ভারত যুদ্ধে কত দিন টিকে থাকবে?

  18-07-2017 08:28PM

পিএনএস ডেস্ক : সীমান্ত নিয়ে এক মাস ধরে ভারত ও চীনের মধ্য উত্তেজনা চলছে। ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (২ হাজার ১৭৪ মাইল) সীমান্তের এই দুই দেশের মধ্যে ১৯৬২ সালে যুদ্ধ বাধে। এ ছাড়া কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা চলছে। এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, যদি যেকোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়, তবে কত দিন পর্যন্ত ভারত যুদ্ধ করতে পারবে? দেশটির পার্লামেন্টে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) এক প্রতিবেদনের পর এ প্রশ্ন সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে কত দিন যুদ্ধ করার মতো অস্ত্র আছে ভারতের, তা বলা হয়েছে।


২০১৫ সালের মে মাসে ভারতের পার্লামেন্টে দেশটির কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল একটি প্রতিবেদন পেশ করে। সেই প্রতিবেদনে বিস্ময়কর সত্য প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, যদি ভারতের সঙ্গে কারও যুদ্ধে বাধে, তবে কেবল ১০ দিনের মধ্যে বেশির ভাগ গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাবে।

ওই প্রতিবেদন সেনাবাহিনীর ওপর একটা আঘাতের মতো ছিল। প্রতিবেদনে শঙ্কিত হয়ে সেনাবাহিনী বলেছে, ৪০ দিন ধরে ‘তীব্র’ যুদ্ধের জন্য গোলাবারুদ থাকার কথা এখানে ‘অবজ্ঞা’ করা রয়েছে। সিএজি প্রতিবেদনে বলেছে, ‘২০১৩ সালে মার্চ পর্যন্ত অস্ত্রভান্ডারের শতকরা ৫০ ভাগের অবস্থা এমন ছিল যে গোলাবারুদ দিয়ে ১০ দিনের বেশি যুদ্ধ করা সম্ভব নয়।’

ভারতের সেনাবাহিনীর অস্ত্রের কিছু ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্য প্রধানত বন্দুক, ট্যাংক, বিমান এবং পদাতিক বাহিনীর জন্য গোলাবারুদের গুরুতর অভাব আছে। আর এই অভাব একটি যুদ্ধে লড়াই করা ভারতের জন্য খুব কঠিন হবে।

কিন্তু সেনাবাহিনী এখন সেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। সেনাবাহিনীর উপপ্রধান শরৎ চন্দ্রকে গোলাবারুদ এবং অস্ত্র কেনার পূর্ণ আর্থিক ক্ষমতা দিয়েছিল। সেনাবাহিনীর দক্ষতা বাড়িয়ে লড়াই করার জন্য সর্বোত্তম স্তর বজায় রাখার জন্যই তা দেওয়া হয়েছিল। তখন সিদ্ধান্ত ছিল, গোলাবারুদ ও অস্ত্র ক্রয় প্রক্রিয়া যেন দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।

প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, পাকিস্তান বা চীনের সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের আশঙ্কার কি বিরোধিতা করা যাবে? যদি যুদ্ধের কোনো আশঙ্কা না-ও থাকে, তবে প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য গোলাবারুদ সংরক্ষণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।

সিএজি প্রতিবেদনে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত গোলাবারুদ রক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। নরেন্দ্র মোদির সরকার ইতিমধ্যেই এ ঘাটতি পূরণে কাজ শুরু করেছে। ওই সময়ে পার্লামেন্টে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়েছিলেন। কী অস্ত্র কেনা হচ্ছে, তারও একটি তালিকা দিয়েছিলেন।

দেখে নেওয়া যাক কার হাতে কত অস্ত্র
সামরিক ক্ষমতা দিয়েই বিচার করা হয় আসলে কার খুঁটিতে কত জোর। সামরিক ক্ষমতায় বলীয়ান হতে বিত্তবান দেশগুলো নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধনী দেশগুলো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলে সর্বাধুনিক অস্ত্র বাগাতে তৎপর। এই সুযোগে পরাশক্তির দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া অস্ত্র বেচে মোটা অঙ্ক ঘরে তুলছে।

২০১৫ সালে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার (জিএফপি) বৈশ্বিক সামরিক সক্ষমতার একটি সূচক প্রকাশ করেছিল। পারমাণবিক অস্ত্র বাদ দিয়ে প্রচলিত যুদ্ধের সক্ষমতা নিয়ে করা এই সূচকে শীর্ষ পাঁচ দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত ও যুক্তরাজ্য। দেশগুলোর সামরিক সক্ষমতা বিশ্লেষণে স্থল, নৌ ও বিমান শক্তির পাশাপাশি সম্পদ, অর্থ, ভৌগোলিক বিষয়াবলি প্রভৃতি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। জিএফপির সূচক অনুযায়ী চীন ও ভারতের সামরিক ভান্ডার হলো—

চীন
সামরিক সক্ষমতায় তৃতীয় অবস্থানে আছে চীন। যুদ্ধের জন্য দেশটির সক্রিয় সদস্য ২৩ লাখ ৩৩ হাজার। সক্রিয় সংরক্ষিত সদস্য ২৩ লাখ।
স্থলযুদ্ধের জন্য চীনের ট্যাংক আছে ৯ হাজার ১৫০টি। অস্ত্রবাহী যুদ্ধযান (এএফভি) আছে ৪ হাজার ৭৮৮টি। সেলফ-প্রপেল্ড গান (এসপিজি) ১ হাজার ৭১০টি। টাওয়েড-আর্টিলারি ৬ হাজার ২৪৬টি। মাল্টিপেল লান্স রকেট সিস্টেমস (এমএলআরএস) ১ হাজার ৭৭০টি।

দেশটির মোট সামরিক বিমান ২ হাজার ৮৬০টি। যুদ্ধবিমান ১ হাজার ৬৬টি। ফিক্সড-উইং অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফট ১ হাজার ৩১১টি। পরিবহন বিমান ৮৭৬টি। প্রশিক্ষণ বিমান ৩৫২টি। হেলিকপ্টার ৯০৮টি। অ্যাটাক হেলিকপ্টার ১৯৬টি।

মোট নৌ সক্ষমতা ৬৭৩টি। বিমান বহনে সক্ষম রণতরি একটি। ফ্রিগেট ৪৭টি। ডেস্ট্রয়ার ২৫টি, করভেট ২৩টি। সাবমেরিন ৬৭টি, কোস্টাল ডিফেন্স ক্র্যাফট ১১টি, মেরিন ওয়ারফেয়ার ছয়টি।


সামরিক সক্ষমতায় ভারতের অবস্থান চতুর্থ। যুদ্ধের জন্য দেশটির সক্রিয় সদস্যসংখ্যা ১৩ লাখ ২৫ হাজার। সক্রিয় সংরক্ষিত সদস্য ২১ লাখ ৪৩ হাজার।

স্থলযুদ্ধের জন্য ভারতের ট্যাংক আছে ৬ হাজার ৪৬৪টি। অস্ত্রবাহী যুদ্ধযান (এএফভি) আছে ৬ হাজার ৭০৪টি। সেলফ-প্রপেল্ড গান (এসপিজি) ২৯০টি। টাওয়েড-আর্টিলারি ৭ হাজার ৪১৪টি। মাল্টিপেল লান্স রকেট সিস্টেমস (এমএলআরএস) ২৯২টি।

ভারতের মোট সামরিক বিমান ১ হাজার ৯০৫টি। যুদ্ধবিমান ৬২৯টি। ফিক্সড-উইং অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফট ৭৬১টি। পরিবহন বিমান ৬৬৭টি। প্রশিক্ষণ বিমান ২৬৩টি। হেলিকপ্টার ৫৮৪টি। অ্যাটাক হেলিকপ্টার ২০টি।

মোট নৌ সক্ষমতা ২০২টি। বিমান বহনে সক্ষম রণতরি দুটি। ফ্রিগেট ১৫টি। ডেস্ট্রয়ার নয়টি, করভেট ২৫টি, সাবমেরিন ১৫টি, কোস্টাল ডিফেন্স ক্র্যাফট ৪৬টি, মেরিন ওয়ারফেয়ার সাতটি। তথ্যসূত্র: ইকোনমিক টাইমস ও গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন