যৌবন ফিরে পেয়েছে কাতার

  15-08-2017 01:52AM

পিএনএস ডেস্ক: সৌদি আরবের নেতৃত্বে প্রতিবেশি কয়েকটি দেশ কাতারকে কূটনৈতিক ও আর্থিকভাবে অবরোধ করে রেখেছে। এই অবরোধ আরোপের পর দুই মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এর মাধ্যমে কাতারের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার চেষ্টা চলছে।

কিন্তু কাতার সবসময়ই বিষয়টিকে তার শক্তির ওপর দৃষ্টি রেখেছে; যাতে করে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। এই সঙ্কট থেকে যে বিষয়ে কাতার লাভবান হয়েছে তার একটি তালিকা দেয়া হলো:

১। অবাধ বিদেশ নীতি প্রনয়ণ; যা তার অর্থনীতিকে উপকৃত করছে:
কাতার সম্প্রতি বিশ্বের ৮০টি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা ছাড়াই দেশটিতে ভ্রমণের সুযোগ দিয়েছে। কাতার এখন এ অঞ্চলের সবচেয়ে উন্মুক্ত দেশ। কাতারের বিশেষ আতিথেয়তা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান করার জন্য দর্শণার্থীদের আমন্ত্রণ জানাতে পেরে দেশটি আনন্দিত।

২।অন্যান্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক:
প্রতিবেশি দেশগুলো কাতারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও কাতার কয়েকটি দেশের সঙ্গে তার পুরনো বন্ধনকে পুনর্নবায়ন করেছে। তুরস্ক, ওমান, রাশিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং এটি তাদের জন্য উপকারী হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

৩। নতুন বিনিয়োগের সুযোগ:
নতুন বিনিয়োগ স্থানান্তর করতে ওমান, পাকিস্তান, তুরস্ক ও ভারতসহ অন্যান্য কয়েকটি দেশের কাছ থেকে কাতার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।

৪। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ:
এই সঙ্কট কাতার এবং বিশ্বকে প্রকৃত ভণ্ডামি ও পরিকল্পিত উদ্দেশ্যকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দিয়েছে। প্রতিবেশি দেশগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য আজকে সবার সামনে সুস্পষ্টভাবে উন্মুচিত হয়েছে।

৫। একটি বৈশ্বিক সরকার যা জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রবাসী প্রতিভাকে মূল্যায়ন করে:
সম্প্রতি কাতার কয়েকজন যোগ্যতাসম্পন্ন প্রবাসীকে স্থায়ী রেসিডেন্সি কার্ড প্রদান করেছে, যা উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্য প্রথম। কাতার নিশ্চিতভাবেই এই আইন থেকে অনেক কিছু অর্জন করবে। এর ফলে দক্ষ প্রবাসীদেরকে তারা ধরে রাখতে পারবে। এসব দক্ষকর্মী যে কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

৬। সেলফের ওপর সস্তা পণ্য:
অবরোধের কারণে কাতার থেকে অন্য দেশ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির দিকে নজর দিয়েছে এবং এটি তাদের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। দেশটি এখন তুরস্ক ও ইরানসহ প্রভৃতি দেশ থেকে তার জনগণের কাছে সস্তায় আরো ভাল মানের পণ্য প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে।

৭। স্থানীয় কৃষক ও পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা:
যদিও কাতার আরো আত্মনির্ভরশীল হতে তার এগ্রো ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে, এই সঙ্কট স্থানীয় ও স্বদেশের কৃষকদের জন্য তাদের বাজার প্রসার ও আয় বৃদ্ধির নিখুঁত সুযোগ বলে প্রমাণিত হয়েছে।

৮। জিসিসি থেকে স্বাধীনতা:
জিসিসি’র সুবিধা রয়েছে। তবে, সৌদি আরব তার অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্য কাতারকে বাধ্য করেছে; যা প্রতিনিয়ত অনেক সমস্যার জন্ম দিয়েছে। বিশ্ব এবং অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলোর কাছে সৌদি তার নিজেকে একটি বড় শক্তি প্রমাণ করার জন্য ছোট ছোট দেশগুলোকে ব্যবহার করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

এই সঙ্কটের ফলে কাতার স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে, তার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এই ধরনের হস্তক্ষেপ এবং অপমান আর যাইহোক বিনোদন হিসেবে গ্রহণ করা হবে না।

৯। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক:
এটা স্পষ্ট যে মার্কিন সরকার কাতারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং বিশ্বের সন্ত্রাসবিরোধী সমস্যা সমাধানে তার প্রচেষ্টাকে প্রশংসা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্য কাতার সর্বপ্রথম একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এজন্য প্রকাশ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন কাতারের ভূয়সী প্রশংসা করেছিল।

১০। সরকারের প্রতি দেশের জনগণের ভালবাসা:
উপসাগরীয় অঞ্চল বা মধ্যপ্রাচ্যের বিপ্লবের ইতিহাসে যুদ্ধ এবং গৃহযুদ্ধ একটি অতি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কাতার সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম। কাতারের শাসকদের প্রতি দেশটির জনগণকে কোনো ধরনের সহিংসতা বা বিপ্লব করতে দেখা যাইনি। কারণ হিসেবে বলা যায় থানি’র সরকার সর্বদাই তাদের বাসিন্দা বা নাগরিকের চাহিদাকে প্রাধাণ্য দিয়ে থাকে এবং এটিই জনগণকে কাছে নিয়ে এসেছে।

সূত্র: কাতারস্কুপ ডটকম

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন