‘বামপন্থী’ পাত্র চাই

  29-04-2017 01:54AM


পিএনএস ডেস্ক: খবরের কাগজে পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে বয়স, চেহারা আর শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে ধর্ম, বর্ণসহ নানারকম পছন্দের নানা বিষয় উল্লেখ করা নতুন নয়।

কিন্তু পাত্রকে 'বামপন্থী' হতে হবে, এই যোগ্যতামান জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া বেশ অভিনব। অন্তত সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গে এধরনের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে বলে মনে হয় না।

কিন্তু নিজের বোনের বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে গিয়ে সেই অভিনব ঘটনাই ঘটিয়েছেন কলকাতার বাসিন্দা দীপ্তানুজ দাশগুপ্ত।
সি পি আই এম দলের মুখপত্র, দৈনিক গণশক্তি কাগজে এই বিজ্ঞাপনটি ছাপা হয়েছে।

‘আমি কোনও দলের সদস্য নই, বামপন্থার সমর্থক। আমাদের বাড়ির পরিবেশটাও বামপন্থী। তাই বিয়ের পরে বোন যাতে সেরকমই একটা পরিবেশ পায়, সেটা ভেবেই 'বামপন্থী' পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপনটা দেয়া,’ বিবিসিকে বলছিলেন দাশগুপ্ত।

বিয়ের পাত্রী যে তার নিজের বোন নয়, সেটাও উল্লেখ করা আছে। পাশের রেল আবাসনে থাকা ওই মেয়েটি একবছর বয়স থেকে দাশগুপ্তদের কাছেই বড় হয়েছে, এম এ পাশ করেছে। এখনো তাদের সঙ্গেই থাকে, বাড়ির মেয়ের মতোই।

দাশগুপ্তর কথায়, ‘যে পরিবারে কোনও মেয়ের বিয়ে হবে, সেখানে যদি নিজের বাড়ির থেকে অন্য কোনওরকম পরিবেশ পায়, তাহলে হয় মানিয়ে নিতে হয় মেয়েটিকেই, অথবা লড়াই করতে হয়। কিন্তু আমি তো বোনকে যতদূর জানি, লড়াই করার মতো মেয়ে নয় ও। তাই মানিয়ে নিতে গিয়ে ওর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। সেই জন্যই এমন পরিবার আমরা খুঁজছি, বোনের সম্মতি নিয়েই, যেখানে বামপন্থী পরিবেশ আছে।’

প্রায় একই কথা বলছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান শমিত কর।

‘মোহনবাগানের মেয়ে বলে একটি ছবি হয়েছিল, যেখানে বাঙাল বাড়িতে একটি ঘটি বাড়ির মেয়ের বিয়ে হওয়ার পরে কীরকম নাকানিচোবানি খেতে হয়েছিল তাকে। ঘটি আর বাঙাল স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি যেমন দেখেছি বাস্তবে, তেমনই আবার দেখেছি বামপন্থী আর অবামপন্থী অথবা ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তাধারার পরিবারে বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরে পারিবারিক অশান্তি তৈরি হয়েছে। সেদিক থেকে এই বিজ্ঞাপনদাতা অত্যন্ত সৎ কাজ করেছেন তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়ে। বলা যায় তিনি নজির সৃষ্টি করেছেন একটা,’ বলছিলেন শমিত কর।

'বামপন্থী' পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপনটি এমন একটা সময়ে ছাপা হল, যখন পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের যথেষ্ট শক্তিক্ষয় হয়েছে। সি পি আই এমের সংসদ সদস্য ঋতব্রত ব্যানার্জী মনে করছেন তাদের রাজনীতির প্রতি মানুষের এখনো ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। এই বিজ্ঞাপনটি তারই একটি উদাহারণ।

তিনি বলছিলেন, ‘বামপন্থা একটা বোধ, একটা সংস্কৃতি যেটা শিকড়ের গভীরে প্রথিত থাকে। এই বিজ্ঞাপনটা তারই উদাহরণ। ভোটের রাজনীতিতে কখনো শক্তি বৃদ্ধি হয়, কখনো ক্ষয় হয়। কিন্তু আদর্শটাতো থেকেই যায়। একটা নির্দিষ্ট আদর্শ, মূল্যবোধ আর বিশ্বাসের প্রতিফলন। এটাকে দলীয় রাজনীতির মধ্যে দিয়ে দেখা ঠিক হবে না।’

তবে বিজ্ঞাপন বেরনোর পরে বামপন্থাকে কটূক্তি করে নানা অশ্লীল কমেন্ট ও পোস্ট করা হচ্ছে যে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বিজ্ঞাপনে দেয়া হয়েছে, সেটিতে।

এতে দাশগুপ্ত পরিবার বিরক্ত। তবে পাশাপাশি অনেক সিরিয়াস 'বামপন্থী' পাত্রের পরিবারও যোগাযোগ করেছে তাদের সঙ্গে।

সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন