অশান্ত দার্জিলিংয়ে পরপর বিস্ফোরণ, হাই এলার্ট জারি

  21-08-2017 01:43PM


পিএনএস ডেস্ক: গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পাহাড় আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দার্জিলিং শহর এবং কালিম্পং শহরে পর পর দু’দিনের বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে প্রশাসন চিন্তিত। পাহাড় জুড়ে হাই এলার্ট জারি করা হয়েছে। চলছে ব্যাপক তল্লাশি। কালিম্পং শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে দার্জিলিংয়ের পুরনো বাজার এলাকায় আইইডি বিস্ফোরণে কেউ হতাহত না হলেও শনিবার রাতে কালিম্পং শহরে থানার উপর গ্রেনেড আক্রমণে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন এক আধা সেনা জওয়ান ও এক হোমগার্ড। এর ৫২ মিনিটের মধ্যেই কালিম্পং থানার গেটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ হয়েছে। তদন্তকারীরা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানতে পেরেছেন বাইকে করে এসে দুবৃত্তরা গ্র্রেনেড ছুঁড়েছিল। দুটি ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের তীব্রতা ছিল যথেষ্ট বেশি।

পুলিশের অনুমান, দার্জিলিংয়ে শক্তিশালী ‘ল্যান্ডমাইন’ বানানোর মহড়া দিতে ঘটানো হয়েছে এই মাঝরাতের বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থল থেকে জিলেটিন স্টিক, ডিটোনেটর, ব্যাটারি উদ্ধার করার পরে এই সন্দেহ জোরালো হয়েছে। গত জুন মাসে একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গুদাম থেকে ২৪টি জিলেটিন স্টিক চুরি হয়ে গিয়েছিল। শনিবার রাতে কালিম্পংয়ে যে দুটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছোঁড়া হয়েছিল তাতে টাইমার লাগানো ছিল। দুটি ক্ষেত্রেই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতিসহ ৫ মোর্চা নেতার বিরুদ্ধে আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন আইনে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং বিস্ফোরক আইনে পুলিশ মামলা রুজু করেছে।

গোয়েন্দারা মনে করছেন, আলোচনাপন্থীদের ঠেকাতে সরকারের সঙ্গে বড় রকমের সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি কট্টরপন্থী গোষ্ঠী। তারাই পাহাড়ে শক্তিশালী ‘ল্যান্ডমাইন’ বানানোর মহড়া দিতে ঘটিয়েছে এই মাঝরাতের বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থল থেকে জিলেটিন স্টিক, ডিটোনেটর, ব্যাটারি উদ্ধার করার পরে এই সন্দেহ জোরালো হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে মোর্চা।

তাদের মতে, গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে ভেস্তে দিতেই লাগাতার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, মোর্চা নেতাদের ফাঁদে ফেলার এই ষড়যন্ত্রে রাজ্যের ভূমিকা রয়েছে। মোর্চার অভিযোগ, যারা গোর্খ্যাল্যান্ড চায় না, তারাই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

পুলিশের উপরে হামলায় যুক্ত সন্দেহে ইতোমধ্যেই নেপালের এক মাওবাদী ধরা পড়েছে। পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, মাওবাদী এলাকায় যেমন হয়, এই দার্জিলিংয়ের বিস্ফোরণের সঙ্গে তার খুব মিল আছে। পুলিশের সন্দেহ, রাতের বিস্ফোরণ স্রেফ মহড়া দেয়ার জন্যও হয়ে থাকতে পারে। আবার কোনো টহলদারি ভ্যানকে নিশানা করারও চেষ্টা হতে পারে এটি।

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, অনেক বড় মাথা রয়েছে এর পিছনে। সারা বাংলাকে অশান্ত করার গভীর চক্রান্ত চলছে।

উল্লেখ্য, পাহাড়ে ৭০দিন ধরে টানা বনধ চলছে। স্কুল কলেজ সব বন্ধ। চা বাগানে ব্যাহত চা উৎপাদন। গত জুন মাসে সরকার পশ্চিমবঙ্গের সব স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা পড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পরেই মোর্চা এর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দার্জিলিংয়ের ক্ষেত্রে এই ঘোষণা প্রযোজ্য নয় মর্মে ঘোষণা দেয়ার পরও মোর্চা আন্দোলন থেকে সরে আসেনি। বরং গত ১২ জুন থেকে মোর্চা পাহাড়ে লাগাতার বনধ শুরু করেছে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে।

ইতোমধ্যেই পাহাড়ের সব কটি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন সমন্বয় কমিটি। তবে আন্দোলনকারীরা ভারত সরকারের কোনো সমর্থন না পেয়ে অনেকটাই হতাশ। এই মুহূর্তে আন্দোলনের পথ থেকে আন্দোলনকারীরা সরে আসতেও চাইছেন না। বরং আন্দোলনকে অন্য খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এই আন্দোলনের পিছনে নেপালের মাওবাদী এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের জঙ্গীদের যোগাযোগ রয়েছে বলে রাজ্য সরকার বিভিন্ন সুত্রে জানতে পেরেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন