অঘোষিত আফগান সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

  24-10-2017 06:52AM

পিএনএস ডেস্ক: আফগানিস্তানে অঘোষিত এক সফরের সময় প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। মার্কিন শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবে টিলারসন এই প্রথম আফগানিস্তান গেলেন।

সোমবার মার্কিন দূতাবাস থেকে বলা হয়, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কলাকৌশলে এটা সুস্পষ্ট যে আফগানিস্তানে শান্তি অর্জন এবং যে সন্ত্রাসীরা ওই লক্ষ্য অর্জনে হুমকি সৃষ্টি করবে তারা যাতে অভয় আশ্রয় না পায় তা নিশ্চিত করার জন্য আফগানিস্তান সরকার এবং ওই অঞ্চলে অন্যান্য শরিকদের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

মার্কিন দূতাবাস থেকে আরো বলা হয় ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কলাকৌশলের প্রতি প্রেসিডেন্ট ঘানি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সকল আফগানের কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংস্কারের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতির উপর তিনি জোর দেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালাবে না পাকিস্তান

এদিকে আফগানিস্তানে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌছতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় ইসলামাবাদের সহায়তার তালিকা তৈরি করতে শিগগিরই পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। তাই ইসলামাবাদের নীতি নির্ধারকরা এখন মার্কিন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার এজেন্ডা ঠিক করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আফগানিস্তানে তালিবানদের সহিংসতা তীব্র হয়ে ওঠার মধ্যে টিলারসনের এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০০১ সালে তালিবান সরকারকে হটানোর পর থেকে সেখানে বিদ্রোহ দমনের চেষ্টায় এক রক্তক্ষয়ী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন নেতৃত্বাধিন কোয়ালিশন বাহিনী।

পাকিস্তানের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকাকে দেশটির একজন নীতি নির্ধারক জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারককে বলা হবে যে পাকিস্তান তার জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ম্যাকানিজম আরো শক্তিশালী করতে ইচ্ছুক।

তিনি বলেন, ‘টিলারসনকে বলা হবে যে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী তার নিজের মাটিতে সন্ত্রাসদমন তৎপরতা চালিয়ে যাবে। এবং মার্কিন বা আফগান বাহিনীর সঙ্গে কোনো যৌথ অভিযানের প্রশ্নই আসে না।’

চলতি মাসের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রে সফর শেষে দেশে ফিরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলেন, পাকিস্তান তার মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ সন্ত্রাসদমন অভিযান পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে, পরে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, পাকিস্তান কোনো বিদেশী বাহিনীকে তার মাটিতে আসার অনুমতি দেবে এ কথা তিনি কখনোই বলেননি।

সূত্র জানায়, টিলারসনের সঙ্গে আলোচনার অগ্রাধিকার ঠিক করছেন পাকিস্তানের কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে সম্প্রতি পাক-মার্কিন সম্পর্কে টানাপড়েন; প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন আফগান কৌশল; আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের ভূমিকা; এবং আফগানিস্তানে ভারতের ভূমিকার ব্যাপারে পাকিস্তানের আপত্তি, ইত্যাদি বিষয় থাকবে।

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও ট্রাম্পের সহযোগীকে বলা হবে যে পাকিস্তানকে আরো বেশি কিছু করতে চাপ দেয়া যুক্তরাষ্ট্রকে বন্ধ করতে হবে। কারণ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি বিশ্বের আর কোনো দেশ করেনি।

দ্বিতীয় আরেকটি সূত্র পত্রিকাটিকে বলেন, ‘পাকিস্তান সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায় – এ কথা টিলারসনকে জানিয়ে দেয়া হবে।’

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের ওপর পাকিস্তান জোর দেবে। মার্কিন পক্ষকে বলা হবে পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করতে, এবং পাকিস্তান বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

আফগানিস্তানে বেশ কিছু প্রাণঘাতি হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান কর্মকর্তারা আফগান তালিবানদের দলছুট অংশ হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ি করছেন। এরা পাকিস্তানে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। তবে এই অভিযোগ দ্ব্যর্থহীনভাবে অস্বীকার করে আসছে ইসলামাবাদ।

সূত্র জানায়, পাকিস্তানি কর্মকর্তারা টিলারসনকে বলবেন তিনি যেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিকে চাপ দেন যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানের ওপর হামলা চালাচ্ছে সেগুলোকে দমন করা হয়। পাকিস্তানে হামলাকারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেয়ার কথা আফগানিস্তান অস্বীকার করে আসলেও এ মাসের গোড়ার দিকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিয়া প্রদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় টিটিপি-জামাতুল আহরার প্রধান ওমর খালিদ খোরসানি নিহত হয়।

আফগানিস্তান বিষয়ক চার-জাতি সমন্বয় গ্রুপ (কিউসিজি)’র তৎপরতা জোরদার করারও আহ্বান জানাবে পাকিস্তান।

ট্রাম্পের আফগান কৌশলে দেশটিতে পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বৃহত্তর ভূমিকা পালনের কথা বলা হয়েছে। তবে সূত্র জানায়, পাকিস্তান কখনোই এই ধারণার সঙ্গে আপোস করবে না বলে টিলারসনকে জানিয়ে দেয়া হবে। কারণ, পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে নয়া দিল্লি যে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে চায়, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন