আদালতের রায়ে বার-ডান্সার নেহা-জুলি-রিয়ারা এখন শয্যা-সঙ্গিনী

  27-04-2017 04:38PM

পিএনএস ডেস্ক : মায়াবী আলোর ঢেউয়ের সঙ্গে জনপ্রিয় গানের তাল৷ সেই তালেই এতদিন শরীর দুলত তাদের৷ কারোর গাওয়া গান আবার নেশায় আচ্ছন্ন করে ফেলত যে কোনও বয়সের পুরুষ মনকে৷ ডান্সবারের সিঙ্গার- ডান্সারের পরিচয় নিয়েই এতদিন রসেবসে ছিল নেহা, জুলি, রিয়ারা৷ কিন্তু শীর্ষ আদালতের রায় এক ঝটকায় পাল্টে দিল তাদের পেশাগত পরিচয়কে৷ সূত্রের খবর, সংসার চালাতে বার ইন্ড্রাসট্রির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মহিলা সিঙ্গার-ডান্সার বেছে নিচ্ছে দেহব্যবসাকে৷

জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে থাকা ধাবা, হোটেল, বারগুলিতে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ যার জেরে পেটে টান পড়েছে বার কর্মী থেকে বারের সিঙ্গার-ডান্সারদের৷ শুধু এই রাজ্যের উপর দিয়ে যাওয়া জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে প্রায় হাজার দুয়েক মদের দোকান৷ সেখানে কাজ করত প্রায় কয়েক হাজার কর্মী৷ ১ এপ্রিল থেকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছেন তারা৷


সদ্য চাকরী হারিয়েছে রাজারহাটের উল্লাস বারের অমিত৷ তাঁর কথায়, “বারে যেসব ছেলেরা কাজ করে তারা মাধ্যমিক, খুব বেশি হলে উচ্চমাধ্যমিক পাশ৷ ভাল কোনও চাকরি তাদের পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব৷ সমস্যা হচ্ছে এই জায়গায় যাঁরা এতদিন কাজ করছে তাদের অন্য জায়গায় গিয়ে মানিয়ে নিতেও অসুবিধা হবে৷ আমরা এখনও সবাই আশায় আছি৷ কিছু একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে৷”

আর যাদের জন্য সন্ধ্যে হতে না হতেই পানশালার আলো জ্বলে উঠত সেই উর্ব্বশীরা এখন কী করছেন? ঘনিষ্ট সূত্রে খবর, সব বারের নিজের ‘সেটিং’-এর সিঙ্গার-ডান্সার আছে৷ সবাই যে অন্য বারে সুযোগ পাচ্ছে তা নয়৷ যাঁরা কলকাতায় কিছু ব্যবস্থা করতে পারছে না তারা কলকাতার বাইরের হোটেলগুলো চলে যাচ্ছে৷ কিন্তু সেটাও খুব বেশি নয়৷ যাঁরা সুন্দর, অ্যাক্ট্র্যাকটিভ তাদের কাজের সুযোগই বেশি৷ আর যারা সুযোগ পাচ্ছে না?

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক বারকর্মীর কথায়, “একটু ‘লো-ক্যাটাগরি’ সিঙ্গার-ডান্সাররা এখন পাত্তা পাচ্ছে না৷ তারা পড়াশোনাও জানে না যে অন্য কোনও চাকরি করবে৷ এদের মধ্যে অনেকেই শুধুমাত্র নিজের নামটুকু সই করতে পারে৷ তাতে কে এদের কাজ দেবে? আর এদের এখন যা লাইফস্টাইল তাতে ছোটকাজ এরা করতেও পারবে না৷ বারে যেসব মেয়েরা গান গাইত, বা নাচত তারা মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা রোজগার করত৷ এখন কম টাকার মাইনেতে এদের পোষাবে কেন? তাই দেহব্যবসা করতেই বাধ্য হচ্ছে এদের অনেকেই৷”

দিল্লির মেয়ে নেহা (নাম পরিবর্তিত) কলকাতার মধ্যমগ্রামের দু-তিনটি বারে চারবছর ধরে ডান্স করছেন৷ নেহার কথায়, ‘‘দিল্লিতে আমার বাড়িতে মা, ভাই আছে৷ ভাই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে৷ পড়াশানোর খরচ অনেক৷ দিল্লিতেই পরিবার থাকে৷ সংসারের সব খরচ আমিই পাঠাই৷ এখন আমি যদি কাজ না করি আমার বাড়িতে সবাই না খেতে পেয়ে মরবে৷ তাই আমার কাছে এছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না৷ তবে নতুন পেশার জন্য কোনও আত্মগ্লানি নেই বলেই জানিয়েছেন নেহা৷”

নাচ-গানের আড়ালে বারগুলিতে দেহব্যবসার রমরমার অভিযোগ নতুন নয়৷ লাউড মিউজিক আর রঙীন আলোর মধ্যে যৌনতার আবেদন সাত বছর ধরে দেখছে জুলি৷ শহরের নামকরা একটি বারে জুলি গান গায়৷ পেটের তাগিদে এই চোরাস্রোতে গা ভাসাতে বাধ্য হয়েছেন তিনিও৷ জুলির কথায়, “আমি বিবাহিত৷ এতদিন লাইনের অনেককে দেখেছি এসব করতে৷ আমারও টাকার দরকার ছিল৷ কিন্তু নিজে সেভাবে সাহস পাইনি৷কিন্তু আমার সংসারের যা অবস্থা, তাতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে৷তবে আমার পুরনো কয়েকজন কাস্টমারের প্রস্তাবেই আমি সাড়া দিয়েছি৷ এরবেশি আর কিছু বলব না৷”

বছর বাইশের রিয়া অকপটে জানিয়েছে বার ডান্সার হিসেবে দু’বছরের স্বল্প অভিজ্ঞতায় তিনি বেশকিছু কাস্টমারের সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়েছেন৷ তাই বারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পাকাপাকিভাবে এই পেশাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি৷ রিয়ার বাড়িতে অবশ্য কেউ-ই এব্যাপারে জানে না৷

শরীরী ছলনায় এতদিন রঙীন ফ্লোর কাঁপিয়েছে তাঁরা৷ ভাগ্যের খেলায় এখন তাদের শরীর ঘুরবে পুরুষদের হাতে হাতে৷ আদালতের একটা রায় বদলে দিল তাদের পরিচিতি, নিয়তিকে৷


পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন