ভারত সেনা না সরালে সামরিক সঙ্ঘাত বাড়তে পারে

  22-07-2017 05:00PM


পিএনএস ডেস্ক: বিতর্কিত সীমান্ত থেকে দিল্লি সেনা না সরালে ভারতের সঙ্গে চীনের সামরিক সঙ্ঘাত বাড়তে পারে। ভারতকে সতর্ক করে এ খবর দিয়েছে চীনা কমিউনিস্ট সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’।

প্রতিবেদন বলা হয়, চীন ও ভারতের মধ্যে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বৃহস্পতিবার তার দেশের পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘সব দেশ ভারতের পক্ষে আছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘চীন, ভারত ও ভুটানের সীমান্ত সন্ধিক্ষণ এলাকার’ কাছে নিজেকে রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে ভারত সতর্ক রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারতীয় মিডিয়ায় এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি পার্লামেন্টে মিথ্যা কথা বলেছেন। প্রথমত, চীনা ভূখণ্ডে ভারতের ঢুকে পড়াটা পুরোপুরি সত্য বিষয়। নয়াদিল্লির তড়িৎ পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্তম্ভিত। অন্য কোনো দেশই ভারতের আগ্রাসনকে সমর্থন করবে না। দ্বিতীয়ত, ভারতের সামরিক শক্তি চীনের চেয়ে অনেক কম। চীন ও ভারতের মধ্যে সঙ্ঘাত তীব্র হয়ে গেলে সামরিক পন্থায় সমাধানের কথা ওঠবে। আর তাতে নিশ্চিতভাবেই ভারত হারবে।

প্রতিবেদন আরো বলা হয়, দোকলামে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা সৃষ্টির কল্পনা ভারতের ত্যাগ করা উচিত। আলোচনার জন্য দুই পক্ষের সেনা প্রত্যাহারের আহ্বানে চীন কোনোভাবেই রাজি হবে না। দোকলাম হলো চীনা ভূখণ্ড। আলোচনার পূর্ব শর্ত হলো ভারতীয় সেনাদের প্রত্যাহার এবং এই অবস্থানের ব্যাপারে চীন কোনো আপস করবে না।

এতে বলা হয়, আমরা লক্ষ করেছি, সম্প্রতি ভারতের অবস্থান প্রচ্ছন্নভাবে বদলে গেছে এবং বলতে শুরু করেছে, দোকলাম হলো ‘চীন, ভারত ও ভুটানের ত্রিদেশীয় সীমান্ত।’

আলোচনার জন্য দুই পক্ষের সেনা প্রত্যাহরের আহ্বান জানাচ্ছে। এই পরিবর্তন নয়া দিল্লির অপরাধী মানসিকতার প্রমাণ।

প্রতিবেদন বলা হয়, চীন এই ইস্যুতে তার অবস্থান পুনঃব্যক্ত করেছে। এ ব্যাপারে ভারতের প্রতি সর্বোচ্চ সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য প্রদর্শন করেছে। ভারতীয় সেনারা যদি অব্যাহতভাবে চীনা ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করতে থাকে, তবে নয়া দিল্লির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং অ-কূটনৈতিক পন্থার মাধ্যমে সমাধান ছাড়া বেইজিংয়ের কাছে আর কোনো বিকল্প থাকবে না।

ভারত শুনে থাকবে, পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) চীন-ভারত সীমান্তের কাছে সেনা মোতায়েন করেছে, ওই এলাকায় সরঞ্জাম ও সরবরাহ জড়ো করেছে। পিএলএ পাহাড়ি এলাকায় মহড়া চালিয়েছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসব নিশ্চিতভাবেই প্রদর্শনের জন্য নয়। এখন পিএলএ চীন-ভারত সীমান্তে সরে গেছে। তারা চীনা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার ছাড়া সেনাদের নিশ্চিতভাবেই ফিরিয়ে আনবে না।

গ্লোবাল টাইমসের দাবি, চীন এক ইঞ্চি ভূমিও ছাড় দেবে না। এটা পবিত্র ইচ্ছা এবং চীনা জনগণের অনুরোধ। চীনা সরকার জনগণের মৌলিক ইচ্ছার লঙ্ঘন ঘটাবে না, পিএলএ চীনা জনগণের পতন হতে দেবে না।

যদি নয়া দিল্লি একগুঁয়েই থেকে যায়, তবে ভারতের উচিত সম্ভব সব প্রস্তুতি নেয়া। কারণ ভবিষ্যতে উত্তেজনা মারাত্মক আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।

পিএলএ’র গতিশীলতা এবং লজিস্টিক সামর্থ্য তাদের ভারতীয় প্রতিপক্ষের মতো নয়। পিএলএ সেনারা সত্যিকারের নিয়ন্ত্রণ রেখার বাইরে আগে ভারতের নিয়ন্ত্রণে ছিল এমন সব জায়গায় আবির্ভূত হতে পারে। চীন-ভারত সীমান্ত হয়তো এমন এক মঞ্চে পরিণত হবে, যা হয়ে পড়বে চীনের দীর্ঘ মেয়াদি সামরিক উন্নয়ন ও সংস্কার অর্জনের প্রদর্শনী।

ভারতের কেউ কেউ সীমান্তে চীনের সামরিক শক্তিকে ভারতের শক্তির সাথে যেভাবে তুলনা করে তা হাস্যকর। তারা চিৎকার করে বলে, ওই এলাকায় চীনের চেয়ে ভারতের সেনা বেশি। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারছে না যে, এক দিনের মধ্যেই সীমান্তে ব্যাপক সেনা সমবেত করে ভারসাম্য বদলে ফেলার সামর্থ্য আছে পিএলএ’র। পিএলএ’র দূর পাল্লার যুদ্ধ সক্ষমতাও প্রত্যন্ত এলাকায় তার সেনা পরিবহন করতে পারে, সীমান্তে তার সেনাদের গোলাবর্ষণে সহায়তা করতে পারে। চীনের সামরিক ব্যয় ভারতের চেয়ে চার গুণ বেশি এবং চীনের জিডিপি ভারতের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। বিশাল ব্যবধান সীমান্তে দুই দেশের শক্তির ভারসাম্যের সত্যিকারের চিত্র গড়ে দেবে।

১৯৬২ সালে ফিরে যাওয়া যাক। ওই সময় নিজের ভূখণ্ড রক্ষার চীনা দৃঢ়প্রত্যয়কে ভারত অবমূল্যায়ন করেছিল। আমরা আশা করছি, ভারত ওই ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না।

ভারতের উচিত হবে না কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের কাছ থেকে সহায়তার আশা করা। কারণ তাদের সহায়তা একটা কাল্পনিক বিষয়। ভারত যদি কল্পনা করে থাকে ভারত মহাসাগরে তাদের কৌশলগত কার্ড রয়েছে, তবে তা হবে শুধুমাত্র আনাড়িপনা। চীনের হাতে আরো বেশি কার্ড আছে এবং ভারতের নাজুক জায়গাগুলোতে আঘাত হানতে বেইজিং সক্ষম। চীনের সাথে কৌশলগত মোকাবিলায় ভারতের কোনো ধরনের সুবিধা নেই।

পরিশেষে, সেনা প্রত্যাহার করতে ভারত যত দেরি করবে, তারা তত বেশি সামরিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিতে থাকবে, রাজনৈতিকভাবে তত শক্তি তারা হারাবে। ভারতের ওপর চীনের সামরিক চাপ প্রতিদিন বাড়বে, ভারত শেষ পর্যন্ত মুখ রক্ষা করতে পারবে না, সম্পূর্ণভাবে অপদস্ত হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন