অবস্থান থেকে সরে গেলেন ট্রাম্প

  22-05-2017 01:01AM

পিএনএস ডেস্ক: সৌদি আরব সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দেয়া ভাষণে ‘উগ্র ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’ (র্যা ডিক্যাল ইসলামিক টেরর) শব্দত্রয় ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন। মুসলিমদের কাছে আপত্তিকর বলে বিবেচিত টার্মটি ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় ব্যবহার করেন। এমনকি প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই টার্ম ব্যবহার না করায় তাদের তীব্র সমালোচনা করেন। কিন্তু এবারের বক্তব্য তিনি ‘ইসলামিস্ট চরমপন্থা’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ‘ইসলামিস্ট’ শব্দটি কেবল চরমপন্থি জঙ্গিদেরই বোঝায়, পুরো ইসলাম ধর্মকে নয়। এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন।

নিজের বক্তব্যে তিনি আরো বলেছেন, এই লড়াই ধর্মে ধর্মে লড়াই নয়, বরং ভালো ও মন্দের মধ্যে লড়াই। গত বছরের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে নিন্দা কুড়ান ট্রাম্প। তিনি তখন বলেছিলেন, আমার বিশ্বাস ইসলাম আমাদের ঘৃণা করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে সকল মুসলিমের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণাও দেন। তবে সৌদি আরবে ইসলাম নিয়ে বক্তৃতায় তার কণ্ঠে অনেক নরম সুর দেখা গেছে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এই লড়াই হলো শুভ ও অশুভের লড়াই। আর এই যুদ্ধ লড়া উচিত সব ধর্মের মানুষের।

নিজের প্রথম বিদেশ সফরে এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুসলিম বিশ্বের প্রতি তার কড়া অবস্থান থেকে সরে আসার বার্তা দিলেন। তার ভাষ্য, ‘এ লড়াই বিভিন্ন ধর্ম, গোত্র বা সভ্যতার লড়াই নয়। এটি হলো বর্বর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সব ধর্মের শালীন জনগণের লড়াই। এই অপরাধীরা চায় মানুষের জীবনকে ধ্বংস করতে। আর সাধারণ মানুষ চায় ধর্মকে রক্ষা করতে। এটি শুভ ও অশুভের মধ্যকার লড়াই।’

ট্রাম্প বলেন, ‘এর অর্থ হলো ইসলামিস্ট (ইসলাম-মতবাদী) চরমপন্থা ও এ থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সৃষ্ট সংকটকে সৎভাবে মোকাবিলা করা। এর অর্থ হলো, নির্দোষ মুসলিমদের হত্যা, নারীদের নির্যাতন, ইহুদীদের নির্যাতন ও খ্রিষ্টানদের হত্যা করার বিরুদ্ধে একসঙ্গে রুখে দাঁড়ানো।’ তবে তিনি এ-ও বলেছেন, মুসলিম নেতাদেরকে এই চরমপন্থা মোকাবিলায় অবশ্যই আরো বেশি কিছু করতে হবে। তার ভাষ্য, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এই শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করতে আমেরিকার জন্য অপেক্ষায় থাকলে হবে না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে কোনো ধরনের ভবিষ্যৎ তারা নিজেদের জন্য, নিজের দেশের জন্য ও শিশুদের জন্য চান।’ তার প্রতিশ্রুতি, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিজের সিদ্ধান্ত নেবে বাস্তবিক দুনিয়ার পরিস্থিতির ভিত্তিতে, কোনো অনমনীয় আদর্শের ভিত্তিতে নয়। আর যখন সম্ভব যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিক সংস্কার চাইবে, অকস্মাৎ হস্তক্ষেপ নয়।’

তার দুই পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জর্জ ডব্লিউ বুশ উগ্রপন্থার প্রতি সমর্থন কমাতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে টোটকা হিসেবে ব্যবহার করলেও, ট্রাম্প বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, মুসলিম দেশগুলোকে তাদের বিভিন্ন নির্যাতনমূলক নিয়মনীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চাপ দেবেন না। তার ভাষ্য, ‘আমরা এখানে লেকচার দিতে আসিনি। আমরা এখানে অন্য মানুষকে বলতে আসিনি যে কীভাবে বাঁচতে হবে, কী করতে হবে, কী হতে হবে, বা কীভাবে প্রার্থনা করতে হবে। বরং, আমরা এখানে অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিতে এসেছি, যার ভিত্তি হবে অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধ। আর লক্ষ্য হবে আমাদের সকলের জন্য ভালো একটি ভবিষ্যতের অন্বেষণ করা।’

তিনি মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের আশ্বস্ত করার সুরে বলেন, ‘অভিন্ন স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের পথে আমেরিকা আপনাদের পক্ষে দাঁড়াতে প্রস্তুত।’ উল্লেখ্য, সৌদি আরব থেকে ইসরাইল, বেলজিয়াম, ভ্যাটিক্যান ও সিসিলি যাওয়ার কথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। সৌদি আরব সফর ছিল তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন