চীন-ভারত লড়াই

  16-10-2017 02:06PM

পিএনএস ডেস্ক: ভুটান সীমান্তের বিতর্কিত ত্রিদেশীয় অঞ্চল ডোকলামে বেশ কিছুদিন উত্তেজনা ছিল চীন ও ভারতের মধ্যে। এবার শ্রীলঙ্কায় বিমানবন্দরের অধিকার পাওয়ার লড়াইয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য নিয়ে জমে উঠেছে ভারত-চীনের কূটনৈতিক লড়াই। পাশাপাশি, দু’দেশের সীমানা বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ডোকলাম পরিস্থিতি নিয়ে চীনের সঙ্গে বৈঠক করেছে ভুটান।

ভারতীয় একটি মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য কায়েম করতে বহু বছর আগেই ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ নীতি গ্রহণ করেছিল কমিউনিস্ট বেইজিং। লক্ষ্য বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশে বিনিয়োগ, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে ভারতকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা।

শ্রীলঙ্কা সরকার সে দেশের হাম্বানতোতায় চীনের বিনিয়োগে তৈরি তথা লোকসানে চলা ‘মাতালা রাজাপাকসে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ (এমরিয়া)-কে ভারতের ব্যবহারের জন্য তুলে দিতে চাইছে। বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে কথাবার্তাও অনেকটা এগিয়ে গেছে।

ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এই এমরিয়া বিমানবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর ঠিক পাশেই রয়েছে হাম্বানতোতা গভীর সমুদ্র বন্দর। যা চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পের অন্যতম অঙ্গ। সম্প্রতি এই বন্দরটি ৯৯ বছরের জন্য কলম্বোর থেকে লিজ নিয়েছে বেইজিং। শ্রীলঙ্কার এই বন্দরের মাধ্যমে চীন যখন ভারত মহাসাগরে দখল নিতে চাইছে, তখন বেইজিংয়েরই ঋণে তৈরি বিমানবন্দর হাতে নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্দেশে কূটনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে নয়াদিল্লি।

ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, এর মাধ্যমে দিল্লি বোঝাতে চাইছে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন সহজে চলাফেরা করতে পারছে না, ভারত কর্তৃত্ব কায়েমকারী শক্তি হিসেবে উঠে আসছে। আর সেই লক্ষ্যেই মিয়ানমারে পরিকাঠামোগত বিনিয়োগের জন্য সেদেশের সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যাতে ডোকলাম পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ছোট দেশগুলো ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলে।

যদিও, বেইজিং বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মেলবার্তায় জানিয়েছে, এলাকায় শান্তি, স্থিতাবস্থা, উন্নয়নের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট দেশ (শ্রীলঙ্কা) পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে বলে আশা করি।

এদিকে, দু’দেশের সীমানা বিতর্কের মধ্যে ডোকলাম পরিস্থিতি নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে থিম্পু। গত ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাসে ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লুয়ো ঝাওহুইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভুটানের রাষ্ট্রদূত ভেটসপ নামগিয়েল। কারণ, কূটনৈতিক জয়ের লক্ষ্যে চীন যেনতেনপ্রকারেন ভুটানকে কাছে টানতে চাইছে। তাই ডোকা লা থেকে ভারত-চীনের সেনা সরানোর পর ত্রিদেশীয় সীমান্ত নিয়ে ভুটান-চীনের মধ্যে যেকোনো আলোচনা ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চেন্নাই-বেঙ্গালুরু বুলেট ট্রেন প্রকল্পে গড়িমসি চীনের হঠাৎ করেই চীনের ‘অনীহায়’ থমকে গেল দক্ষিণ ভারতের একটি বুলেট ট্রেন প্রকল্প। কর্মকর্তাদের দাবি, ডোকলাম-ইস্যুর জন্যই এই গড়মসি চীনের।

ভারতের ৯টি উচ্চ-গতির রেল প্রকল্প সংক্রান্ত রেল মন্ত্রণালয়ের পেশ করা একটি অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে যে— ৪৯২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চেন্নাই-বেঙ্গালুরু-মহীশূর করিডরের কাজ এখন প্রায় অথৈ পানিতে পড়ে রয়েছে।

ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় এক বছর আগে এই রুটে সমীক্ষা চালিয়েছিল চীনা রেল। কিন্তু, তারপর থেকে চীনের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি বলে অভিযোগ। রিপোর্টের দাবি, বহুবার চীনা রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, উল্টোদিক থেকে কোনো উত্তর আসেনি।

রেল বোর্ডের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দাবি, গত ১৬ জুন থেকে ২৮ অগাস্ট—ডোকলামে ভারতের সঙ্গে যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল চীনের, তার ফলেই সম্ভবত এই প্রকল্পের কাজ নিয়ে আচমকা তাদের মধ্যে অনীহা তৈরি হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা জানান, ২০১৪ সালে এই রুটের সমীক্ষা শুরু হয়। তার রিপোর্ট জমা পড়ে ২০১৬-তে। সমীক্ষার পুরো খরচও বহন করে চীনা রেল। এমনকী, তারা এই প্রকল্প ছাড়াও অন্য প্রকল্পগুলি নিয়ে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিল।

কিন্তু, গত ৬ মাস ধরে, তাদের সঙ্গে ক্রমাগত ই-মেল মারফৎ যোগাযোগ করা হলেও কোনো উত্তর আসেনি। এমনকী, দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও কোনো ফল হয়নি।

মুম্বই-আহমদাবাদ বুলেট প্রকল্প নিয়েও আশাপ্রকাশ করেছিল চীন। কিন্তু, সেই বরাত চলে যায় জাপানের কাছে। এছাড়া, মুম্বই-দিল্লি সেক্টরেও ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে চীন। ভারতের রেল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বেইজিং। চিনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশের প্রথম রেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে ভারতে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন