জেলেও ভিআইপি ধর্ষণ গুরু রাম রহিম!

  14-11-2017 09:19PM

পিএনএস ডেস্ক : দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া ভারতের কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে কারাগারে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর ক্ষেত্রে কারাগারের কোনো নিয়মই মানা হয় না বলে দাবি করেছেন সম্প্রতি রোহতাক কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া এক ব্যক্তি।

মঙ্গলবার জি নিউজ ও ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাম রহিম সিং রোহতাক কারাগারে বন্দী। ওই কারাগারে বন্দী থাকার পর সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন রাহুল নামের এক ব্যক্তি। তিনি কারাগারে রাম রহিমের বন্দিদশা নিয়ে আজ এমন দাবি করেছেন।

রাহুলের দাবি, ‘রাম রহিমকে কোনো বন্দীই কারাগারে দেখেননি। শুধু শুনেছেন যে তিনি এই কারাগারে বন্দী আছেন। রাম রহিম কারাগারে আসার পর থেকে অন্য বন্দীদের ওপরও কঠোর নিয়ম চালু হয়েছে। অন্য বন্দীরা ইচ্ছামতো এখন আর কারও সঙ্গে কথা বলতে বা ঘুরতে পারেন না।’

রাহুল বলেন, ‘শুনেছি, কারাগারে দেখা করতে আসা স্বজনদের সঙ্গে বন্দীরা সর্বোচ্চ ২০ মিনিট কথা বলতে পারেন। কিন্তু রাম রহিমের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয় না। তিনি কারাগারে স্বজনদের সঙ্গে দুই ঘণ্টা ধরে কথা বলার সুযোগ পান। এ ছাড়া অন্য বন্দীদের মতো কারাগারে রাম রহিমকে কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি। আমরা কখনোই তাঁকে কোনো কাজ করতে দেখিনি।’

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হরিয়ানার কারামন্ত্রী কৃষ্ণ লাল পানওয়ার। তিনি বলেন, ‘রাম রহিমকে কোনো ভিআইপি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়নি। তিনি অন্য বন্দীদের মতোই জীবন কাটাচ্ছেন। কারাগারের এক ব্যারাক থেকে আরেক ব্যারাকের দূরত্ব অনেক। তাই অন্য বন্দীদের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। এ কারণেই হয়তো তিনি (রাহুল) এমন অভিযোগ করেছেন।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, কারাগারে রাম রহিম প্রতিদিন আট ঘণ্টা ২০ রুপি পারিশ্রমিকে মালির কাজ করছেন বলে এর আগে খবর প্রকাশ হয়েছিল।

গত ২৫ আগস্ট দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে করা দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় রাম রহিমকে। এরপর নেওয়া হয় রোহতাক শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের সানোরিয়া কারাগারে। এতে রাম রহিমের সমর্থকেরা পঞ্চকুলা এলাকায় তাণ্ডব শুরু করেন। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩১ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত হন। পরে গত ২৮ আগস্ট রাম রহিমকে দুটি মামলায় ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন সিবিআই আদালত।

এরপরে রাম রহিম সিংয়ের ডেরায় প্রায় ৬০০ কঙ্কাল মাটিচাপা দিয়ে রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়। ডেরায় হত্যার পর প্রায় ৬০০ কঙ্কাল মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। জার্মানির একজন বিজ্ঞানীর পরামর্শে মাটিচাপা দেওয়া ওই কঙ্কালগুলোর ওপর গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ডেরায় থাকা কমপক্ষে দুই হাজার নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছিলেন এক সাধ্বী। রাম রহিম কারাগারে যাওয়ার পর থেকে হরিয়ানায় সিরসার ডেরায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সেখানে অভিযানের শুরুর দিকে বিপুল পরিমাণ কনডম ও জন্মনিরোধক ওষুধ জব্দ করা হয়।

ডেরার ভেতরে সাধ্বী হোস্টেলে রাম রহিমের সরাসরি যাতায়াত ছিল। ওই যাতায়াতের জন্যই দুটি গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল। ডেরার ‘গুফা’ থেকে সাধ্বী হোস্টেল পর্যন্ত একটি গোপন সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাঁর ডেরায় পানির নিচে গোপন ‘সেক্স কেভ’ বা ‘যৌন গুহার’ সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ডেরার প্রাসাদ চত্বরে যে সুইমিং পুল রয়েছে, তার নিচেই ওই ‘যৌন গুহা’ গড়ে তুলেছিলেন ডেরাপ্রধান রাম রহিম। গোপন গুহায় নারীদের নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ করতেন তিনি। রাম রহিমের ডেরায় শত শত আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ ও ভিডিও চিত্র সাংবাদিকের বিশাল একটি দল অভিযান চালিয়ে এই গুহার সন্ধান পায়।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন