২০ বছরে হ্যারি পটার

  27-06-2017 07:31PM

পিএনএস ডেস্ক : চোখে গোল গোল চশমা লাগানো এক কিশোর। একটি গোপন স্কুলে জাদু শেখে সে। তার বাবা-মা নেই। তবে আছে দুজন ভালো বন্ধু। তাদের নিয়েই শিহরণ জাগানো সব অ্যাডভেঞ্চারে অংশ নেয় সে। নাম তার হ্যারি পটার। গতকাল সোমবার ২০ বছরে পা দিয়েছে এই কল্পিত চরিত্রটি।

অথচ হ্যারি পটারকে নিয়ে লেখা উপন্যাস প্রথম দিকে ছাপতেই চাননি প্রকাশকেরা। বারবার প্রত্যাখ্যানের জ্বালা পেতে হয়েছে লেখিকা জে কে রাওলিংকে। শেষে ১৯৯৭ সালের ২৬ জুন প্রথম প্রকাশিত হয় ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফারস স্টোন’। এটিই হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম উপন্যাস। প্রকাশের পরই তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে হ্যারি। এই কিশোরের জাদুতে লেখিকা রাওলিংও ধনী বনে যান। ১০ বছরের মধ্যে সিরিজের সাতটি কিস্তি প্রকাশিত হয়। শুধু বই নয়, সিনেমার রুপালি পর্দাতেও আলোড়ন তোলে হ্যারি। তৈরি হয়েছে মোট আটটি সিনেমা। হয়েছে মঞ্চনাটক। নির্মিত হয়েছে বিনোদন পার্ক।

হ্যারি পটারের ২০ বছরে পা দেওয়া উপলক্ষে আসুন জেনে নিই এর কিছু চমকপ্রদ তথ্য—

লেখিকা সমাচার

জে কে রাওলিংয়ের পুরো নাম জোয়্যান ক্যাথলিন রাওলিং। যুক্তরাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের শিপিং সডবারি এলাকায় ১৯৬৫ সালের ৩১ জুলাই তাঁর জন্ম।

ইউনিভার্সিটি অব এক্সিটার থেকে ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করেন রাওলিং। এরপর পর্তুগালে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতার কাজ নেন। সেখানেই শুরু হয় হ্যারি পটার নিয়ে লেখাজোখা।

পর্তুগালের এক টিভি সাংবাদিক জর্জ আরানটেসাকে বিয়ে করেন রাওলিং। সময়টা তখন ১৯৯২ সাল। এর এক বছর পরই তাঁদের ঘরে আসে ফুটফুটে মেয়ে জেসিকা। তবে সংসার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি রাওলিংয়ের। বিবাহবিচ্ছেদের পর ১৯৯৫ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে চলে আসেন তিনি।

হ্যারিকে নিয়ে লেখা প্রথম উপন্যাসটি শেষ করার পরই শুরু হয় তা প্রকাশের সংগ্রাম। শেষে ১৯৯৬ সালের আগস্টে হ্যারি পটার প্রকাশে রাজি হয় প্রকাশনা সংস্থা ব্লুমসবারি। আর বইটি প্রকাশের পর ইতিহাসের অংশ হয়ে যান রাওলিং।

২০০৬ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের জীবিত লেখকদের মধ্যে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। এই সিরিজ লিখে এ যাবৎ ৭৪ কোটি ৩০ লাখ ইউরো আয় করেছেন তিনি। বিশ্বের ধনী লেখকদের মধ্যে রাওলিং অন্যতম।

২০০১ সালে ফের বিয়ে করেন রাওলিং। স্কটিশ চিকিৎসক নিল মারে ও জে কে রাওলিংয়ের সংসারে আছে একটি করে ছেলে ও মেয়ে।

গল্পের সুতো

১৯৯০-এর দশকে ম্যানচেস্টার ও লন্ডনের মধ্যকার এক ট্রেনভ্রমণ দিয়ে হ্যারির যাত্রা শুরু। তার দুই বন্ধু রন ওয়েসলি ও হারমিওনে গ্রেঞ্জার। হগওয়ার্টস স্কুল অব উইচক্রাফট অ্যান্ড উইজারড্রির শিক্ষার্থী হ্যারি ও তার বন্ধুরা। সেখানকার প্রধান শিক্ষক অ্যালবাস ডাম্বলডোর।

হ্যারি পটার সিরিজের মূল কাহিনি আবর্তিত হয়েছে কালো জাদুর অধীশ্বর লর্ড ভোলডেমর্ট ও হ্যারি পটারের মধ্যকার লড়াই নিয়ে। এককথায় শুভ ও অশুভের মধ্যে লড়াই গল্পের মূল উপজীব্য। এতে আছে প্রতিশোধের আগুনও। কারণ, হ্যারি যখন নেহাত শিশু, তখনই ভোলডেমর্টের হাতে মারা যান তার মা-বাবা। শেষে জয় হয় হ্যারির। কালো জাদুর হাত থেকে মুক্তি পায় পৃথিবী।

সাতটি বই

হ্যারি পটার সিরিজের মোট উপন্যাস ৭টি। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল—এ দশ বছরের মধ্যে প্রকাশিত হয় এসব উপন্যাস। প্রতিটি কিস্তিতে বলা হয়েছে হ্যারির জাদুর স্কুলের একেকটি বছরের কথা।

১৯৯১ সালের গ্রীষ্মে যখন হ্যারি পটারের বয়স মাত্র বছর দশেক, তখনই হগওয়ার্টের জাদুর স্কুল থেকে ডাক পায় সে। আর তা থেকেই উপন্যাসের শুরু।

আটটি সিনেমা

সাতটি উপন্যাস থেকে তৈরি হয়েছে আটটি সিনেমা। ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোওস’ নামের উপন্যাসটি নিয়ে তৈরি হয় দুই পর্বের সিনেমা। হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম দুটি সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন ক্রিস কলম্বাস। তৃতীয়টিতে পরিচালনায় আসেন আলফোনসো কুঁয়ারোন। চতুর্থ সিনেমাটি পর্দায় আসে মাইক নিউওলের হাত ধরে। আর সিরিজের শেষ চারটি পর্ব পরিচালনা করেন ডেভিড ইয়েটস।

মঞ্চে হ্যারি

২০১৬ সালে ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য কার্সড চাইল্ড’ নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয় লন্ডনে। সেখানে হ্যারি ছিল একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, যে কিনা তিন সন্তানের বাবা। নাটকে অভিশপ্ত শিশুটি হলো হ্যারির ছেলে অ্যালবাস সেভেরাস পটার। বাবার অতীত তার কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর সেই দ্বন্দ্ব নিয়েই তৈরি হয় সংকট।

হ্যারি পটার সিরিজের সাতটি উপন্যাস ২০০টি দেশে ৭৯টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে সিরিজটির প্রায় ৪৫ কোটি কপি বই বিক্রি হয়েছে। স্ট্যাটিসটিকব্রেইন নামের একটি পরিসংখ্যান সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই সিরিজের সিনেমাগুলো বিশ্বজুড়ে ৭২০ কোটি ডলার আয় করেছে। বই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭৭০ কোটি ডলারের। আর হ্যারি পটার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৩০ কোটি ডলার।

পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তা

উত্তর লন্ডনের লিভসডেনে আছে হ্যারি পটার স্টুডিও। সেখানে পটারের জাদুর জগতের দেখা পান দর্শনার্থীরা। স্টুডিওর কর্তৃপক্ষের হিসাবে, প্রতিদিন ছয় হাজার দর্শনার্থী আসে সেখানে।

এ ছাড়া ইউনিভার্সাল স্টুডিও হ্যারি পটারের নামে থিম পার্ক বানিয়েছে অরল্যান্ডো, ফ্লোরিডা, হলিউড ও জাপানের ওসাকায়। আবার স্কটল্যান্ডের টুরিস্ট বোর্ড হ্যারি পটার সিরিজের নামে চার দিনের ভ্রমণসূচিও চালু করেছে। এভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হ্যারি পটারকে নিয়ে পাঠক ও দর্শকদের উন্মাদনা চলছে।

এএফপি অবলম্বনে অর্ণব সান্যাল

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন