যেসব কারণে হারাম আল-শরিফ এত স্পর্শকাতর?

  23-07-2017 08:00AM


পিএনএস ডেস্ক: পূর্ব জেরুজালেমে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণ: হারাম আল-শরিফে ঢোকার পথে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের মেটাল-ডিটেক্টরসহ নিরাপত্তা জোরদার করা - যা ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। একে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-সহিংসতায় এখন পর্যন্ত তিনজন ফিলিস্তিনি ও তিনজন ইসরাইলি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো অনেকে।

কিন্তু এই হারাম আল-শরিফ জায়গাটি এত স্পর্শকাতর কেন?
কারণ এই জায়গাটি ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি - এই তিন ধর্মের কাছেই পবিত্র স্থান এবং একে নিয়ে শত শত বছর ধরেই এ টানাপোড়েন চলছে।

ইহুদিদের কাছে হারাম আল-শরিফ এলাকাটির নাম 'টেম্পল মাউন্ট' এবং এটিই তাদের ধর্মে সবচাইতে পবিত্র স্থান। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, এখানেই নবী ইব্রাহিম তার পুত্র ইসমাইলকে উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। এখানেই ছিল ইহুদিদের প্রথম ও দ্বিতীয় পবিত্র মন্দির - যা ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান বাহিনী ধ্বংস করে দেয়। এখানে একটি ব্যাসিলিকাও ছিল যা একই সাথে ধ্বংস হয়। সেই মন্দিরের শুধুমাত্র পশ্চিম দিকের দেয়ালটিই এখনো টিকে আছে এবং এটিই এখন ইহুদিদের ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান।

অন্যদিকে মুসলিমদের কাছে এটি 'হারাম আল-শরিফ' এবং ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র স্থান। প্রথম যুগের মুসলিমরা মক্কার আগে এর দিকে ফিরেই নামাজ পড়তেন ।

এখানে প্রথম ছোট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর, পরে ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে এখানে প্রথম বড় আকারে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। দু'দফা ভুমিকম্পে দুবার ধ্বংস হয়ে গেলে তা পরে পুনঃনির্মাণ করা হয়। এখন যে মসজিদটি আছে তা নির্মিত হয় ১০৩৫ সালে।

এর অনতিদূরেই আছে সোনালী গম্বুজবিশিষ্ট 'ডোম অব দি রক' বা 'কুব্বাত আল-শাখরা'। ইহুদিদের মন্দির ধ্বংস করে রোমানরা এখানে দেবতা জুপিটারের একটি মন্দির তৈরি করেছিল - যেখানে পরে ৬৮১ সালে উমাইয়া খলিফা আবদ-আল মালিকের সময় নির্মাণ করা হয় এই 'ডোম অব দি রক'। ১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা এ জায়গাটি দখল করে নিলে তারা 'ডোম অব দি রক'কে একটি গির্জা হিসেবে এবং আল-আকসাকে রাজপ্রাসাদ ও নাইট টেম্পলারদের দফতর হিসেবে ব্যবহার করে।

আটকোণা এই ডোম অব দি রকের ভেতরেই রয়েছে সেই পাথরের ভিত্তি - যেখান থেকে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মিরাজে গিয়েছিলেন বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন।

ইসরাইল ১৯৬৭ সালে জেরুজালেম ও পশ্চিমতীর দখল করে নেবার আগে এটি নিয়ন্ত্রণ করতো জর্ডন। এখন পূর্ব জেরুজালেম ইসরাইল অধিকৃত। তবে আল-আকসা মসজিদ এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে একটি জর্ডন-ফিলিস্তিনী ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান।

এখন ইসরাইলিরা ওই এলাকায় যেতে পারে, কিন্তু এখানে তাদের প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ।

ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এখানে যে মেটাল ডিটেক্টর বসিয়েছে - এটিকে ফিলিস্তিনিরা এখানে ওয়াকফের কর্তৃত্বের লংঘন এবং ইসরাইলি দখলদারির দৃষ্টান্ত বলে আখ্যায়িত করছেন।

তবে ইসরাইল এটিকে একান্তই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেখাতে চাইছে, কারণ মসজিদ এলাকাতেই এক সপ্তাহ আগে এক আক্রমণে দু'জন ইসরাইলি পুলিশ নিহত হয়।

কিন্তু এই আল-আকসা এলাকাটিতে ইসরাইলি কর্মকাণ্ড প্রায় প্রতিবারই বিক্ষোভ-সহিংসতার জন্ম দিয়েছে। আল-আকসায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারনের এক বিতর্কিত সফরকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছিল ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় 'ইন্তিফাদা' বা গণঅভ্যুত্থান - যাতে ৪ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

এ জায়গাটি এতই স্পর্শকাতর যে এখানে কোন সহিংস ঘটনা শেষ পর্যন্ত আরো একটি ইন্তিফাদা ডেকে আনবে কিনা - এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেন না।
সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন