বিবিসির কাছে মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার আজিজের বর্ণনা

  17-09-2017 02:08PM



পিএনএস ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কারণে কয়েক লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আব্দুল আজিজ নামে এক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কাছে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি বললেন, 'সেদিন ছিল বুধবার। বিকেলে আসরের নামাজ পড়তে বের হয়েছি। সে সময় আমাকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। '

আব্দুল আজিজ বলেন, আমার বাড়ি রাখাইনের গারোতো বিলে। বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছু্ই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। চোখ খুললে বুঝতে পারলাম আমাকে একটা 'গ্যারানের টেরায়' যাকে বলা হয় 'গোয়াল ঘরে' নিয়ে রাখা হয়েছে। দেখলাম ঘরভর্তি মানুষ। আমার মতোই তাদেরকেও ধরে নিয়ে আসা হয়েছে।

তিনি বলেন, সেখানে আমাদেরকে নিয়ে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

যখন বেঁধে রেখেছিল তখন দুজন পাহারা দিয়েছে, কারোর বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। প্রচণ্ড মারধর করে আমাকে। তারা মিয়ানমার ভাষায় বলছিল 'লো কালা' অর্থাৎ তোরা আমাদের দেশি না, তোরা বাঙালি, তোরা ওখানেই চলে যা।

নির্যাতিত আব্দুল আজিজ বলেন, আমার সামনে কয়েকজনকে জবাই করছে আবার কাউকে কাউকে গুলি করে মেরেছে। গুলি মারার পর তখনো যদি সে নড়তে থাকে তাহলে তাকে জবাই করে দেয়।

আব্দুল আজিজ বলেন, পাহারাদাররা যখন দরজা থেকে সরে গেছে তখন তাদের অবস্থান দেখে আমি পালিয়ে আসি। আমাকে ধরে নিয়ে গেছিল আসরের সময় আর আমি পালিয়ে আসি এশার নামাজের সময়।

তিনি বলেন, আমি যখন ওইখান থেকে বের হয়ে আসি তখন যাদেরকে তখনো হত্যা করেনি তাদের সবার হাত পা বাঁধা ছিল। এর পর কি করেছে আমি জানি না। আমি যখন এসেছি তখনো ওইখানে অনেক মানুষ ছিল, শুধু ছিল পুরুষ মুসলিম, কোনো মহিলা ছিল না।

আব্দুল আজিজ বলেন, আমি যখন বাড়ি ফিরে আসি তখন দেখি আমার ঘর আগে যে রকম ছিল সে রকম আর নেই। আমার বাড়ি বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছে নাকি ম্যাচের আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে সেটা আমি জানি না, কিন্তু আমার প্রতিবেশীরা বলেছে বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এর পর থেকে আমার মা-বাবার সাথে দেখা হয়নি, বাংলাদেশে এসেও তাদের খোঁজ পাইনি।

তিনি বলেন, ওখানে মুসলিমের কোনো দাম নাই, খাবার পানি দেয় না। ভয়ে আতঙ্কে আমার গলা শুকিয়ে আসছিল। বন্দি অবস্থায় দু-আড়াই ঘণ্টা ছিলাম তখন অন্যদের জিজ্ঞাসা করেছি এখানে কোনো খাবার পানি দেয় কিনা, তারা বলেছে, কোনো খাবার বা পানি দেয় না।

'ওখানে যুদ্ধ করছে এমন কোনো রোহিঙ্গা আমরা পাইনি। ওখানে যুদ্ধ করার মতো লোক আছে বলে আমার মনে হয় না,' বলেন আব্দুল আজিজ।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন