কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামীদের বিক্ষোভ তবে কারফিউতে জনজীবন অচল

  29-05-2017 01:13AM



পিএনএস ডেস্ক: হিজবুল মুজাহিদীন নেতা সাবজার ভাটের মৃত্যুর পর কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় ফের অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।

শনিবারই শ্রীনগর জেলার ৭টি থানায় কারফিউ জারির কথা ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি অনন্তনাগ, পুলওয়ামা ও সোপিয়ানেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। রবিবার আরো কয়েকটি থানায় কারফিউ বিস্তৃত করা হয়েছে। অন্যদিকে সবজারের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নামা জনতার ওপর নিরাপত্তাবাহিনীর বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে রবিবার থেকে দুই দিন উপত্যকায় হরতালের ডাক দিয়েছে হুরিয়তের দুই শাখাই। ৩০ মে তারা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ত্রালে মিছিল করে যাওয়ার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। এছাড়া কাশ্মীরজুড়ে স্বাধীনতাকামীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। খবর এএফপি’র।

পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সোমবার পর্যন্ত শ্রীনগর জেলার সব স্কুল-কলেজ বন্ধ কারার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শনিবার শ্রীনগরের ডিসি ফারুর আহমেদ দার জানান নিরাপত্তার খাতিরে শ্রীনগরের কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হবে।

এছাড়াও কয়েকটি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এদিন রাজ্যে যারা সিইটি পরীক্ষায় বসবেন তাদের কারফিউতে ছাড় দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, শনিবার ভোররাতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় হিজবুল নেতা সাবজার আহমদ ভাটের। ত্রালের একটি জায়গায় সে তার দুই সঙ্গীর সঙ্গে গোলাগুলিতে খুন হয়। পাশপাশি এদিন ১০ (জঙ্গী) স্বাধীনতাকামীকে খতম করেছে ভারতীয় সেনা সদস্যরা।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর উপত্যকা যেভাবে উত্তাল হয়েছিল আবারো পরিস্থিতি সেদিকে মোড় নিতে পারে। অশান্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করল তার উত্তরসূরী আরেক হিজবুল মুজাহিদীন নেতা সবজার আহমেদ ভাটের নিহতের ঘটনা।

দিনভর জনতা-নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে ৫০টিরও বেশি স্থানে খণ্ডযুদ্ধে অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৬জন বুলেটে, ১৩ জন পেলেট গানের ছররায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। জখম হয়েছেন ৫ পুলিশকর্মীও। এছাড়াও বেশ কয়েকজন আহত হন। দিনভর খণ্ডযুদ্ধের পর সবজারের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নামা জনতার ওপর নিরাপত্তাবাহিনীর বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে রবিবার থেকে দুই দিন উপত্যকায় হরতালের ডাক দিয়েছে হুরিয়তের দুই শাখাই। ৩০ মে তারা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ত্রালে মিছিল করে যাওয়ার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে।

পুলওয়ামার ত্রালের সোইমোহ গ্রামে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে সবজার ও আরো এক স্বাধীনতাকামীর মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাত থেকে গ্রামের এক বাড়িতে গা ঢাকা দিয়ে থাকা ভাট ও তার সঙ্গী এলাকা ঘিরে তল্লাসি অভিযানের সময় নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতেই নিহত হন তারা।

এছাড়াও ভারতীয় বাহিনীর মতে রামপুর সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখায় গুলিতে ৬ অনুপ্রবেশকারীর মৃত্যুতেও বড় সাফল্য পেয়েছে তারা। কিন্তু সবজারের মৃত্যুর খবর ছড়াতেই উপত্যকা জুড়ে নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, পাথর ছোঁড়া শুরু হয়।

সোইমোহ গ্রামে গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে স্থানীয় এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সবজারের মৃত্যুর প্রতিবাদে এলাকার লোকজন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনী গুলি চালায়। গুলিতেই মারা গিয়েছে লোকটি। বিক্ষোভ, সংঘর্ষের খবরে আগে থেকেই বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজারহাট, দোকানপাট।

স্বাধীনতাকামীরা এক মুহূর্তও দেরি না করে আসরে নেমেছে স্থানীয় মানুষকে বিক্ষোভকে কাজে লাগাতে। সবজারের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নামা জনতার ওপর নিরাপত্তাবাহিনীর বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে আগামীকাল থেকে দুদিন উপত্যকায় হরতালের ডাক দিয়েছে হুরিয়তের দুই শাখাই। ৩০ মে তারা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ত্রালে মিছিল করে যাওয়ার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে।

ফলে অশান্তি আরো ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ঠেকাতে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। যদিও বিএসএনএলের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বহাল রয়েছে। আগে থেকেই উপত্যকায় ২২টি সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ও অ্যাপসের ওপর নিষেধাজ্ঞা চালু রয়েছে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন