মায়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের আহ্বান ইরানের

  22-09-2017 11:01AM


পিএনএস ডেস্ক: রাখাইন সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি সংহতি প্রদর্শন এবং ইসলামি দেশগুলোর পক্ষ থেকে মায়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছে ইরান।

ইরানি বিশেষজ্ঞরা রাখাইন রাজ্যে চলমান সঙ্ঘাতকে ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতি নির্মূল অভিযান’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন।

ইরানি বিশেষজ্ঞ সাবাহ জানগান স্পুটনিক পারসিয়ানে তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, মায়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলার একটি উপায় হচ্ছে বর্মি সরকারের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা হ্রাস করা। এর ফলে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং স্টেট কাউন্সিলর আং সান সু চির ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।

ইরানি পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সাবেক রাষ্ট্রদূত সাবাহ বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালিত সহিংসতার ব্যাপারে নিস্ক্রিয় থাকা এবং সামরিক বাহিনীর মুসলিম অধিবাসীদের গণহত্যর প্রতি সমর্থন দেয়ার কারণে সু চির নোবেল পুরস্কার কেড়ে নিতে হবে।

ইরানি এই রাজনীতিবিদ বলেন, বর্মি সামরিক বাহিনীকে কোনোভাবেই শাস্তি থেকে রেহাই দেয়া যাবে না। দায়ী প্রত্যেককে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, এটা হলো ইরানের অন্যতম দাবি।

মায়ানমারের সাথে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও তারা সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা দুর্দশাগ্রস্ত রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য সহায়তা দিচ্ছে।

সাবাহ বলেন, জাতিসঙ্ঘ, ওআইসি এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থার মাধ্যমে ইরান কাজ করে যাচ্ছে। ইরান কূটনৈতিক অঙ্গনেও সাফল্য পেয়েছে।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি পোপের প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাত করেছেন। তিনি বলেন, ভ্যাটিকানও মায়ানমার সঙ্কট অবসানে কাজ করতে রাজি হয়েছে।

ইরানি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অব দি মিডল ইস্টের সিনিয়র গবেষক মোহাম্মদ আলী মোহতাদি রাখাইন রাজ্যের চলমান গোলযোগকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে রক্তপাত বন্ধে জাতিসঙ্ঘের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি মায়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটকে ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার তুলনা করে বলেন, জাতিসঙ্ঘ এবং অন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বর্তমান সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি।

মায়ানমার সঙ্কটে সম্পদশালী পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো পর্যাপ্ত নজর দেয়নি বলেও তিনি তাদের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, ওআইসির উচিত ইসলামি সংহতি প্রকাশে উদ্যোগ নেয়া। কারণ ইরান একা সমস্যাটির সমাধান করতে পারবে না।

এ ব্যাপারে তিনি সমস্যাটির সমাধান খুঁজে পেতে মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের বিবৃতির কথা উল্লেখ করেন।

গত ৮ সেপ্টেম্বর রাখাইন সঙ্কট অবসানে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জাতিসঙ্ঘের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন।

এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর তেহরানে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাক্ষাত করেন আর্চবিশপ পল রিচার্ড গ্যাঘারের সাথে। তারা অন্যান্য ইস্যুর সাথে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন।

অন্যদিকে ইরানি সুপ্রিম নেতা আলী খামেনি মায়ানমার সরকারের ওপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় ধরনের চাপ প্রয়োগের প্রস্তাব করেছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা সঙ্কটের সাথে পরিচিত ইরানি কূটনীতিক সৈয়দ হাদি আফগাহি স্পুটনিককে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ইরান তার সাহায্যের প্রথম চালানটি পাঠিয়েছে। তারা দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিমদের জন্য তাদের মানবিক সহায়তা বাড়ানোর কথা ভাবছে। তিনি বলেন, ৫০ টনের সাহায্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে পৌঁছেছে।

গত ২৫ আগস্ট নতুন করে মায়ানমার বাহিনী তাদের অভিযান শুরু করে। অভিযানের নৃশংসতায় চার লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন