের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের

  25-03-2017 09:00AM



পিএনএস ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ভোটাভুটিতে কোনো ধরনের বিরোধিতা ছাড়াই তদন্তের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ নিয়ে আলোচনার সময় চীন, ভারত ও কিউবা তদন্তের বিরোধিতা করলেও ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি। এবার আর কেউ তাদের পক্ষে না

দাঁড়ানোয় স্পষ্টতই মিয়ানমার ক্ষুব্ধ। ফলে ভোটের পরপরই সেখানে উপস্থিত দেশটির প্রতিনিধিদল ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে।

জানা গেছে, মিয়ানমারের মানবাধিকারবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার (বিশেষ দূত) ইয়াংহি লি মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ঘুরে গিয়ে রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নাজুক মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছিলেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ গতকাল স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার হিসেবে ইয়াংহি লিকে আবারও নিয়োগ দিয়েছে।

বিবিসি জানায়, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির আন্তর্জাতিক তদন্তের সিদ্ধান্ত হওয়ার ফলে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির ওপর চাপ আরো বাড়ল। কারণ তদন্তদলকে মিয়ানমারে ঢোকার অনুমতি দিলে দেশটির সামরিক জেনারেলরা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হবেন। আর অনুমতি না দিলে তা জাতিসংঘের সিদ্ধান্তকে অমান্য করা হবে। এতে আবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ হবে।

গত অক্টোবর থেকে রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর নতুন করে দমন-পীড়ন শুরুর পর প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে এ পর্যন্ত কোনো স্বাধীন আন্তর্জাতিক দলকে ঢুকতে দেয়নি। গতকাল জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সেখানে আন্তর্জাতিক তদন্তদল পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর মিয়ানমার সরকার এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যদি এখন জাতিসংঘের তদন্তদলকে ঢুকতে না দেয়, তাহলে তা জাতিসংঘের প্রস্তাব অমান্যের শামিল হবে। আন্তর্জাতিক তদন্তের ওই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কোনো ‘না’ ভোট ছাড়াই ওই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী গঠিত আন্তর্জাতিক তদন্তদল মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখবে। এরই মধ্যে অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের নির্মূল ও তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ এনেছেন।

বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, মিয়ানমার শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘ দলকে সেখানে ঢুকতে বাধা দিতে পারে—এমন সম্ভাবনাই প্রবল।

এর আগে গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নে উদ্বেগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও চীন ও রাশিয়ার আপত্তিতে তা ভেস্তে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা নিপীড়ন বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছিল। গতকাল জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে এ বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর নিউ ইয়র্কভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক চম্পা প্যাটেল বলেন, অনেক আগেই জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন