ইরাক-সৌদি সম্পর্কের উদ্যোগকে কীভাবে নিচ্ছে ইরান?

  24-10-2017 11:20AM

পিএনএস ডেস্ক: ইরাক ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ইরানের জাতীয় সংসদের স্পিকারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। তবে তিনি সৌদি আরবের ‘ধ্বংসাত্মক ও অগঠনমূলক’ আচরণ বন্ধ করার জন্য রিয়াদের প্রতি আহ্বান জানান।

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-এবাদি সৌদি আরব সফর করার পর ইরানসহ এ অঞ্চলে এ সফরের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে টুইটার বার্তায় এসব কথা বলেন আবদুল্লাহিয়ান। তিনি বলেন, ‘যদি ইরাক ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় এবং রিয়াদের ধ্বংসাত্মক ও অগঠনমূলক আচরণ বন্ধ হয় তাহলে তা হবে একটা ইতিবাচক ঘটনা।’

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী এবাদি রোববার সৌদি আরব সফর করেন এবং তিনি সৌদি-ইরাক কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দেন। ওই বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও যোগ দেন। দুই যুগেরও বেশি সময় পর ইরাক ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত এলাকায় সৌদি আরব যে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে তার অংশ হিসেবে ইরাকের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে।

এ সম্পর্কে আবদুল্লাহিয়ান বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে ইরাকের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে ইরান মোটেই চিন্তিত নয় বরং বাগদাদের সঙ্গে তেহরানের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত ও টেকসই।’

ইরাক কখনোই ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করবে না: মুক্তাদা সাদর
ইরাক ও ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিক এবং স্থিতিশীল সম্পর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরাকের রাজনৈতিক নেতা এবং প্রখ্যাত শিয়া আলেম সাইয়্যেদ মুক্তাদা আস-সাদর। সম্প্রতি একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, ইরাক কখনোই তেহরান এবং তার স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না। আন্তর্জাতিক লবিস্টদের সঙ্গে যোগ দিতেই সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি আরব রাষ্ট্র সফর করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ওঠেছে তাও নাকচ করে দেন মুক্তাদা আস সাদর।

ইরাকের প্রেসিডেন্ট হায়দার আল এবাদির সাথে পূর্ণ বোঝাপড়া এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব সফর সংঘঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি। আঞ্চলিক দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে চলমান উত্তেজনা নিরসন করাই এসব সফরের প্রধান উদ্দ্যেশ্য বলে ইরাকের এ প্রভাবশালী আলেম উল্লেখ করেন।

ইরাকের প্রখ্যাত এ আলেম সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সৌদি যুবরাজের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তিনি সেদেশ সফরে গেছেন। এছাড়া, তিনি বাহরাইনও সফর করেছেন।

ইরান-সৌদি দ্বন্দ্ব নিরসনে ইরাককে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিল রিয়াদ
ইরাকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাসিম আল-আরাজি বলেছেন, ইরান-সৌদি আরব দ্বন্দ্ব নিরসনে বাগদাদকে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে রিয়াদ।

গত আগস্টে ইরাক সফররত ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুররেজা রাহমানি ফাজলির সঙ্গে বাগদাদে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। কাসিম আল-আরাজি বলেন, সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তেহরানের সঙ্গে রিয়াদের আলোচনার ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রখ্যাত সৌদি শিয়া আলেম শেখ নিমর আন-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জের ধরে রিয়াদ ও তেহরানের সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয় এবং এক পর্যায়ে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব।

ইরাকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি এ ব্যাপারে সালমানকে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সদিচ্ছার মনোভাব হিসেবে এ বছর ইরানি হাজীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার পাশাপাশি তাদেরকে মদীনার জান্নাতুল বাকি জিয়ারত করতে দিতে হবে।

এর জবাবে সৌদি যুবরাজ ইরানের এসব দাবি মেনে নিতে রাজি হয়েছেন বলে জানান ইরাকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, মুসলিম উম্মাহর স্বার্থেই দুই বৃহৎ মুসলিম দেশ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি কর্তৃপক্ষকে তার দেশের হাজীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তেহরান কখনো আগ বাড়িয়ে রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি।

পিএনএস/কামাল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন