ঈদের প্রাক্কালে ভারতীয় সেনাদের গুলিতে কাশ্মিরে নিহত ২

  27-06-2017 06:50AM


পিএনএস ডেস্ক: ভারতীয় সেনাদের গুলিতে কাশ্মিরে কমপক্ষে দুই সন্দেহভাজন বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন। ভারত-নিয়ন্ত্রিত এই বিতর্কিত হিমালয় অঞ্চলটিতে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যেই দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে হতাহতের এই ঘটনা ঘটলো।

পুলিশের বরাত দিয়ে ইরানভিত্তিক প্রেসটিভি ও পাকিস্তানভিত্তিক দি ডন পত্রিকার খবরে বলা হয়, এই অঞ্চলের প্রধান শহর শ্রীনগরের প্রান্তসীমায় একটি স্কুলে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধের পর এই দুই বিদ্রোহীকে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এস.পি ভায়েদকে (S.P. Vaid) উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বন্দুন যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে এবং দুই বিদ্রোহীকে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, নিহত দুইজনের কেউই স্থানীয় বাসিন্দা নন। পুলিশ কেবলমাত্র তাদের কোড বা সাংকেতিক নামই জানতে পেরেছেন।

এর আগে শনিবার বিকেলে ভারতীয় আধা-সামরিক বাহিনীর একটি টিমের মুখোমুখি হনসন্দেহভাজন বিদ্রোহীরা। এ সময় উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে এক সেনা নিহত এবং অপর দুই সেনা আহত হন। পরে বিদ্রোহীরা পালিয়ে গিয়ে নিকটস্থ একটি স্কুলে আশ্রয় নেন।

ভারতীয় সেনারা স্কুলটি চারদিক থেকে ঘিরে রাখেন। এসময় বিদ্রোহীরা সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকেন।

উল্লেখ্য, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই কাশ্মিরে সহিংস পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্টের (Press Trust) খবরে বলা হয়, দক্ষিণ কাশ্মিরের সমস্যাসংকুল অঞ্চলে গত সপ্তাহে অতিরিক্ত দুই প্লাটুন সেনা মোতায়েন করে নয়াদিল্লী সরকার।

কাশ্মিরে বিবদমান দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে হতাহতদের বিষয়ে নজরদারি রাখছে ‘জম্মু কাশ্মির কোয়ালিশন অব সিভিল সোসাইটি (The Jammu Kashmir Coalition of Civil Society) নামের একটি সংগঠন। ওই সংগঠনটি জানায়, গত মাসে মুসলিম সংখ্যাগুরু এই অশান্ত অঞ্চলটিতে অন্তত ৫১জনকে হত্যা করা হয়েছে।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে কাশ্মিরে চলতি বছরেই অন্তত ১৯৭ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগকেই হত্যা করেছেন ভারতীয় সেনা ও পুলিশ সদস্যরা।

দখলদার ভারতীয় সেনাদের এমন হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় মুসলিম সংখ্যাধিক্য কাশ্মিরে প্রায় প্রতিনিয়তই ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বিক্ষুব্ধ কাশ্মিরের জনগণ নয়াদিল্লীর শাসন থেকে বেরিয়ে পূর্ণ শায়ত্বশাসন দাবি করে আসছে।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সবসময়ই এই বিতর্কিত অঞ্চলটিতে তার দেশের সেনাদের ওপর হামলা চালানোর জন্য জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ এবং অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য পাকিস্তান সেনাদের দোষ দিয়ে আসছে। অবশ্য পাকিস্তান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছে থেকে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার সময়ই কাশ্মিরকে বিভক্ত করে দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। কিন্তু উভয় দেশই তখন থেকে পুরো কাশ্মিরকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।

এই বিতর্কিত অঞ্চলকে ঘিরে এরই মধ্যে দুই দেশ তিনবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। বিগত ২০০৩ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতির এক চুক্তিতে দুই পক্ষ স্বাক্ষর করে। কিন্তু তারপরও কাশ্মিরে ভয়াবহ সহিংসতা লেগেই আছে।

ভারত সরকার এই ক্ষুদ্র অঞ্চলটিতে জনরোষ দমাতে সেখানে প্রায় ৫ লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। স্বাধীনতার দাবিতে সেই জন্মের শুরু থেকেই কাশ্মিরের জনগণ আন্দোলন করে আসছেন এবং সেখানে ভারত-বিরোধী মনোভাব খুবই প্রখর।

তবে, গত বছরের জুলাই মাসে কাশ্মিরের জনপ্রিয় কমান্ডারকে ভারতীয় সেনারা হত্যার পর থেকেই এই অঞ্চলের পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে চলে যায়। সরকারী বাহিনীর সাথে স্বাধীনতাকামীদের সংঘাত বেড়ে যায়।

চলতি বছরের জুলাই মাসে সেই জনপ্রিয় তরুণ কমান্ডার বুরহান ওয়ানির (Burhan Wani) মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে পরিস্থিতি আবারো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন