প্রাপ্তবয়স্ক আয়ারল্যান্ডের নারীদের কথা

  21-08-2017 01:06AM



পিএনএস ডেস্ক: উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফাস্টের কজন নারী তাদের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন, শিক্ষা জীবন পার হয়ে চাকরি জীবনে প্রবেশের যে অভিজ্ঞতা তারই বর্ণনা দিয়েছেন তারা। তাদের কজনের গল্প এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো:

শ্যানেন: আমি নার্স হতে চাই। এজন্য আমার প্রশিক্ষণ, আর সে লক্ষ্যেই আমি টাকা জমাচ্ছি। কিন্তু এখন আমি একটি নাইটক্লাবে খাদ্য পরিবেশনের কাজ করি। আমার সবসময়েই ‘বার’ এর কাজ পছন্দ, সেখানকার পরিবশেও আমার ভালো লাগে। এখানে যে উচ্চস্বরে গান বাজে, তার প্রতিটি ছন্দ আমি উপভোগ করি।

নোংরা মনের কিছু পুরুষ আসে মাঝেমধ্যে, তাদের উপেক্ষা করে চলতে হয়। আর যদি সে নিতান্তই বাজে লোক হয়, আমি তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই।

সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত আমি কাজ করি।

একটা সময় ছিল যখন এখানে কোনো মেয়েই কাজ করতো না। শুধু পুরুষেরা কাজ করতো। কিন্তু এখন এ পেশায় অনেক মেয়ে কাজ করতে আসছে। আমরা একটা পরিবারের মতো কাজ করি।

বেলফাস্টের পরিবেশ মনে হয় অন্য অনেক জায়গা থেকে আলাদা, কারণ এখানে ধর্ম (ক্যাথলিক ও প্রটেস্টেন্ট) নিয়ে অনেক বেশি বাড়াবাড়ি চলে।

এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে আপনি যেতে পারবেন না। আমিও সেভাবেই চলতাম।

জেইড: একটি সুপার-চার্চের যুবকর্মী আমি। প্রায় একহাজার মানুষ নিয়ে আমাদের প্রার্থনা হয়। এই চার্চে ব্যায়ামাগার ও ক্যাফে আছে, শিশুদের খেলার জায়গা আছে। একটা কলেজও আছে।

আমরা আমাদের ধর্মপ্রাণ মানুষ বলি না। এটা আসলে যিশুখ্রিস্টের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়।

১৯ বছর বয়সে আমি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করি। এর আগে চার্চ সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল যে এখানে আসতে হলে আমাকে একরকমভাবে ভাবতে একটা নির্দিষ্ট চিন্তাচেতনার মধ্যেই আবদ্ধ থাকতে হবে। আমি কখনো চার্চে প্রবেশও করিনি।

যখন তরুণদের সাথে কাজ করতাম আমি বাইরে ঘুরতাম, পার্টি করতাম, মদ পান করতাম। আমি ‘জাজমেন্টাল’ ছিলাম না। কিন্তু যখন মনে হলো ঈশ্বরকে মেনে চলবো, তখন পার্টি ও মদ সবকিছু ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেই।

এর আগে কিন্তু সবসময় মনে হতো- আমার জীবনে কী যেন নেই! এখানে এসে আমি দেখলাম ‘ঈশ্বরের সঙ্গে থাকাটাওতো অনেক আনন্দের’।

অনেক ঐতিহ্যবাহী চার্চ আছে যারা নারীদের ধর্ম সম্পর্কিত শিক্ষা প্রদান করতে দেয়না। কিন্তু এখানে আমি প্রতি শুক্রবার এই কাজটা করতে পারি। চার্চে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করাটাও অনেক বড় বিষয়।

কিন্তু এখন পরিবেশ ততটা খারাপ নয় যতটা বছরখানেক আগেও ছিল। খুব অদ্ভুত লাগতো। এই এলাকা আসলে বৈচিত্রতায় ভরা। আমার মা একজন প্রটেস্টেন্ট আর বাবা ক্যাথলিক। সুতরাং আমরা দুই গোত্র একত্রিত বলতে পারেন।

লুসি ও জেনা: বেলফাস্ট যেন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠে সেই চেষ্টা গত দেড় দশক ধরে করছে কর্তৃপক্ষ। দুজন বন্ধুর সঙ্গেই কথা হয়েছে।

লুসি বলছিলেন ‘আমার মাথায় চুল নেই বলে অনেকে খুব অবাক হয়। নারীদের যেমন দেখতে হওয়া উচিত তেমনতো আমি নই। আমি কিন্তু মদ বা ড্রাগ নেই না। আর আমি ধর্মও মেনে চলি। মূল ভূখণ্ড থেকে আমরা কিন্তু দশ বছর পিছিয়ে আছি।

সত্তর ও আশির দশক ছিল শিল্প ও সংস্কৃতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। কিন্তু আমরা ছিলাম যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। আপনার শহরেই যদি অভ্যুত্থান ঘটে তাহলে কি শিল্প নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে?’

‘এখন এ চেষ্টা করা বৃথা। কারণ ৩৫ বছরের বয়সীরা এখানে অনেক নীচু মানসিকতার’।

অন্যদিকে জেনা বলছেন যে তিনি একজন নাস্তিক।

‘আমার পরিবার কিন্তু প্রটেস্টেন্ট কিন্তু আমার সিদ্ধান্তের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আছে। এখানকার নারীরা অনেক ট্রাডিশনাল। পুরুষেরা ‘সুন্দরী নারীদের’ পছন্দ করে, যাদের নখ থাকবে চুল থাকবে বড়, গায়ের রঙটাও হবে আকর্ষণীয়’।

‘লুসি ও আমি পুরোপুরি বিপরীত। কিন্তু আমরা ভালো বন্ধু। আমি এমন কাজ করি যা সে কখনো করবে না, কিন্তু এ নিয়ে সে আমাকে কখনো বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাবে না’।

লরা: তরুণীদের ওপর অনেক চাপ আছে এখানে। এখানে যে ‘বিউটি কুইন ইন্ডাস্ট্রি’ গড়ে উঠেছে তা আপনাকে মনোকষ্টের মধ্যে ফেলবে যে আপনার চারপাশেতো সুন্দরীদের বসবাস!

আপনি যখন মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়া দেখবেন, বা কোনো টিভি শো যেমন মেইড ইন চেলসি ধরনের কিছু, আপনার মনে হবে দারুণ বাস্তব জিনিসতো। কিন্তু আসলে বাস্তবে এমনটা নয়।

আমি নারীবাদী, সমতায় বিশ্বাস করি। আমি স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট হতে চাই।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন