অপহরণকারীর সঙ্গে বিছানায় ঘুমিয়েছেন বৃটিশ মডেল

  14-08-2017 11:49AM

পিএনএস ডেস্ক: অপহরণকারীর সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমিয়েছেন বৃটেনের বহুল আলোচিত মডেল ক্লোই আইলিং। তাকে লন্ডন থেকে ফটোশুটের প্রস্তাব দিয়ে ইতালির মিলানে নিয়ে যায় পোল্যান্ডের নাগরিক লুকাজ হারবা (৩০)। সেখানে যাওয়ার পর তাকে আটকে রাখা হয়। এক পর্যায়ে তাকে পর্নো ওয়েবসাইটগুলোতে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু দেশে তার সন্তান আছে এ কথা শোনার পর অপহরণকারী হারবা তাকে ছেড়ে দেয়। তার আগে ওই অপহরণকারীর সঙ্গে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য তিনি এক বিছানায় ঘুমিয়েছেন। কিন্তু কেন!

অপহরণকারীর সঙ্গে কিসের এত দহরম মহরম! এমন প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে বৃটেনসহ বিভিন্ন স্থানে। এতে জনমত বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এরই জবাব দিয়েছেন অপহৃত মডেল ক্লোই আইলিং। নীরবতা ভেঙে তিনি লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মেইলকে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, আমি জানি লোকজনের অনেক প্রশ্ন আছে। তাদের জানা উচিত আমি যেটা করেছি তা বেঁচে থাকার জন্য। ওই পরিস্থিতিতে আমি মারাত্মক ভয়ে ছিলাম। তাই আমার মধ্যে একরকম উন্মত্ততা ছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম জিম্মি অবস্থায় আমাকে হত্যা করা হবে। আমার মধ্যে যে হতাশা আর মানসিক আঘাত ছিল তা আমি মানুষকে বোঝাতে পারবো না। আসল সত্য আমি জানি। আমার পরিবার জানে। আর তা বের হয়ে আসবে আদালতে।

এ নিয়ে অনলাইন ডেইলি মেইল দীর্ঘ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, কিভাবে ভুয়া এসাইনমেন্ট দিয়ে তাকে মিলানে নিয়ে যাওয়া হয়, কিভাবে অপহরণ করা হয়, কিভাবে মুখোশপরা লোকেরা তাকে জিম্মি রেখেছিল, তারপর তাকে যৌন দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল- এ সব বিষয়ে মুখ খুলেছেন ক্লোই আইলিং। তাকে মিলানের প্রত্যন্ত একটি খামারবাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল ৬ রাত। শেষ পর্যন্ত তাকে মুক্তি দেয় অপহরণকারী লুকাজ হারবা। সেই তাকে নিয়ে যায় মিলানে বৃটিশ কনসুলেটে। সেখানে তাদের হাতে তুলে দেয় ক্লোই আইলিংকে। এ নিয়ে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। অপহরণকারী হারবাকে সমাজের ভয়াবহ বিপদজনক ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মিলানের ম্যাজিস্ট্রেট ড. গিওভান্না ক্যাম্পানিল। পাশাপাশি তাকে এ বছরের শেষের দিকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো পর্যন্ত নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

২০ শে জুলাই এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি হয়েছে। তাতে এই অপহরণকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরো ৯ জনের নাম প্রকাশ করেছে হারবা। এর মধ্যে ৩ জনের বাড়ি বৃটেনের বার্মিংহামে। অপহরণকারী হারবা মিলানে ২২০০ পাউন্ডে ভাড়া এক মাস আগে ভাড়া নেয় একটি ভবন। সেখানেই ফটোশুটের প্রলোভন দিয়ে ক্লোই আইলিংকে নিয়ে যায় সে। অবরুদ্ধ হয়ে মুক্তির নানা ফন্দি আঁটতে থাকেন ক্লোই আইলিং। তিনি অপহরণকারীর মাঝে আবেগ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। এমন কি তার সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমান, যাতে তার আস্থা অর্জন করতে পারেন, নিজের স্বাধীনতা ফিরে পান। কিন্তু এ নিয়ে নানা সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এর জবাবে ক্লোই আইলিং বলেছেন আদালতেই বেরিয়ে আসবে আসল কথা। ওদিকে তার মা বিয়া বলেছেন, জিম্মিদশায় ভয়াবহ এক মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ছিল ক্লোই আইলিং। আমি জানি না মানুষ কিভাবে ক্লোই আইলিংকে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। উল্টো তাকে তো আমাদের সমর্থন দেয়া উচিত। ওদিকে তিন সপ্তাহ ধরে ইতালির পুলিশ তদন্ত করেছে এ বিষয়ে। তাতে অপহরণ ও জুলুমের দায়ে শনিবার হারবাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং ক্লোই আইলিংকে বৃটেন ফিরে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেছেন, মডেল হওয়ায় তাকে ফটোশুটের কথা বলে মিলানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি একটি স্টুডিওতে তার ফটোশুট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে নিয়ে যেখানে উঠানো হয় তা একেবারে পিনপতন নীরবতা। এমনই এক ভবনে নিয়ে তাকে ওঠানো হয়। তাতে প্রবেশপথে তিনি দেখতে পান বাম দিকে স্টুডিও লেখা। তা দেখে তিনি অল্প সময়ের জন্য আশ্বস্ত হন। এ সময় তার পরনে ছিল জারা ব্রান্ডের জ্যাকেট, গোলাপী বডি স্যুট, নীল রঙের রিভার আইল্যান্ড জিন্স। তিনি তার এসাইনমেন্টের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওই স্টুডিও লেখা দরজার দিকে এগিয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে গ্লোভস পরা হাত পিছন থেকে এসে তার মুখ আটকে ধরে।

আতঙ্কে জড়োসড়ো হয়ে গেলেন ক্লোই আইলিং। তিনি শ্বাস নিতে পারছিলেন না। মুক্ত হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। ঠিক তখনই দ্বিতীয় আরেকজন তার সামনে এসে হাজির। তার মুখ কালো মুখোশে ঢাকা। তার হাতে একটি সিরিঞ্জ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ক্লোই আইলিংকে জোর করে মেঝেতে শুইয়ে দেয়া হলো। তার জ্যাকেট টেনেটুনে খুলে নেয়া হলো। ডান বাহুতে পুশ করা হলো সিরিঞ্জ। তারপর কয়েক সেকেন্ড। অচেতন হয়ে গেলেন ক্লোই আইলিং। অপহরণ কাহিনীর মূল পর্বটি এভাবেই শুরু হয়। এ প্রসঙ্গে ক্লোই আইলিং বলেন- এটা ছিল আমার সবচেয়ে বাজে বেদনাদায়ক অবস্থা। জানতাম না ওই সিরিঞ্জের ভিতর কি আছে। আমি ভীষণ ব্যাথা পাচ্ছিলাম। মনে হয়েছিল তারা হয়তো ডাকাতি করবে না হয় আমাকে ধর্ষণ করবে। যে ভয় পেয়েছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমাকে যখন মেঝেতে ফেলে দেয়া হলো তখনই বুঝে গেলাম, আর জীবিত অবস্থায় সেখান থেকে বের হতে পারবো না। আমি আটকা পড়েছি। এটুকু ভাবতে ভাবতেই আমার চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়।

অভিযোগের পর মিলানের পুলিশ ফরেনসিক টেস্ট করেছে। তাতে দেখা গেছে তার ওপর কেটামিন নামে একটি নেশাদ্রব্য প্রয়োগ করা হয়েছিল। এতে ক্লোই আইলিং অচেতন হলে তার পোশাক একে একে খুলে নেয়া হয়। একেবারে নগ্নপ্রায় দেহের ছবি তোলে তারা। পরে তা ব্যবহার করে পর্নো সাইটগুলোতে যোগাযোগ করে অপহরণকারীরা। তারা তাকে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করে। তার পরের কাহিনী ভয়াবহ। ক্লোই আইলিং বলেন, এক পর্যায়ে আমি জেগে উঠি। দেখতে পাই একটি চলন্ত গাড়ির ভিতরে ‘বুটে’ আটকে রাখা হয়েছে আমাকে। আমার মুখ টেপ দিয়ে আটকানো। আমার দু’হাত ও পা সামনের দিকে এনে হ্যান্ডকাফ পরানো। আমি বুঝতে পারলাম একটি ব্যাগের ভিতর রাখা হয়েছে আমাকে।

এ সময় আমার শরীরে পোশাক ছিল অল্পই। হাত দিয়ে মুখের টেপ সরিয়ে ফেললাম। আমাকে যে ব্যাগে রাখা হয়েছে তাতে একটি ফুটো ছিল। তাতে আমি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছিলাম। তবে দেখতে পারছিলাম না কিছু। আমি ব্যাগের চেইন খুলে ফেলতে পারলাম এক সময়। তারপর হাত বাইরে দিয়ে চিৎকার করতে থাকি ড্রাইভার ড্রাইভার বলে। এ সময় গাড়িতে উচ্চস্বরে রেডিও বাজছিল। কিন্তু তারা আমার কথা শুনতে পেল। বুঝতে পারলাম গাড়ি থেমেছে। গাড়ির বুট খোলা হয়। ব্যাগের ছিদ্র দিয়ে দেখতে পেলাম মুখোশপরা দু’জন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। তাদের কাছে জানতে চাইলাম- কি হচ্ছে এসব? তারা জবাব দিল না। উল্টো আমার হাতের হ্যান্ডকাফ আরো শক্ত করে আটকে দিল। ভালো করে সবকিছু আটকে দিল। আবার চলতে শুরু করলো গাড়ি। আমি আবার ব্যাগের চেইন খুলতে সক্ষম হলাম। চিৎকার করলাম। তারা আবার থামলো।

আমার হাত পিছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরারো। দেখতে পেলাম আরেকটি সুটকেস। ভাবলাম তাতে ভরে আমাকে ফেলে দেবে। আমি প্রাণ হারাবো। আর কোনোদিন আমার ছেলে অ্যাশটোন ও মাকে দেখতে পাবো না। তৃতীয় দফায়ও একই ঘটনা ঘটলো। এবার মুখোশ পরা একজন আমার কাছে উঠে এলো। সে আমার পাশে শুয়ে পড়ল। বিদেশি উচ্চারণে সে আমার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করল। বলল- তুমি ভাল থাকবে। তোমার খারাপ কিছু হবে না। কিন্তু আমি তার কথায় বিশ্বাস রাখতে পারছিলাম না। এক ঘণ্টার মতো চললো গাড়িটি। এরপর থামল। খোলা হলো গাড়ির বুট। আমাকে বাইরে বের করে আনা হলো। দু’মিনিটের মধ্যে আমি পাখির ডাক শুনতে পেলাম। বুঝে গেলাম এখন আর শহরে নেই আমরা।

আমাকে একটি বাসার ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো। বসানো হলো। খুলে দেয়া হলো সব বাঁধন। ওই বাসাটি ছিল ঠাণ্ডা আর অন্ধকার। সব জানালায় ভাঙাচোরা, ময়লা। সেখানে টুকিটাকি কিছু জিনিস আছে। তখনও আমি অন্তর্বাস পরা। এ অবস্থায় ভয়াবহ এক আশঙ্কা গ্রাস করছে আমাকে। মুখোশ খোলা একজন আমাকে সেখানে লোহায় তৈরি সিঁড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে গেল। সেখানে একটি ছোট্ট রুম। একটি ছোট্ট বিছানা। আমাকে টয়লেটে যেতে দেয়া হলো। আমার সঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করলো ওই পুরুষটি। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর তারা আমাকে আবার বেঁধে ফেললো। এরপর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল। মুখোশহীন ব্যক্তি আবার ফিরে এলো। সে বললো- তাদের বস বলেছেন, ভুল নারীকে তুলে আনা হয়েছে। এ সময় একটু স্বস্তি পেলাম। লোকটি রুম ছেড়ে চলে গেল। পরে রুমে একজন লোক এলো। সে কর্কশ ভাষায় ফোনে কথা বললো।

আরেকজন এসে আমার বাঁধন খুলে দিল। মুখ থেকে টেপ খুলে দিল। আমি লোকটির দিকে তাকালাম। তার মুখে কোনো মুখোশ নেই। সে বললো- তুমি কি আমাকে চিনতে পারছো, আমাদের সাক্ষাত হয়েছিল প্যারিসে? তাকে চিনতে পারলাম। বললাম- আঁদ্রে ফটোগ্রাফার? জবাবে সে বললো- অবশ্যই আমি একজন ফটোগ্রাফার নই। আমি ব্লাক ডেথ নামের গ্যাংকের একজন সিনিয়র সদস্য। এ গ্রুপটির কাজ হলো শ্বেতাঙ্গী নারীদের অপহরণ করা ও তাদেরকে সম্পদশালী আরবদের কাছে অনলাইনে বিক্রি করে দেয়া। গ্যাংয়ের কাছে সে এমডি নামে পরিচিত। তাকে আমি চিনতে পারলাম। সে আসলে লুকাজ হারবা। সে বললো- তারা ভুল করে ফেলেছে। তারা কোনো সন্তানের মাকে অপহরণ করে না। বিক্রি করে না।



পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন