রোহিঙ্গা সঙ্কটের এক মাস: মায়ানমার কি ফিরিয়ে নিবে তার নাগরিকদের?

  26-09-2017 11:43AM

পিএনএস ডেস্ক:মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ঠিক এক মাস আগে শুরু হওয়া এই আগমনের ঢল এখনো অব্যাহত রয়েছে।

২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া শরণার্থীদের এই ঢলে ইতোমধ্য ৪ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এসব শরণার্থীদের মধ্য কমপক্ষে ৪২০,০০০ শিশু রয়েছে।

অসহায় এসব মানুষদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনি এই সমস্যা সমাধানে খুব বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্যের আশা করতে পারেন না।

তারা সতর্ক করে দিচ্ছেন, এই সমস্যার যদি কোনো সমাধান না পাওয়া যায় তবে বাংলাদেশের শান্ত আবেগটি সহজেই শীতল হতে পারে।

লন্ডনের ‘চ্যাথাম হাউস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ইনস্টিটিউটে’র এশিয়া প্রোগ্রামের প্রধান চম্পা প্যাটেল এএফপি নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ‘বাংলাদেশ একা এই সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এমনিতেই ঘনবসতিপূর্ণ, দরিদ্র এবং অনেক আগে থেকেই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যরা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ শরণার্থীদের স্বাগত জানালেও এই সঙ্কট সমাধানের সুস্পষ্ট সম্ভাবনা ছাড়াই অব্যহতভাবে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ফলাফল উল্টো হতে পারে।’

সেখানে পর্যাপ্ত খাদ্য, পানি বা ঔষধ নেই। ক্যাম্পের চারপাশে সড়কটি মানুষের মলমূত্রে ভরে গেছে। এতে করে খুব দ্রুত মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিনিধি জোনাহ হুল বলেন, ‘মৌলিক স্যানিটেশনের অভাবের অর্থ হচ্ছে রোগের বর্তমান ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়া এবং সহায়তার প্রচেষ্টাই কেবল তাদের চাহিদাকে পূরণ করতে পারে।’

বাংলাদেশের জনগণ রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণের ভয়াবহ কাহিনী এবং গণহত্যার খবরে সমবেদনা প্রকাশ করেছে। দেশটির জনসাধারণের দানকৃত বিভিন্ন মালামাল নিয়ে ট্রাকের বহর প্রতিদিনই কক্সবাজারে আসছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান সতর্ক করেছেন যে এই সঙ্কট দীর্ঘায়িত হতে পারে।

ইউএনএইচসিআর-এর প্রধান ফিলিপ গ্রান্ডে আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের এমন সমস্যা জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে যা কিছু সময়ের জন্য দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগ করার কথা অনেক বার বলেছেন, তাই আমাদের জন্য তার সহায়তাও প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এটা উপেক্ষা করতে পারি না যে এই লোকগুলো ফিরে যাওয়ার অধিকার রাখে।’

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান করার জন্য বৈশ্বিক সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু মায়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।

মায়ানমার কি তাদের ফিরিয়ে নিবে?
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য শেখ হাসিনা মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ কিংবা পশ্চিমা দেশগুলো মায়ানমারে ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি বা প্রভাবশালী ক্ষমতাধর জেনারেলদের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করতে পারবে সেটাই প্রশ্ন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ-মায়ানমার সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলী রিয়াজ এএফপিকে বলেন, ‘এই সঙ্কটের স্বল্পমেয়াদি ও চূড়ান্ত সমাধানের চাবিকাঠি মায়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে।’

রিয়াজ বলেন, ‘মায়ানমারের গত কয়েক দশক ধরে একটি চরমপন্থী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটেছে।’

ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের প্রফেসর এবং দক্ষিণ পূর্ব এশীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জাখারি আবুজা মতে, মায়ানমারে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের ‘রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কিছু কার্যকর সরঞ্জাম’ রয়েছে।

কোনো আঞ্চলিক দল এটিকে অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। রোহিঙ্গাদের জন্য ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে। মায়ানামরসহ উভয় দেশই আসিয়ানের সদস্য।

তিনি বলেন, ‘আসিয়ানের মাধ্যমে মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু তারা তা করতে যাচ্ছে না কারণ রোহিঙ্গা সমস্যা আসিয়ানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।’

মায়ানমারকে প্রভাবিত করার চাবিকাঠি চীন ও ভারতের হাতে রয়েছে।

চ্যাথাম হাউসের প্যাটেল বলেন, ‘অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণেই উভয় দেশ মায়ানমার সরকারকে সমর্থন করেছে।’

মায়ানমারের জেনারেলরা কারো পরোয়া করছেন না বলে মন্তব্য করেন আবুজা।

তিনি বলেন, ‘বার্মিজ সামরিক নেতৃত্ব তার কর্মের জন্য কূটনৈতিক ব্যয়ে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। আমি মনে করি এটা বুঝা গুরুত্বপূর্ণ যে তারা এই সহিংসতা সৃষ্টির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চুলকানি দিচ্ছে।’


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন