পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গিবিমান নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতীয় বিমানবাহিনী

  18-10-2017 11:31AM

পিএনএস ডেস্ক: ইন্দো-রুশ পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গিবিমানের (এফজিএফএ) পরিকল্পনা করা হয়েছিল প্রায় এক দশক আগে। উভয় দেশ এর নকশা ও উন্নয়নে ইতোমধ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে ফেলেছে।

এফজিএফএ ভারতীয় বিমানবাহিনীর ভবিষ্যতের অংশ। কিন্তু ভারতীয় বিমান বাহিনী এই প্রকল্প নিয়ে তাদের সংশয়ের কথা লিখিতভাবে সরকারকে জানিয়েছে। এখন মোদী সরকারকেই বিষয়টির সুরাহা করতে হবে।

সরকার কি বিমানবাহিনীর উদ্বেগের বিষয়টি আমলে নিয়ে কয়েক বছরে বিপুল ব্যয়ের পর প্রকল্পটি বন্ধ করে দেবে? বিষয়টি হবে খুবই কৌশলী। কারণ রাশিয়া এখনো ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সামরিক মিত্র। ফলে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বন্ধ করে দেয়া হলে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়নের সৃষ্টি হতে পারে।

তাছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে নিশ্চিতভাবেই চাপ আসবে। আবার প্রকল্পটি নিয়ে এগিয়ে গেলে ভারতীয় বিমান বাহিনী অসন্তুষ্ট হবে।

এয়ার মার্শাল এস বর্তমানের (অবসরপ্রাপ্ত) রিপোর্টের পাশাপাশি বিমান বাহিনী একটি নোট পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। সহকারী চিফ অব এয়ার স্টাফ (প্লান্স) এয়ার ভাইস মার্শাল বি ভি কৃষ্ণ নোটটি লিখেছেন। বর্তমান যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে প্রকল্পটি সমর্থন করা হয়েছে মনে হলেও কৃষ্ণের নোটে সংশয়ের সৃষ্টি করা হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই সরকারকে বুঝতে হবে, বিমান বাহিনী কী চায়। মনে হচ্ছে, ওই বিমানের প্রতি বিমানবাহিনী খুব বেশি আগ্রহী নয়।

তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুন জেটলি বিষয়টি নিয়ে প্রেজেনটেশনও করেছিলেন। সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে বিমানবাহিনী প্রধান মার্শাল বি এস ধানোয়া বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, এটা গোপন বিষয়। তবে বিমান বাহিনীর বিমানগুলো নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকার কয়েকটি বিষয় প্রকাশ পেয়েছে।

রুশদের তথ্যমতে, রাডার ক্রস-সেকশন সারফেস এরিয়া হবে ০.৫ বর্গমিটারের কম। কিন্তু ভারতীয় বিমান বাহিনী নিশ্চিত নয়, ঠিক এমনটা হবে কিনা। মনে করা হয়ে থাকে, এটা হওয়া উচিত ০.২ বর্গমিটার। মার্কিন জঙ্গিবিমান এফ-৩৫-এ এমনটাই রয়েছে। ক্রস-সেকশন যত উঁচু হবে, রাডারে তার ধরা পড়ার আশঙ্কা তত বেশি। আর তাতে সেটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা তত সহজ হয়ে যায়। অর্থাৎ ক্রস সেকশন বেশি হলে বিমানটি নাজুক হয়ে যায়।

ইঞ্জিনের পারফরমেন্স নিয়েও ভারতীয় বিমান বাহিনী দৃশ্যত অসন্তুষ্ট। ইঞ্জিনে ‘মডুলার কনসেপ্ট’ অনুসরণ করা হলে তা রক্ষণাবেক্ষণ অনেক সহজ হয়। রুশ বিমানের ইঞ্জিন তেমন হবে বলে কোনো নিশ্চয়তা নেই।

রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আরো জটিলতা রয়েছে। রুশ বিমান অনেক সস্তা। তবে রক্ষণাবেক্ষণে এতে অনেক বেশি ব্যয় হয়। এফজিএফএ এমনিতেই ব্যয়বহুল বিমান হবে। তাছাড়া তৈরি করতেও সময় লাগবে। প্রথমে ২০১৭ সালে নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। পরে ২০১৯ সালকে টার্গেট করা হয়। এখন মনে হচ্ছে, তখনো হবে না।

বর্তমানের প্রতিবেদনে পঞ্চম প্রজন্মের বিমানের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেয়ার পর এই নোটটি প্রকাশ হলো। বিমান বাহিনী ছাড়াও ডিআরডিও, এডিএ এবং এইচএএলও এই সমীক্ষায় অংশ নেয়।

উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানাচ্ছে, এখন এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ভারত ও রাশিয়া ঘনিষ্ঠ সামরিক কৌশলগত মিত্র। এই কর্মসূচিটি দুই দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কের সাথেও সংশ্লিষ্ট। কর্মকর্তারা প্রায়ই রাশিয়ার সরবরাহ করা পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিনের কথা বলে থাকেন। কিন্তু বিমান বাহিনী এই এফজিএফএ নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট নয়।

এখন প্রকল্পটি এগিয়ে নেয়া হবে কিনা তার সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

চুক্তিটি বাতিল করা হলে কী হবে সেটা নিয়েও উদ্বেগ রয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে রাশিয়া কি এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেম চুক্তি নিয়ে কঠোর অবস্থানে যাবে? ভারত এমন কিছুই চাচ্ছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন